বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্ক ও করণীয় সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্ক ও করণীয় সম্পর্কে জানার জন্য বেশ চিন্তিত। আমাদের দেশে সচরাচর যে সাপগুলা দেখা যায় তাদের মধ্যে বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপ অন্যতম। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্ক ও করণীয় সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্ক ও করণীয় সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
রাসেল ভাইপার কি ?
রাসেল ভাইপার হচ্ছে একটি অত্যন্ত বিষধর সাপ। যা VIPERIAE পরিবারের সদস্য। যার আদি নিবাস ভারত ও বাংলাদেশ। এটিকে প্যাট্রিক রাসেলের নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে। এটি ভারতের চারটি বড় সাপের একটি।
রাসেল ভাইপার সাপ আসলে কতটা ভয়ংকর ?
সাপ কথাটা শুনলেই শরীর যেন শিউরে ওঠে। বাংলাদেশের বেশ কিছু জেলায় রাসেল ভাইপার সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বেসরকারি সংস্থা ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন বলছে, রাসেল ভাইপার দেশের সবচেয়ে বিষধর বা প্রাণঘাতী সাপ নয়। সাপ গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রজাতির সাপে কামড় দিলে তার চিকিৎসা আছে এবং সময়মতো চিকিৎসা দিতে পারলে মৃত্যু ঝুঁকি কমে আসে।
তবে অস্ট্রেলিয়ার দ্য ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেডের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই সাপের বিষ এতটাই ভয়ঙ্কর যে, ১৫ মিনিটের মাথায় মানুষের শরীর অবশ হয়ে পড়ে। তবে এরা নির্জন স্থানে বসবাস করায় মানুষের সাথে খুব একটা দেখা হয় না। ফলে এই সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও একেবারে কম। তারপরও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এই সাপ যেন আমাদের আক্রমণ করতে না পারে।
বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্ক ও করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত জানুন।
রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্কঃ
আমাদের দেশে যাকে আমরা চন্দ্রবোড়া সাপ নামে চিনি কালের পরিক্রমায় সেটি আজ রাসেল ভাইপার নামে ব্যাপক আতংক ছড়াচ্ছে। গবেষকরা অবশ্য বলছেন, রাসেল ভাইপার সাপ নিয়ে যতটা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে আসলে সাপটি ততটা বিষধর নয়। তারপরও এটির প্রতিষেধক রয়েছে ফলে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। তবে বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্ক ও করণীয় সম্পর্কে আমাদের সবারই জানা উচিৎ।
রাসেল ভাইপার সাপ বাংলাদেশের বিলুপ্তির পথে থাকা একটি সরীসৃপ প্রজাতি। এটি একসময় বরেন্দ্র অঞ্চলে দেখা গেলেও বর্তমানে এটি প্রায় বেশ কয়েকটি জেলায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সাপটি বেশ ভালো সাঁতার কাটতে পারে। ফলে বন্যার পানিতে ভেসে এটি প্রায় বাংলাদেশের ২৭টিরও বেশি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশে এই সাপের ব্যাপারে যথেষ্ট আতঙ্ক থাকলেও বিশেষজ্ঞদের বিষধর সাপের তালিকায় এর নাম নেই। বাংলাদেশে প্রাপ্ত এর চেয়েও বেশি বিষধর সাপ হচ্ছে গোখরা সাপ। তাই এই রাসেল ভাইপার সাপ নিয়ে বেশি আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরী। তাই বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্ক ও করণীয় সম্পর্কে আমাদের সবারই জেনে রাখা উচিৎ।
রাসেল ভাইপার সাপে কামড়ালে করণীয়ঃ
রাসেলভাইপার সাপে কামড় দিলে যে কাজগুলো করতে হবে সেগুলো হলঃ
১। দংশিত স্থান নড়াচড়া করা যাবে না। পায়ে দংশন করলে হাঁটা যাবে না। হাতে দংশন করলে হাত নাড়াচাড়া করা যাবে না। কেননা হাত-পা নড়াচড়া করলে মাংসপেশির সংকোচনের ফলে বিষ রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
২। আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে।
৩। সাপে কাটলে ওঝার কাছে না গিয়ে রোগীকে নিকটবর্তী কোন সরকারি হাসপাতালে নিতে হবে।
৪। দংশিত স্থানে কোন প্রকার কাটা বা সূচ ফোটানো যাবে না।
৫। রাসেল ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক অ্যান্টিভেনম সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
তাই রাসেল ভাইপারসহ যে কোন সাপে দংশন করলে হাসপাতালে গিয়ে সরকারি সেবা গ্রহণ করুন।
বিষাক্ত ও রাসেল ভাইপার সাপ নিয়ে সর্তকতা।
বর্তমানে বাংলাদেশে রাসেল ভাইপার সাপের ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই রাসেল ভাইপার সাপের কামড় থেকে রেহাই পেতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা বেশ জরুরী। রাসেল ভাইপার সাপের কামড় থেকে রেহাই পেতে যে বিষয়গুলোর উপর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সেগুলো হলোঃ
* লম্বা ঘাস ও ঝোপ ঝাড় দিয়ে হাঁটার সময় বেশ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
* কোন গর্তের মধ্যে হাত-পা প্রবেশ করানো যাবে না।
* কৃষি জমিতে কাজ করার সময় বুট ও লম্বা প্যান্ট পরতে হবে।
* বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।
* খড়ির ঘরে প্রবেশের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
* রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চ লাইট ব্যবহার করতে হবে।
উল্লেখিত সতর্কতা গুলি অবলম্বন করলে রাসেল ভাইপার সাপ থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যাবে।
রাসেল ভাইপারর সাপে কামড় দিলে কি করবেন ?
বাংলাদেশে সচারচর যে বিষাক্ত সাপগুলো দেখতে পাওয়া যায় রাসেল ভাইপার তাদের মধ্যে একটি। যার দংশনে এ পর্যন্ত আমাদের দেশে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। রাসেল ভাইপার সাপ হাতে কামড় দিলে হাত নড়াচড়া করানো যাবে না এবং পায়ে কামড় দিলে হাঁটা চলাফেরা করা যাবে না। এতে করে মাংসপেশির সংকোচনের ফলে বিষক্রিয়া দ্রুত সারা শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে।
তাই রাসেল ভাইপার সাপে কামড় দিলে যত দ্রুত সম্ভব সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কখনোই কোন ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে কালক্ষেপণ করা যাবে না। এতে করে রোগীর প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকতে পারে।
বাংলাদেশের কয়টি জেলায় রাসেল ভাইপার সাপের আতঙ্ক বেশি ?
বর্তমানে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় রাসেল ভাইপার সাপের আতঙ্ক বেশি। এক সময়ে বিলুপ্ত ঘোষণা করা সাপটি একমাত্র বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্র অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যেত। অতীতে বন্যার সময় এটি ভেসে বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল।
বর্তমানে এটি পদ্মা অববাহিকা ধরে বাংলাদেশের প্রায় ২৭টি জেলায় অবস্থান করছে। তবে দিন দিন এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর এভাবে যদি এই সংখ্যা বেড়েই চলে একসময় সারা বাংলাদেশে এই রাসেল ভাইপার সাপটি বিচরণ করবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ের চিকিৎসা।
বাংলাদেশের সচরাচর যে সব সাপগুলো দেখা যায় তার মধ্যে বিষাক্ততার দিক থেকে রাসেল ভাইপার প্রথম সারিতে রয়েছে। এ সাপে কামড় দিলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে এবং সময় মত চিকিৎসা দিতে পারলে রোগীকে বাছানো সম্ভব হবে। এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক মোহাম্মদ হাসান তারিক বলেন, রাসেল ভাইয়ের সাপের দংশনের শিকার ব্যক্তির কিডনি দ্রুত অকেজো হয়ে যায়, শরীরে জ্বালাপোড়া করে, দংশিত স্থানে পচন ধরে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে।
এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা না দিতে পারলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই কোন ব্যক্তিকে রাসেল ভাইপার সাপে কামড় দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে এবং যথা সময়ে চিকিৎসা দিতে পারলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হবে। তাই আসুন আমরা বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্ক ও করণীয় সম্পর্কে জেনে নেই।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url