প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য বেশ চিন্তিত। কিসমিস অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাবার। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
কিসমিস কি ?
কিসমিস হচ্ছে শুকনো আঙ্গুর যাকে ইংরেজিতে রেইসিন বলে। কিসমিস বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উৎপাদিত হয়। এটি সরাসরি খাওয়া হয় ও রান্নায় বহুল ব্যবহৃত উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি বহুকাল থেকে ক্যালরির চমৎকার একটি উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
কিসমিসের পুষ্টিগুণ।
কিসমিস অত্যন্ত পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি খাবার। কিসমিসে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস, পলিফেনলস, ফাইবার, সোডিয়াম, পাইরিডক্সিন, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি উপাদান প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। কিসমিস শরীরে শক্তি যোগায় এবং রক্ত উৎপাদনে দারুন সাহায্য করে। কিসমিসে থাকা ফাইবার পরিপাকক্রিয়ায় দারুন উন্নতি ঘটায়। কিসমিস মিষ্টি খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে রয়েছে এনার্জি ৩০৪ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট ৭৪.৬ গ্রাম, ফাইবার ১.১ গ্রাম, ফ্যাট ০.৩ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮৭ মিলিগ্রাম, আয়রন ৭.৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৭৮ মিলিগ্রাম ও সোডিয়াম,২০.৪ মিলিগ্রাম।
কিসমিস কিভাবে তৈরি হয় ?
মিষ্টি জাতীয় খাবারের স্বাদ বাড়াতে কিসমিস অপরিহার্য। ঘরেই বানিয়ে ফেলুন স্বাস্থ্যকর উপায় আঙ্গুর থেকে কিসমিস। প্রথমে ফুটন্ত পানিতে এক কেজি পরিমাণ আঙ্গুর দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ পর আবারো পানি ফুটতে থাকবে এবং আঙ্গুরগুলো ভেসে উঠবে ও আঙ্গুরগুলোর মাঝে ফাটল দেখা দিবে।
এ পর্যায়ে চুলা বন্ধ করে আঙ্গুরগুলো উঠিয়ে চালুনির মাধ্যমে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এবার ছিদ্রওয়ালা চালুনের ওপরে পাতলা কাপড় বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর আঙ্গুরগুলো দিয়ে দুই থেকে তিন দিন শুকিয়ে নিতে হবে। আর এভাবেই তৈরি হয়ে যাবে আঙ্গুর থেকে মিষ্টি স্বাদের কিসমিস।
প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতা সম্পর্কে জানুন।
প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। শুধু কি তাই ? কিসমিস ভেজানো পানীয় শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। কিসমিস আমাদের শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায় এবং রক্ত উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। নিম্নে প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতার কথা উল্লেখ করা হলোঃ
১। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা পরিপাকক্রিয়ায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এতে খাবার সহজে হজম হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সহজে দূর হয়।
২। ওজন বাড়ায়ঃ ওজন সবাই কিন্তু কমাতে চায় না। এমন অনেক মানুষ আছে যারা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ওজন বাড়াতে চায়। আপনি যদি ওজন বাড়াতে চান তাহলে প্রতিদিন নিয়মিত কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৩। ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ কিসমিসে ক্যাটেচীন নামক এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা মানব দেহে ভেসে বেড়ানো ফ্রিরেডিকলগুলিকে লড়াই করে নিঃশেষ করে দেয়। শরীরে এ ফ্রিরেডিকেলগুলো ক্যান্সার সেলের স্বতঃস্ফুর্ত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই কিসমিসে থাকা ক্যাটেচীন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৪। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ কিসমিসে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শরীরে থাকা উচ্চমাত্রার সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণ। কিসমিস শরীরের সোডিয়াম এর মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
৫। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কিসমিসে থাকা ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনাল এর মত পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৬। হাড় ক্ষয় রোধ করেঃ কিসমিসে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হাড় ও দাঁতের জন্য ভীষণ উপকারী। এছাড়াও বোরন নামক এক প্রকার মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে থাকে যা হাড় ও দাঁতের গঠনে ভূমিকা রাখে ও হাড় ক্ষয় রোধ করে।
৭। পরিমিত ঘুম হয়ঃ কিসমিসে থাকা আয়রন ভালো ঘুমের সাহায্য করে এবং শরীর, মন ও মেজাজ শান্ত রাখতে ভূমিকা রাখে।
৮। রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ কিসমিসের প্রচুর পরিমাণ আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে। যে কারণে এটি রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
৯। ত্বক ভালো রাখেঃ কিসমিস ত্বকের কোষকে যে কোন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এতে করে ত্বকে বলি রাখা পড়তে দেয় না,ত্বকের কালচে দাগ দূর করে এবং বার্ধক্যের লক্ষণ অনেকটা বিলম্ব করতে সাহায্য করে।
১০। হজমে সহায়তাকারীঃ প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতার কথা জেনে নিয়মিত কিছু পরিমাণ কিসমিস খেলে পেট ভালো রাখতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর ফাইবার থাকার কারণে পেটের মধ্যে গিয়ে ফুলে ওঠে এবং খাদ্য হজমে সহায়তা করে।
সর্বোপরি আমাদেরকে প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতার কথা বিস্তারিত জেনে খেতে হবে। তাহলে অনেক রোগ বালাই থেকে দূরে থাকা যাবে।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত ?
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত আমরা অনেকেই জানিনা। তাই আমরা প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খেতে পারি তা অবশ্যই জানা দরকার। কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। যা মানব দেহে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়। দৈহিক ও শারীরিক গঠন আকৃতির ওপর নির্ভর করে এটি খাওয়ার পরিমাণ কম বেশি হতে পারে। পুষ্টিবিদদের মতে, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া উচিত।
কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা।
শুকনো কিসমিস খাওয়ার পরিবর্তে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। কিসমিস ভিজে খেলে যে উপকারগুলো হয় সেগুলো হলোঃ
* হজম শক্তি বাড়ায়।
* রক্তস্বল্পতা দূর করে।
* হৃদ স্পন্দন স্বাভাবিক রাখে।
* হাড়ে পুষ্টি যোগায়।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
* ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
* দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।
* ত্বকে পুষ্টি যোগায়।
* কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
* বার্ধক্য বিলম্বিত করে।
কিসমিস খেলে কি শুক্রাণু বাড়ে ?
হ্যাঁ। কিসমিস খেলে শুক্রানু বাড়ে। প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মধু ও কিছু পরিমাণ কিসমিস খেলে শুক্রানুর সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও দুধের সাথে কিসমিস মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার শুক্রানুর সংখ্যাতো বাড়বেই সাথে সাথে শারীরিক দুর্বলতা দূর হবে এবং যৌন ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
কিসমিস খেলে কি ক্ষতি হয় ?
কিসমিস স্বাভাবিক পরিমাণে খেলে শরীরের অনেক উপকার হয়। তবে কিসমিস অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে যে ক্ষতিগুলো হয় সেগুলো হলোঃ হজমের সমস্যা,পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, ওজন বৃদ্ধি, রক্তের শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি ইত্যাদি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url