মহাস্থানগড় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা মহাস্থানগড় কখন, কিভাবে দেখতে যাবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। ঐতিহাসিক নিদর্শনে ভরপুর বগুড়ার মহাস্থানগড় চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব কখন, কিভাবে আপনারা মহাস্থানগড় দেখতে যাবেন ।
মহাস্থানগড় এর অপর নাম কি ?
প্রাচীন পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে মহাস্থানগড় অন্যতম একটি পুরাকীর্তি । এক সময়ের বহু সাম্রাজ্যের স্মৃতি বিজড়িত এই মহাস্থানগড় । যার অপর নাম পুন্ড্রবর্ধন বা পুন্ড্রনগর ।
মহাস্থানগড়ের ইতিহাস ।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরা প্রাচীন নগরী পুন্ড্রবর্ধন শাসন করতেন হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মের রাজারা । সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেন যে সময় গৌড়ের রাজা ছিলেন সেই সময় মহাস্থানগড় বেশ অরক্ষিত ছিল । মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল যার সব সময় বিরোধ লেগে থাকতো তার ভাই নীলের সাথে । সেসময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র থেকে অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ আসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে । কারণ সেই ব্রাহ্মণ পশুর বা কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিলেন ।
পরবর্তীতে এই ব্রাহ্মণ দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং রাজা হন । এই ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম । ইতিহাসে সেই ব্রাহ্মণই পরশুরাম নামে সুপরিচিত ছিল । ইতিহাসে কথিত আছে , পরশুরামের সাথে আধ্যাত্মিক শক্তিধারী সুফি দরবেশ হযরত সুলতান মাহমুদ বলখী(র) এর যুদ্ধ হয় । সেই যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত এবং নিহত হন ।
মহাস্থানগড় কি জন্য বিখ্যাত ?
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পুরাকীর্তির নিদর্শন । অত্যন্ত সুন্দর প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত এই নগরের ভিতরে রয়েছে বিভিন্ন শাসনামলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন । কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত মহাস্থানগড় মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন শাসকদের প্রাদেশিক রাজধানী এবং হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এখানে একটি সুসভ্য জনপদ গড়ে উঠেছিল । আর সে কারণেই মহাস্থানগড় পৃথিবী বিখ্যাত ।
মহাস্থানগড় এর দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি ?
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানান রকম ইতিহাস আর ঐতিহ্য । কালের বিবর্তনে সেসব ইতিহাস আজ অনেকটাই বিলপ্ত । এই বিলুপ্তপ্রায় ইতিহাস , ঐতিহ্য ও নিদর্শন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব । মহাস্থানগড় বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে ।
এখানে অনেক দর্শনীয় নিদর্শন রয়েছে । যেমনঃ মাজার শরীফ, খোদার পাথর ভিটা, বৈরাগীর ভিটা, স্কন্ধের ধাপ, পরশুরামের রাজপ্রাসাদ, মানকালীর ঢিবি , শিলা দেবীর ঘাট, জিওত কুণ্ড কুপ , বেহুলা লক্ষীন্দরের বাসর ঘর , জাদুঘর, মঙ্গলকোট, ভাসু বিহার ,গোবিন্দ ভিটা, এবং ভীমের জঙ্গল ।
মহাস্থানগড় কোন নদীর তীরে অবস্থিত ?
মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষ উদঘাটন করার ক্ষেত্রে অনেকের অবদান রয়েছে । ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটন ১৮০৮ সালে প্রথম মহাস্থানগড়ের যথার্থ অবস্থান চিহ্নিত করেন । তারপর ১৮৭৯ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহাম প্রথম ঐতিহাসিক এই প্রাচীন নগরীকেপুন্ড্রবর্ধন বা পুন্ড্র নগরের রাজধানী হিসেবে চিহ্নিত করেন ।
মহাস্থানগড় যাওয়ার উপায় ?
রাজধানী শহর ঢাকার যে কোনো বাস স্ট্যান্ড থেকে বগুড়া যাওয়ার বাস পাবেন । পরিবহন ভেদে ভাড়া ৪৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা । বগুড়া শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশাযোগে খুব সহজে মহাস্থানগড় যেতে পারবেন। আপনি চাইলে ট্রেনে চড়েও মহাস্থানগড় যেতে পারবেন ।
ঢাকা থেকে রংপুর এবং লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি বগুড়া হয়ে যাতায়াত করে । তাই এই দুটি ট্রেনে চড়ে ও মহাস্থানগড় যেতে পারবেন । রংপুর এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে সপ্তাহে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা ১০ মিনিটে যাত্রা শুরু করে । লালমনি এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে সপ্তাহে শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ে । টিকিটের মূল্য ৩৯৫ টাকা থেকে ৯০৯ টাকা ।
মহাস্থানগড় কত বছরের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে ?
মহাস্থানগড় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দ থেকে ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ১৯০০ বছরের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে ।
মহাস্থানগড়ের জাদুঘরে কি কি আছে ?
মহাস্থানগড়ের আশেপাশের অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত বহু মহামূল্যবান বস্তু জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। যেমনঃ পুরানো মাটির মূর্তি, বাসনপত্র, স্বর্ণবস্তু, ব্রোঞ্জের সামগ্রী, বেলে পাথরের মূর্তি, কালো পাথরের অম্বিকা, মাটি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন শিলালিপি, মাটি ও অন্যান্য ধাতুর তৈরি বোতাম, কানের ফুল, নাকফুল, মূল্যবান পাথর, মার্বেল ,পোড়ামাটির পুতুল, খেলনা ,মার্বেল পাথরের গণেশ ,ব্রহ্ম, বিষ্ণু, অষ্টধাতুর নির্মিত বালা, আরবি শিলালিপি ইত্যাদি । এছাড়াও আরো পাওয়া গেছে নানা ধরনের প্রাচীন অলংকার সহ বহু মূল্যবান বস্তু ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url