উয়ারী-বটেশ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বর কখন, কিভাবে দেখতে যাবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। এটি ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে ভরপুর। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব কখন, কিভাবে আপনারা নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বর দেখতে যাবেন।

উয়ারী-বটেশ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় আর্টিকেল পাঠক,আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বর সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।

উয়ারী-বটেশ্বর কোথায় অবস্থিত ? 

এটি রাজধানী শহর ঢাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর -পূর্বে নরসিংদী জেলার বেলাবো এবং শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত । উয়ারী ও বটেশ্বর দুটি গ্রাম মিলে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন । মনে করা হয়, মাটির নিচে অবস্থিত এটি একটি দুর্গ নগরী ।

উয়ারী-বটেশ্বর কিভাবে আবিষ্কৃত হয় ?

১৯৩৩ সালের ডিসেম্বর মাসে উয়ারী গ্রামে মাটি খনন কালে শ্রমিকরা একটি মাটির কলসিতে সঞ্চিত মুদ্রা ভান্ডার আবিষ্কার করেন । স্থানীয় একজন স্কুল শিক্ষক হানিফ পাঠান সেখান থেকে ২০-৩০ টি মুদ্রা সংগ্রহ করেন । এগুলো ছিল প্রাচীন বঙ্গ ভারতের মুদ্রা । আর এভাবেই  উয়ারী - বটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয় ।

উয়ারী-বটেশ্বর সভ্যতা কত বছরের প্রাচীন ?

উয়ারী- বটেশ্বর সভ্যতা ২৫০০ বছরের প্রাচীন । এটি বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। মনে করা হয় মাটির নিচে অবস্থিত এটি একটি প্রাচীন দুর্গ নগরী।

উয়ারী-বটেশ্বরে কি কি পাওয়া যায় ?

উয়ারী- বটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা খনন কাজের পর বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান জিনিস পাওয়া যায়। যেমনঃ প্রাচীন দুর্গ নগরী, বন্দর, রাস্তা, পার্শ্ব রাস্তা, পোড়ামাটির ফলক, মৃৎপাত্র, স্বল্প মূল্যের পাথর, কাচের পুঁতি এবং মুদ্রা ভান্ডার সহ উপমহাদেশের প্রাচীন মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়।

উয়ারী-বটেশ্বর কোন নদীর তীরে অবস্থিত ?

উয়ারী- বটেশ্বর বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর মধ্যে একটি। প্লাইস্টোসিন যুগে গঠিত মধুপুর গড়ের ঠিক পূর্ব সীমান্তে উয়ারী ও বটেশ্বর গ্রাম দুটিতে খনন কাজের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ নগর। উয়ারী- বটেশ্বর পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত।

উয়ারী-বটেশ্বরের ইতিহাস।

এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রত্নস্থল। এটি নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। ১৯৩০ সালে স্কুল শিক্ষক হানিফ পাঠান এটি জনসম্মুখে তুলে ধরেন। পরবর্তীতে তার পুত্র হাবিবুল্লাহ পাঠান উক্ত স্থানের গবেষণা কাজ শুরু করেন। অবশেষে দীর্ঘদিন পর ১৯৯৬ সালে জরিপ কাজ পরিচালনা করা হয় এবং ২০০০ সাল থেকে খনন কাজ শুরু হয়।

 প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা খনন কাজের ফলে এখানে পাওয়া গেছে বিভিন্ন ধরনের স্বল্প মূল্যবান পাথর ,কাঁচের পুথি এবং রৌপ্য মুদ্রা। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন স্থল খনন কাজের ফলে উক্ত স্থানে আবিষ্কৃত হয়েছে ৬০০ মিটার * ৬০০ মিটার আয়তনের চারটি মাটির দুর্গ এবং দুর্গ প্রাচীরের ৫ থেকে ৭ ফুট উচু ধ্বংস স্তূপ । এছাড়াও দুর্গের চারিদিকে পরীক্ষা খনন করা রয়েছে। গ্রাম দুটিতে প্রাচীন জন বসতি ছিল। এখানকার অধিবাসীরা কৃষিজীবী ছিল এবং প্রযুক্তির ব্যবহার জানত।

উয়ারী-বটেশ্বর কে আবিষ্কার করেন ?

উয়ারী-বটেশ্বর আবিষ্কারের পেছনে যাদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে তারা হলেন স্থানীয় স্কুল শিক্ষক হানিফ পাঠান এবং তার ছেলে মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান।

উয়ারী-বটেশ্বর কিসের নাম ?

এটি বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার বেলাবো ও শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত দুইটি প্রত্নতাত্ত্বিক গ্রামের নাম। প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস সমৃদ্ধ গ্রাম দুটি প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো।

উয়ারী-বটেশ্বরের প্রাচীন নাম কি ?

এখানে প্রাপ্ত কাঁচের পুঁতি ও স্যান্ডউইচ কাঁচের গুটিকা থেকে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের বহিঃবানিজ্যের উপর ভিত্তি করে প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনেকেই উয়ারী-বটেশ্বরকে টলেমি উল্লেখিত সৌনাগড়া বলে উল্লেখ করেছেন।

উয়ারী-বটেশ্বর যাওয়ার উপায়।

 বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার গুলিস্তান এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি নরসিংদী যাওয়া যায়। এছাড়াও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়েও নরসিংদী যাওয়া যায়। আবার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বিআরটিসি বাসে জনপ্রতি ১০০ টাকা বাস ভাড়ায় ভৈরবের মরজাল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখান থেকে লোকাল বাসে ৩০ টাকা ভাড়ায় অথবা ১২০ টাকা থেকে১৫০ টাকা ভাড়ায় সিএনজি করে সরাসরি উয়ারী- বটেশ্বরে যাওয়া যায়।

বাংলাদেশের কোথায় সর্বশেষ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে ?

বাংলাদেশের সর্বশেষ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছ উয়ারী-বটেশ্বরে। এটি বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গুলোর মধ্যে অন্যতম ।

উয়ারী-বটেশ্বর বিখ্যাত কেন ?

বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার বেলাবো ও শিবপুর উপজেলার বিখ্যাত গ্রাম দুটি ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রার প্রাপ্তি স্থান হিসেবে সমধিক পরিচিত। এছাড়াও প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, উয়ারী-বটেশ্বর একটি সমৃদ্ধ নগর ও বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। উক্ত স্থানে উচ্চতাপ প্রয়োগ করে লোহা গলানোর প্রচলন ও লোহার ব্যবহার ছিল। সে কারণে উয়ারী-বটেশ্বর বিখ্যাত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪