মানব দেহে চুলকানি সমস্যায় করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা মানব দেহে চুলকানি সমস্যায় করণীয় সম্পর্কে জানার জন্য বেশি চিন্তিত। মানব দেহে চুলকানি সমস্যায় করণীয় আমাদের সবারই জানা উচিত। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে মানব দেহে চুলকানি সমস্যায় করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি মানব দেহে চুলকানি সমস্যায় করণীয় সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
চুলকানি কি ?
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় চুলকানিকে প্রুরিটাস বলা হয়ে থাকে। এটি এমন একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি। যার ফলে জায়গাটিতে সব সময় আচঁড়াতে ইচ্ছা করে। চুলকানির অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে শুষ্ক ত্বক। চুলকানির সময়ে জায়গাটিতে ঘর্ষণের ফলে জ্বালা হয়।
চুলকানির কারণে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমনঃ জায়গাটি লাল হয়ে যাওয়া, ফোসকাপড়া, ফুসকুড়ি হওয়া, রক্ত পড়া ইত্যাদি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে আর্দ্রতা কমতে থাকে। যার ফলে বয়স্ক মানুষের চুলকানি বেশি হয়।
চুলকানি কি কি রোগের লক্ষণ ?
শুষ্ক ত্বকে চুলকানি প্রবণতা বেশি দেখা যায়। যার কারণে, যেসব মানুষের চুলকানি প্রবণতা রয়েছে তাদের শীতের দিনগুলোতে চুলকানি বেড়ে যায়। এগুলো ছাড়াও চুলকানি অনেকগুলো সাধারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে। চুলকানি সাধারণত যে যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ করে সেগুলো হলোঃ কিডনি রোগ, লিভার রোগ, ডারমাটোগ্রাফিয়া, মেরুদন্ড রোগ ইত্যাদি।
মানব দেহে চুলকানি সমস্যায় করণীয় বিষয়ে জানুন।
মানব দেহে চুলকানি সমস্যায় করণীয় কি ? সেটা আমাদের সবারই জানা দরকার । এলার্জি ছাড়াও চুলকানি যে কোনো সময় হতে পারে। এটি অত্যন্ত বিরক্তিকর একটি রোগ। সংবেদনশীল ত্বকে চুলকানোর কারণে এটি অনেক সময় লাল হয়ে যেতে পারে। এ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য অনেকেই মলম ব্যবহার করে যা মোটেই ঠিক নয়। তাই নিম্নে ঘরোয়া উপায়ে মানব দেহে চুলকানি সমস্যায় করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
১। নারিকেল তেলঃ নারিকেল তেল মানব দেহের ত্বকে ব্যবহারের সবচেয়ে নিরাপদ জিনিস। যে কোন প্রকার চুলকানি বা পোকামাকড়ের কামড়ের কারণে চুলকানি হলে আক্রান্ত স্থানে নারিকেল তেল ব্যবহার করুন উপকৃত হবেন। এছাড়াও কুসুম গরম পানিতে সামান্য পরিমাণ নারিকেল তেল মিশিয়ে গোসল করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দারুন উপকার মিলবে।
২। পেট্রোলিয়াম জেলিঃ সংবেদনশীল ত্বকের জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি দারুণ উপকারী। শরীরের যে কোন অংশে চুলকানি হলে আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনি দারুন উপকার পাবেন।
৩। ব্রেকিং সোডাঃ চুলকানি প্রতিরোধে ব্রেকিং সোডা ভীষণ উপকারী। পানি এবং ব্রেকিং সোডা দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। তারপর চুলকানির জায়গায় কয়েক দিন ব্যবহার করলে চুলকানি ভালো হয়ে যাবে।
৪। অ্যালোভেরাঃ সৌন্দর্য চর্চায় অ্যালোভেরার কোন বিকল্প নেই। চুলকানি প্রতিরোধে অ্যালোভেরা দারুণ উপকারী। একটি তাজা অ্যালোভেরার পাতা থেকে রস বের করে চুলকানির স্থানে লাগান দেখবেন চুলকানি খুব দ্রুত চলে যাবে।
৫। লেবুঃ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবুতে আছে ব্লিচিং উপাদান যা ত্বকের চুলকানি দূরীকরণে সাহায্য করে। শরীরের যে কোন স্থানে চুলকানি অনুভূত হলে লেবুর রস লাগিয়ে দিন। দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যে চুলকানি গায়েব হয়ে যাবে।
৬। ভিটামিন ডিঃ সাধারণত শীতের দিনে চুলকানির পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতকালে ভিটামিন ডি এর ঘাটতির কারণে চুলকানি বেড়ে যেতে পারে। তাই শীতকালে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই চুলকানি থেকে মুক্তি মিলবে।
৭। ওমেগা ৩ঃ ওমেগা ৩ হচ্ছে একটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যা চুলকানি দূরীকরণে সাহায্য করে। তাই ডাক্তার তারিন চুলকানি সমস্যায় জর্জরিত রোগীদের ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। যেমনঃ অ্যাভোকাডো, বাদাম, সালমান মাছ ইত্যাদি।
তাই ,আমাদের সকলকে মানব দেহে চুলকানি সমস্যায় করণীয় সম্পর্কে জেনে বুঝে সমাধান করতে হবে। তাহলে এই অস্বস্তিকর রোগটি থেকে মুক্তি মিলবে।
চুলকানি কি ছোঁয়াছে রোগ ?
চিকিৎসকের ভাষায় স্ক্যাবিস রোগটি চুলকানি নামে ব্যাপক পরিচিত। এটি একটি ছোঁয়াছে রোগ। এক ধরনের বিশেষ পরজীবীর আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এর প্রধান লক্ষণ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি ও গুটিগুটি দাগ হওয়া। সাধারণত স্পর্শের মাধ্যমে এই রোগ একজনের শরীর থেকে অন্য জনের শরীরে ছড়ায়। বিশেষ করে স্ক্যাবিসে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত কাপড়, গামছা, বিছানার চাদর, বালিশ ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগ বেশি ছড়ায়।
চুলকানি দূর করার ক্রিম।
মানব দেহে চুলকানি সমস্যায় করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তবেই চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। বর্তমানে বাজারে চুলকানি দূর করার বিভিন্ন ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়। যেমনঃ ফানজিডাল এইচসি ২% ও ১% ক্রিম, ক্যালামাইন লোশন, হিস্টামিন ক্রিম, মিল্ক অফ ম্যাগনেসিয়া ক্রিম, ল্যামিসল ক্রিম,লোট্টিমিন ক্রিম, মিকাটিন ক্রিম, কোটিসোন ক্রিম, কট্টিমাজল ক্রিম, কেটোকোনাজল ক্রিম ইত্যাদি।
পুরুষাঙ্গে চুলকানি দূর করার উপায়।
চুলকানি মানব দেহের বিরক্তি কর এবং অস্বস্তিকার একটি রোগ। আর এই চুলকানি যদি পুরুষাঙ্গে হয়ে থাকে তবে বুঝতেই পারছেন এটি কতটা লজ্জাষ্কর একটি ব্যাপার। পুরুষাঙ্গে চুলকানি সাধারণত শীতকালে বেশি হয়। তাই সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার মাধ্যমে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পুরুষাঙ্গে চুলকানি প্রতিরোধে নিম্নলিখিত ঔষধ গুলি ব্যবহার করলে ব্যাপক উপকার পাবেন।
*ফানজিডাল এইচ সি ক্রিম।
* এফান ক্রিম।
* বেটামেসন অয়েন্টমেন্ট।
*ফাঙ্গিডার্ম ক্রিম।
পুরুষাঙ্গে চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়।
পুরুষাঙ্গে চুলকানি ছেলেদের একটি সাধারণ সমস্যা। নিম্নলিখিত ঘরোয়া উপায়গুলি ব্যবহার করলে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
* নিয়মিত গোসল করুন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুুন।
* আক্রান্ত স্থানের সাবান ব্যবহার বন্ধ রাখুন।
* কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন।
* ভেজা কাপড় পরা থেকে বিরত থাকুন।
* প্রস্রাব করার পর পুরুষাঙ্গ ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।
* অন্যের কাপড় ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
* সহবাসের পর পুরুষাঙ্গ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
* একাধিক নারীর সাথে যৌন মিলন বন্ধ করুন।
* পুরুষাঙ্গে চুলকানি হলে স্ত্রীর সাথে সহবাস বন্ধ রাখুন।
উপরের আলোচনায় মানব দেহে চুলকানি সমস্যায় করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। তাই পরিবারের অন্যদের সচেতন করুন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে বলুন। তবেই এখান থেকে পরিত্রান পাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url