উজানের পানি সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ ব্যাখ্যা কর

প্রিয় পাঠক, আপনারা উজানের পানি সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ সম্পর্কে জানার জন্য বেশ চিন্তিত। উজানের পানি সিলেটবাসীর জন্য বিরাট একটা অভিশাপ স্বরুপ। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব কেন উজানের পানি সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ।

উজানের পানি সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ ব্যাখ্যা কর

প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য আমি উজানের পানি সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।

বন্যা কি ?

বন্যা মূলত জলের তাৎক্ষণিক প্রবাহ। যা সাধারণত নদ,নদী, খাল-বিল, হাওর, বাওড়সহ শুষ্ক নিম্ন ভূমিকে নিমোজ্জিত করে। বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি কৃষি, স্বাস্থ্য ও পুরোকৌশলের ক্ষেত্রে ব্যাপক উদ্বেগের বিষয়। বন্যা হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে। উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং প্রবল বৃষ্টির কারণে এরূপ ঘটনা ঘটে থাকে। তবে এটি যেভাবেই ঘটুক না কেন বন্যা জান ও মালের ব্যাপক ক্ষতি করে।

উজানের পানি কি ?

উজানের পানি বলতে পানির উৎস স্থলের কথা বলা হয়েছে। উজান থেকে পানি সাধারণত ভাটির দিকে নেমে আসে অর্থাৎ পানি যখন তার উৎস স্থল থেকে নিচের দিকে নেমে আসে তখন সেই উৎস স্থল থেকে নেমে আসা বা ধেয়ে আসা পানিকে উজানের পানি বলে। 

বাংলাদেশের কোন এলাকাগুলো বন্যা প্রবণ।

উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্রতিবছর কম বেশি বাংলাদেশে এ ধরনের বন্যা প্রবণতা দেখা যায়। বাংলাদেশের বন্যার প্রকৃতি ও ধারণ অনুযায়ী বাংলাদেশকে কয়েকটি বন্যা প্রবণ অঞ্চলে ভাগ করা যায়। যেমনঃ

* উত্তর-পূর্বাঞ্চল।

* উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল।

* মধ্য অঞ্চল।

* দক্ষিণাঞ্চল।

উজানের পানি সিলেট অঞ্চলে বন্যার প্রধান কারণ বিশ্লেষণ কর। 

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বানঞ্চলের সিলেট অঞ্চলে প্রতিবছরই একাধিকবার বন্যা দেখা দেয়। এতে করে ওই অঞ্চলের মানুষ তথা জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই বন্যার নানাবিধ কারণ রয়েছে। নিম্নে উজানের পানি সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ ব্যাখ্যা করা হলোঃ

* ভৌগোলিক অবস্থানঃ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে থাকে। আর যতগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে বন্যা তাদের মধ্যে অন্যতম। প্রতিবছর আমাদের দেশের মানুষকে বন্যার সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়। ২০২৪ সালে সিলেটে যে বন্যা হয়েছে দীর্ঘ ১২০ বছরের ইতিহাসে এমন বন্যা সিলেটবাসী কখনো দেখেনি।

 পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল এলাকা ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে এবার সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভৌগোলিক কারণে ভারতীয় এলাকা বাংলাদেশের চেয়ে উচু হওয়ায় প্রচুর পরিমাণ পানি বিভিন্ন নদ-নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ এলাককে প্লাবিত করে। এ কারণে বলা যায় ভৌগোলিক কারণে উজানের পানি সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ।

* নদীর নাব্যতা কমে যাওয়াঃ সিলেট অঞ্চলের নদীগুলোর উৎপত্তিস্থল ভারতের উঁচু পাহাড় এলাকায়। যার কারণে ভারতীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয় এবং সেই পানির সাথে প্রচুর পরিমাণ পলিমাটি বাংলাদেশের নদ-নদীতে চলে আসে। ফলে বাংলাদেশের নদ-নদীর নাব্যতা কমে যায়। যে কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানি বহন ক্ষমতা দিনে দিনে কমে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি করছে। তাই যথার্থই বলা যায় উজানের পানি সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ।

* জলবায়ু পরিবর্তনঃ জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় মৌসুমী বৃষ্টিপাত বায়ুমন্ডলীয় প্যাটার্ণ অনুসরণ করে। তবে ইদানিং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ু ব্যাপক আদ্রতা বহন করে। যার ফলে ভারতের চেরাপুঞ্জিসহ বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। সে জন্য বলা হয়ে থাকে উজানের পানি সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ।

* মানবসৃষ্ট কারণঃ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর কর্তৃক পানি প্রবাহের পথ সংকীর্ণ করে ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ করে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এছাড়াও মানুষ খাল, বিল, হাওর, বাওড় ছোট ছোট নদ-নদী ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণ করায় নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ার ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে উজানের পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বলা যায় যে, উজান থেকে নেমে আসা পানি সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ।

* নদী প্রণালীর পরিবর্তনঃ নদী প্রণালীর কৃত্রিম পরিবর্তন নদীর পানি প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে নদী গর্ভে পলি সঞ্চিত হয়ে নদী ভরাট হতে থাকে। বর্ষাকালের অতিরিক্ত পানি নদীর দুকুল ছাপিয়ে মাঠঘাটে প্রবেশ করে এবং আকর্ষিক বন্যা দেখা দেয়। ফলে একথা সুস্পষ্ট করে বলা যায় যে, উজানের পানি সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ।

* ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টিপাতঃ সিলেট অঞ্চলের উত্তরে ভারতের চেরাপুঞ্জির অবস্থান। যেখানে বর্ষা মৌসুমে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। পরবর্তীতে সেই পানি বেশ কয়েকটি নদী দিয়ে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে প্রবেশ করে বন্যা দেখা দেয়। তাই যথার্থই বলা যায় উজানের পানি সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ।

* অপরিকল্পিত উন্নয়নঃ পরিকল্পিত উন্নয়ন যে কোন বিষয়ের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর অবকাঠামোগত উন্নয়ন তাদের মধ্যে অন্যতম। আমাদের দেশে অপরিকল্পিত অবকাঠামোগত উন্নয়ন নদী প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে পানি প্রবাহ সঠিক না থাকায় নদীতে পলি জমে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমের পানি দ্বারা প্রতিবছর ব্যাপক বন্যা দেখা দিচ্ছে। তাই বলা যায় উজানের পানি সিলেট অঞ্চলের বন্যার প্রধান কারণ।

বাংলাদেশে ঘন ঘন বন্যা কেন হয় ?

বন্যা বাংলাদেশের নিত্য সঙ্গী। প্রতি বছরই বাংলাদেশে বন্যা দেখা দেয়। বাংলাদেশে ঘন ঘন বন্যা হওয়ার বেশ কতকগুলো কারণ রয়েছে। যেমনঃ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নিম্নচাপ, লঘুচাপ, উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বর্ষা মৌসুমে প্রবল বৃষ্টিপাত।

বাংলাদেশ বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব বা ফলাফলগুলো কি কি ?

বন্যার প্রভাব বা ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যার ফলে মানুষ, জীবজন্তু, সম্পত্তি ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। নিম্নে বন্যার প্রভাব বা ফলাফলগুলো আলোচনা করা হলোঃ

* জীবনহানিঃ বন্যা মানুষের জীবনহানির অন্যতম প্রধান কারণ।

* অভ্যন্তরীণ অভিগমনঃ বন্যায় ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার ফলে অভ্যন্তরীণ অভিগমন বেশি ঘটে।

* রোগ ব্যাধিঃ ডায়রিয়া, কলেরা ও টাইফয়েডসহ নানা রোগ ব্যাধি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

* ফসলের ক্ষতিঃ বন্যার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়।

* মাটি ক্ষয়ঃ বন্যা ব্যাপক আকারে মাটি ক্ষয় করে। এতে মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়।

অর্থনৈতিক ক্ষতিঃ বন্যার ফলে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪