পবিত্র ঈদুল আযহা ও কোরবানির শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা পবিত্র ঈদুল আযহা ও কোরবানি শিক্ষা সম্পর্কে জানার জন্য বেশ চিন্তিত। পবিত্র ঈদুল আযহা ও কোরবানির শিক্ষা মুসলিম উম্মার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় বিষয়। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে ঈদুল আযহা ও কোরবানির শিক্ষা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।



প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি পবিত্র ঈদুল আযহা ও কোরবানির শিক্ষা সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথে থাকুন।

ঈদুল আযহা কি ? 

ঈদুল আযহা মূলত আরবি শব্দ। যার অর্থ হল ত্যাগের উৎসব। এই দিনটিতে মুসলমানেরা ফজরের নামাজের পর দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করে এবং তার পরপরই আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী গরু. ছাগল. ভেড়া. মহিষ, উট, দুম্বা ইত্যাদি মহান আল্লাহর নামে কোরবানি করে। প্রতি বছর জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আযহা উৎসব পালন করা হয়।

কোরবানি কি ?

কোরবানি হচ্ছে নির্দিষ্ট দিনে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি, নৈকট্য ও পুরস্কার লাভের আশায় কোন প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করে দেয়া। কোরবানি শুধু আত্মত্যাগই নয়, বরং মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে বান্দার ভালবাসার একটি অনন্য নিদর্শন।

পবিত্র ঈদুল আযহা ও কোরবানির শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা কর।

পবিত্র ঈদুল আযহা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর পশু কুরবানী করে থাকে। কোরবানির মাধ্যমে সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হযরত ইসমাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি অতুলনীয় আনুগত্য ও মহান ত্যাগের পূণ্যময় স্মৃতি বহন করে। তাই একজন মুমিন মুসলমানের জীবনে পবিত্র ঈদুল আযহা ও কোরবানির শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পবিত্র কুরআনের সূরা কাওসারের ২ নং আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, অতএব আপনি আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন। পশু কোরবানি একটি প্রতীকি ব্যাপার মাত্র। পশু কোরবানির মাধ্যমে মুমিন মুসলমান মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম উম্মাকে যে ত্যাগের শিক্ষা দেন তাতে মুমিন মুসলমানরা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টির জন্য সবকিছুই করতে পারে। মূলত পবিত্র ঈদুল আযহা ও কোরবানির শিক্ষা এটাই।

একদিন মহান আল্লাহতালা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে স্বপ্নযোগে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটিকে কোরবানি করার নির্দেশ দেন। অর্থাৎ "তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি করো" হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এরূপ আদেশ পেয়ে দশটি উট কোরবানি করলেন। পুনরায় তিনি আবারও একই স্বপ্ন দেখলেন। অতঃপর তিনি ১০০ টি উট কোরবানি করলেন। এরপর তিনি একই স্বপ্ন দেখলেন এবং ভাবলেন এই মুহূর্তে আমার কাছে প্রিয় বস্তু ইসমাইল ছাড়া আর কিছুই নেই।

 তখন তিনি কোরবানির উদ্দেশ্যে ইসমাইলকে নিয়ে আরাফাতের দিকে যাত্রা শুরু করলেন। পথিমধ্যে শয়তান আল্লাহর আদেশ পালন থেকে বিরত থাকার জন্য ইব্রাহিম( আঃ) ও তার পুত্রকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) শয়তানের কথায় কর্ণপাত না করে শয়তানকে পাথর ছুড়ে মেরেছিলেন। সে কারণে আজও সেখানে হজ্জের সময় শয়তানকে প্রতীকি পাথর নিক্ষেপ করা হয়।

 অতঃপর হযরত ইব্রাহিম (আঃ) পর্বতের ওপর পুত্রকে কোরবানি দেওয়ার জন্য গলদেশে ছুরি চালালেন। কিন্তু কিছুতেই কোরবানি হচ্ছিল না। এভাবে তিনি কয়েকবার চেষ্টা করার পর এক সময় দেখলেন যে তার পুত্রের পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে গেছে এবং পুত্রের কোন ক্ষতি হয়নি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কঠিন পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হলেন।

 অতঃপর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে তাকে খলিল বা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন। সেই থেকে উম্মতে মোহাম্মদীর সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব হিসেবে গণ্য করা হয়। পবিত্র ঈদুল আযহা ও কোরবানির শিক্ষা মানুষকে যে ত্যাগের শিক্ষা দেয় একজন মুমিন মুসলমান তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মহান আল্লাহতালার সন্তুষ্টির জন্য সবকিছু উৎসর্গ করার জন্য সদা প্রস্তুত।

ঈদুল আযহার তাৎপর্য।

পবিত্র ঈদুল আযহা ও কোরবানির শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা উচিত। ঈদুল আযহা হযরত ইব্রাহিম (আঃ), বিবি হাজেরা এবং হযরত ইসমাইল (আঃ) এর মহান ত্যাগের স্মৃতি বিজড়িত উৎসব। হযরত ইব্রাহিম (আঃ)কে মুসলিম জাতির পিতা বলা হয়। এই পরিবারটি বিশ্ব মুসলিমের জন্য মহত্তম আদর্শ।

 তাই ঈদুল আযহার দিন বিশ্ববাসী ইব্রাহিম (আঃ) এর সুন্নত পালনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রাণপণ চেষ্টা করে। মহান আল্লাহর জন্য মানুষ প্রিয় বস্তু ত্যাগ করতে চাই কিনা এটাই ছিল পরীক্ষা ? কোরবানি আমাদেরকে সেই শিক্ষায় স্মরণ করিয়ে দেয়। মহান আল্লাহর কাছে কোরবানির দিনে রক্ত প্রবাহিত করার চাইতে অধিকতার প্রিয় আর কিছুই নয়।

 কোরবানির রক্ত মাটিতে স্পর্শ করার আগেই মহান আল্লাহর কাছে তা কবুল হয়ে যায়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে কোরবানির পশুর রক্ত, মাংস কোন কিছুই পৌঁছায় না। পৌঁছে কেবল তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি। পরিশেষে বলতে চাই মহান আল্লাহর কাছে জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে পরম করুনাময় ও দয়ালু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই হচ্ছে কোরবানির তাৎপর্য।

পবিত্র ঈদুল আযহা প্রতিবছর কত তারিখে পালন করা হয় ?

প্রতিবছর ঈদুল আযহা জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে পালন করা হয়। এটি বিশ্ব মুসলিম উম্মার জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সন্তুষ্ট করার জন্য ত্যাগের সর্বোত্তম মাধ্যম হলো এই কোরবানি। আর এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের ওপর খুশি হয়ে যান।

ঈদুল আযহার গুরুত্ব।

ঈদুল আযহার দিন মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট ও রাজি খুশি করার জন্য যে পশু জবাই করা হয় তাকে কোরবানি বলে। পবিত্র ঈদুল আযহা মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। পবিত্র ঈদুল আযহা ও কোরবানির শিক্ষা আমাদের সকল মুসলমানদেরকে গ্রহণ করে তা বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে হবে। তবেই হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের মহান ত্যাগ সার্থক হবে।তাই আমাদের জীবনে পবিত্র ঈদুল আযহার গুরুত্ব অপরিসীম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪