শসা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা কি শসা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানেন ? শসা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে শসা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।

শসা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি শসা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।

শসা কি ?

শসা কিউকারবিটাসের অন্তর্গত একটি অত্যন্ত সুপরিচিত সবজি । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এটি এক প্রকার ফল। এটি সারা বছর ধরেই পাওয়া যায়। যা সাধারণত কাঁচা খাওয়া হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম CUCUMIS SATIVUS । খুব সম্ভবত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর আদি নিবাস।

শসা চাষ পদ্ধতি।

শসা বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি সবজি। এটি প্রধানত সালাদ ও সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। শসা চাষের জন্য যে বিষয়গুলো আমাদের জানা দরকার সেগুলো হলোঃ

* মাটিঃ উর্বর দো-আঁশ মাটি শসা উৎপাদনের জন্য উপযোগী।

* জলবায়ুঃ ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় শসা ভালো জন্মায়।

* জাতঃ বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের শসার চাষ হচ্ছে। তাদের মধ্যে বিদেশি জাতগুলো অধিকাংশই হাইব্রিড। বিএডিসি বারোমাসি ও পটিয়া জায়ান্ট নামে দুটি স্থানীয় জাত উৎপাদন করে থাকে। এছাড়াও বাংলাদেশের কয়েকটি সবজি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান শসার বীজ বজারজাত করছে। সেগুলো হলোঃ গ্রীণ কিং, শিলা, আলাভী, হিমেল, গ্রীন ফিল্ড, পান্ডা, ভেনাস,বাঁশখালী, মধুমতি, নওগাঁ গ্রীণ ও লাকি-৭ ।

* সময়ঃ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শসার বীজ বপন করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

* চারা উৎপাদনঃ নার্সারি বা বীজতলায় চারা তৈরি করে জমিতে লাগানো সবচেয়ে উত্তম । এক্ষেত্রে কম্পোষ্ট ও মাটি একত্র করে ৮*৬ ইঞ্চি সাইজের পলিথিনের ভরতে হবে এবং প্রত্যেক ব্যাগে দুটি করে বীজ দিতে হবে।

* সার ব্যবস্থাপনাঃ  সঠিক সার ব্যবস্থাপনার উপর ফসলের ফলন নির্ভর করে। তাই সার ব্যবস্থাপনার দিকে সুনজর দিতে হবে। নিচে প্রতি শতক জমিতে যে পরিমাণ সার দিতে হবে তা উল্লেখ করা হলোঃ ২০ কেজি গোবর সার, ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ৫০ গ্রাম দস্তা ও ৫০ গ্রাম বোরন জমি তৈরির সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। সমপরিমাণ সার চারা রোপনের ৫-৬ দিন আগে মাদায় প্রয়োগ করতে হবে। এবার প্রয়োজন মত এবং পরিমাণ মতো সার চারা রোপনের ১০ থেকে ১৫ দিন পর প্রথমবার, ফুল আসলে দ্বিতীয়বার এবং ফল ধরা শুরু হলে প্রয়োজন মত প্রয়োগ করতে হবে।

সারের মাত্রা কম বেশি হতে পারে। সার দেওয়ার পর অবশ্যই পানি দিতে হবে। তারপর মাটিতে প্রয়োজন মতো চারা রোপন করতে হবে। এভাবে সার ব্যবস্থাপনা ও চারা রোপন করলে অবশ্যই ফলন বেশি হবে।

* চারা রোপনঃ চারার বয়স ১৫ থেকে ২০ দিন হলে পলিথিন ব্যাগ খুলে মাদায় চারা রোপন করতে হবে। এক সপ্তাহ পর দুর্বল চারাটি তুলে ফেলতে হবে এবং প্রতি মাদায় একটি করে চারা রাখতে হবে।

*রোপনের দূরত্বঃ ১.৫*১.৫ মিটার।

* মাচা বা বাউনি দেওয়াঃ তারের নেট ,সুতলি বা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বাউনি দিতে হবে।

*পানি নিষ্কাশনঃ দুই বেডের মাঝ দিয়ে নালা রাখতে হবে। যাতে অতিরিক্ত জল নিষ্কাশন করা যায়।

* ফসল তোলাঃ ৫০ থেকে ৬০ দিনের মাথায় ফসল তোলা যায়।

*ফলনঃ হেক্টর প্রতি ১০ থেকে ১৫ টন শসা পাওয়া যায়।

শসার পুষ্টিগুণ। 

শসা এমন একটি সবজি যাতে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য উপাদান রয়েছে। শসায় থাকা খাদ্য উপাদান গুলি হলোঃ ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি ৬, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, রাইবোফ্লাভিন, আয়রন এবং জিংক প্রভৃতি। শরীরের পানি শূন্যতায় শসার জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও শসা শরীরে থাকা খারাপ কলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে দারুণ কাজ করে।

প্রতি ১০০গ্রাম শসাতে রয়েছে ১৩ কিলো ক্যালরি। কার্বোহাইড্রেট ৩.৬৩ গ্রাম, প্রোটিন ০.৬৫ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ০.৫ গ্রাম, নিয়াসিন 0.0৯৮ মিলিগ্রাম, থায়ামিন 0.0২৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ২.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ০.০০৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ১৬.৪ মাইক্রোগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৪৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম,লৌহ ০. ২৮ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৩ মিলিগ্রাম, এবং জিংক ০.২০মিলিগ্রাম। এছাড়াও শসায় আরো অনেক খাদ্য উপাদান রয়েছে।

শসা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখুন অজানা তথ্য।

বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার গ্রহণের ফলে আমাদের শরীরে জমা হয় টক্সিন। এর ফলে আমাদেরকে নানান ধরনের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যার ফলে বেড়ে যায় শরীরের ওজন। আর শসা খেলে এই টক্সিনের মাত্রা দিনে দিনে কমতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শসায় প্রচুর পরিমাণ পানি, ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে রয়েছে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেই শসা খাওয়ার উপকারিতাগুলো কি কি ?

১। শরীরকে ডিটক্সিফাই করেঃ শসায় যে পানি থাকে তা আমাদের দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ গুলো বের করে দেয়। নিয়মিত শসা খেলে কিডনিতে সৃষ্ট পাথর গলে যায়।

২। ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করেঃ প্রতিদিন আমাদের শরীরে যে ভিটামিনের দরকার তার বেশিরভাগই শসার মধ্যে বিদ্যমান। ভিটামিন এ, বি এবং সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শারীরিক শক্তি বাড়ায়। তাই বেশি করে শসা খান ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হবে। সাথে সাথে শসা খাওয়ার উপকারিতা ও সহজে বুঝতে পারবেন।

৩। ওজন কমায়ঃ শসায় প্রচুর পানি ও কম পরিমাণ ক্যালরিযুক্ত উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। যা ওজন কমাতে আদর্শ হিসাবে কাজ করে।

৪। হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ শসা চিবিয়ে খেলে হজম শক্তি বাড়ে। নিয়মিত শসা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

৫। চোখের জ্যোতি বাড়ায়ঃ রূপচর্চায় শসা গোল করে কেটে দুই চোখের উপর দিয়ে রাখা হয়। এতে করে চোখের পাতার উপর জমে থাকা ময়লা শসা পরিষ্কার করে। এছাড়াও চোখের জ্যোতি বাড়াতে শসা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। 

৬। ত্বকে খনিজের সরবরাহকারীঃ রূপচর্চার অন্যতম আদর্শ নিয়ামক শসা। কারণ এতে থাকা পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সিলিকন ত্বকের পরিচর্যায় দারুন কাজ করে। এজন্য অনেককেই গোসলের আগে শসা ব্যবহার করতে দেখা যায়।

৭। চুল ও নখ সতেজ করেঃ শসার মধ্যে যে খনিজ সিলিকা বিদ্যমান থাকে তা চুল ও নখকে সতেজ ও শক্তিশালী করে।

৮। ইউরিক  অ্যাসিড কমায়ঃ শসাতে প্রচুর সিলিকা রয়েছে। যা শরীরে জমে থাকা ইউরিক অ্যাসিড  কমাতে সাহায্য করে।

৯। মাথাব্যথা কমায়ঃ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েক টুকরো শসা খেলে ঘুম ভালো হয়। এতে করে মাথা ধরা ও মাথা ব্যথা কমে যায়।

১০। ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ শসায় ল্যারিসিরেসিনোল, পিনোরেসিনোল ও সিকোইসোলারিসিরেসিনল নামক আয়ুর্বেদিক উপাদান রয়েছে। যা জরায়ু, স্তন ও মূত্রগ্রন্থিসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। তাই সহসাই বলা যায় শসা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।

প্রতিদিন কতটুকু শসা খাওয়া উচিত ?

যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় শসা রাখেন। তবে প্রতিদিন কতটুকু শসা খেতে হবে তার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি প্রতিদিন অন্তত একটি করে শসা খেতে পারেন। তবে কোন ক্রমেই শসা বেশি খাওয়া উচিত নয়, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

শসা চাষের উপযুক্ত সময় কখন ?

বর্তমানে প্রায় সারা বছরই শসা চাষ করা হয়ে থাকে। তবে শসা চাষের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।

শসা খেলে কি কিডনির পাথর অপসারণ হয় ?

শসার জলীয় অংশ মানব দেহের বর্জ্য ও দূষিত পদার্থ বের করতে দারুন কাজ করে। তাই নিয়মিত শসা খেলে কিডনিতে সৃষ্ট পাথর গলে যেতে সহায়তা করে। তাই বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসাবে শসা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪