ইসবগুলের ভূসি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা ইসবগুলের ভুসি কখন, কিভাবে খাবেন সেটা জানার জন্য বেশ উদ্বিগ্ন। ইসবগুলের ভুসি অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য উপাদান। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে ইসবগুলের ভুসি সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি ইসবগুলের ভুসি সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
ইসবগুল কি ?
ইসবগুল হচ্ছে গুল্ম জাতীয় গাছ। এর ফুল ছোট ,পাপড়ি অত্যন্ত সুক্ষ হয়। বীজের গায়ে খোসা থাকে। ইসবগুলের গাছের উচ্চতা সাধারণত দুই থেকে আড়াই ফুট। ফল দুই কোষ বিশিষ্ট এবং ফলের ভিতর তিন মিলিমিটার লম্বা বীজ থাকে। বীজ দেখতে অনেকটা নৌকার মতো এবং এর খোসা পিচ্ছিল হয়। এটি এক ধরনের রবিশস্য। ইসবগুল শব্দটা ফারসি শব্দ ইসপা-গোল থেকে এসেছে। যার অর্থ ঘোড়ার কান।
ইসবগুলের ভূসির পুষ্টিগুণ।
ইসবগুলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান। আর সেই সব উপাদানগুলো শরীরের নানান ধরনের উপকার করে থাকে। সাধারণত এক টেবিল চা চামচ পরিমাণ ইসবগুলে থাকে ৫৩% ক্যালরি, ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৫ গ্রাম শর্করা, ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ০.৯ মিলিগ্রাম আয়রন।
খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয় ?
আমাদের মধ্যে অনেকেই সকালে খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেয়ে থাকেন। অনেকেই আবার কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হিসেবে ইসবগুলের উপর ভরসা রাখেন। কিন্তু আপনি জানেন কি ? সকালে খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেলে কি হয় ?
পুষ্টিবিদরা বলেছেন, সকালে খালি পেটে এটি খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। যা বেশকিছু রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তবে রমজান মাসে এটি সকালে খাওয়ার সুযোগ না থাকায় ইফতারের সময় খেলে ব্যাপক উপকার পাওয়া যায়।
ইসবগুল খেলে কি বীর্য গাঢ় হয় ?
হাঁ। ইসবগুল খেলে বীর্য গাঢ় হয়। এতে থাকা ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বীর্য উৎপাদন করতে সাহায্য করে। ফাইবার শুক্রাণু উৎপাদনকারী কোষের পুষ্টি সরবরাহ করে এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ইসবগুল খেলে বীর্যের ঘনত্ব বাড়ে, বীর্য গাঢ় হয় এবং যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
ইসবগুল খাওয়ার সঠিক নিয়ম।
কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা কষা এই জাতীয় সমস্যার সমাধানে ইসবগুল মহাঔষধের মত কাজ করে। ইসবগুল খাওয়ার সঠিক কোন নিয়ম নেই। তবে নিম্নলিখিত উপায়ে আপনি ইসবগুল খেতে পারেন।
* পাঁচ থেকে দশ গ্রাম ইসবগুল এক কাপ ঠান্ডা বা হালকা গরম পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাত্রে ঘুমানোর আগে অথবা সকালে খালি পেটে খেতে পারেন।
* দুই চা চামচ ভুসি ১ গ্লাস কুসুম গরম দুধে মিশিয়ে সাথে সাথেই খেতে পারেন।
* দুই চা চামচ ভুসি ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর খেতে পারেন।
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা জেনে রাখুন কাজে লাগবে।
ইসবগুলের ভুসি আমাদের সবার কাছে অত্যন্ত পরিচিত। এর উপকারিতা ও ব্যাপক। মানব দেহ সুস্থ রাখার জন্য এটি দারুন কাজ করে। এটি খেলে ছোট বড় অনেক ধরনের রোগ থেকে মুক্তি মেলে। নিচে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতার কথা বলা হলোঃ
১। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কোষ্ঠকাঠিন্য শরীরের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করে। এটির একমাত্র সমাধান ইসবগুলের ভুসি। এটি পাকস্থলীতে গিয়ে প্রথমে ফুলে ওঠে এবং ভেতরের সব বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধের সাথে দুই চা চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশ্রিত করে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
২। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর হয়ঃ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী হলো ইসবগুলের ভুসি। আখের গুড়ের সাথে ইসবগুলের ভুসি মিশ্রিত করে খেলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দূর হয়।
৩। গ্যাসের সমস্যার সমাধান করেঃ এমন কোন মানুষ নেই, যার গ্যাসের সমস্যা নেই। আর এ সমস্যার মূল কারণ খাদ্যাভ্যাস। এই সমস্যার সমাধান সবচেয়ে ভালো ঘরোয়া উপায় হলো ইসবগুলের ভুসি নিয়মিত খাওয়া।
৪। ডায়রিয়া প্রতিরোধে কাজ করেঃ এটি দইয়ের সাথে মিশ্রিত করে খেলে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক পাকস্থলীর ক্ষত সারাতে কাজ করে।
৫। হার্ট ভালো রাখেঃ হার্টকে ভালো রাখার জন্য নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে থাকা ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও এটি রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে ধমনিতে ব্লক সৃষ্টি করতে বাধা প্রদান করে।
৬। ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ ইসবগুলে প্রচুর ফাইবার থাকায় হজম প্রক্রিয়া ধীর গতিতে হয়। তাই ক্ষুধা কম লাগে এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে যায়। এতে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমতে থাকে।
ইসবগুল ও তোকমা একসাথে খেলে কি হয় ?
তোকমা দানায় রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও মিনারেল। তোকমায় ৪২ % কার্বোহাইড্রেট ,২০% প্রোটিন, ২৫% ফ্যাট ও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। আর ইসবগুলের কথা উপরের বর্ণনায় বিশদভাবে বলা আছে। তবে ইসবগুল ও তোকমা দানা একসাথে খেলে যে উপকারগুলো পাওয়া যায় সেগুলো হলোঃ
* গরমকালে দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
* কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
* গ্যাসের সমস্যার সমাধান করে।
* হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
*যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে।
ইসবগুলের অপকারিতাঃ
ইসবগুলের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাই ভালোভাবে না জেনে বা বুঝে ইসবগুল খাওয়া উচিত নয়। তাই না জেনে বা বুঝে ইসবগুল খেলে যে সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে সেগুলো হলোঃ
* পেটে ব্যথা হতে পারে।
* পাতলা পায়খানা বেড়ে যেতে পারে।
* বমি বমি ভাব হতে পারে।
* খাবারে অরুচি ভাব আসতে পারে।
* এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
* মুখ ও গলা ফুলে যেতে পারে।
* শ্বাসকার্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url