কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন অজানা তথ্য
প্রিয় পাঠক, আপনারা কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য বেশ কিছুদিন থেকেই খোঁজাখুঁজি করছেন। কাঁচা হলুদ মানব দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ভেষজ উপাদান। চিন্তার কোন কারণ নেই ,আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
হলুদ কি ?
হলুদ হচ্ছে হলুদ গাছের শিকড় থেকে প্রাপ্ত এক প্রকার বহুল ব্যবহৃত মসলা। ভারতীয় উপমহাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রান্নায় এটি ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। এটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস দক্ষিণ এশিয়া।
কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম।
কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতার কোন শেষ নেই। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতিদিন সকাল ও রাতে ২৫০ মিলিগ্রাম কাঁচা হলুদ খাওয়া যেতে পারে। তবে সকালে খালি পেটে হলুদ খাওয়া সবচেয়ে উত্তম। হলুদ খাওয়ার পর আধা ঘন্টা কোন কিছু খাওয়া উচিত নয়। হলুদ বেশি খাওয়া উচিত নয়। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
কাঁচা হলুদের পুষ্টিগুণ।
কাঁচা হলুদ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ উপাদান। কাঁচা হলুদের রয়েছে ভিটামিন সি, আয়রন, ফোলেট, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম এর মত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি মানব ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা হলুদে খুব সামান্য পরিমাণ ক্যালরি থাকে। এছাড়াও কার্বোহাইড্রেট ১৩ গ্রাম, প্রোটিন ২ গ্রাম, ফাইবার ৩ গ্রাম, ভিটামিন সি ৫৩ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৫৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪২২ মিলিগ্রাম এবং ক্যালসিয়াম ১৮৩ মিলিগ্রাম।
কাঁচা হলুদ খেলে কি গায়ের রং ফর্সা হয় ?
হ্যাঁ। কাঁচা হলুদ খেলে গায়ের রং ফর্সা হয়। কাঁচা হলুদ খেলে কারকিউমিনের প্রভাবে গায়ের রং ফর্সা হয় এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়। গায়ের রং ফর্সা করতে এটি ম্যাজিকের মত কাজ করে। এছাড়াও হলুদে থাকা কারকিউমিন নামক উপাদান মানুষকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
এ বিষয়ে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবাসসুম আজিজ বলেন, হলুদের মধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিবায়োটিক গুণ বিদ্যমান থাকায় গায়ের রং ফর্সা করে, ত্বক উজ্জ্বল করে, ব্রণ প্রতিরোধ করে এবং বার্ধক্যের ছাপ প্রতিরোধ করে। তাই সহসাই বলা যায় কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা ব্যাপক।
মুখে কাঁচা হলুদ দিলে কি হয় ?
সৌন্দর্য চর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার বহু প্রাচীনকাল আগ থেকেই। ত্বকের যত্নে হলুদের জুড়ি মেলা ভার। কাঁচা হলুদ মুখে দিলে যে উপকারগুলো হয় সেগুলো হলোঃ
* এটি মুখের দাগ দূর করে।
* এটি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
* ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
* ত্বকের প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর করে।
* ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
* মুখে ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
কাঁচা হলুদ খেলে কি অ্যালার্জি কমে ?
শুধু রূপচর্চা নয়, কাঁচা হলুদের প্রদাহনাশক গুণ অ্যালার্জি কমাতে দারুন কাজ করে। কাঁচা হলুদ বাটা ও নারিকেল তেল একসাথে মিশ্রিত করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে খুব দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
প্রতিদিন সকালে কাঁচা হলুদ খেলে কি উপকার হয় ?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে, অতিরিক্ত মেদ কমাতে এবং হার্ট সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সকালে কাঁচা হলুদ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। নিয়মিত এক টুকরা কাঁচা হলুদের সাথে গোলমরিচ খেলে ত্বক, হার্ট, স্নায়ু ও লিভারসহ শরীরের সমস্ত অর্গান ভালো থাকবে। সোজা কথা কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না।
কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে মজার মজার টিপস।
রান্না থেকে রূপচর্চা সবখানেই কাঁচা হলুদের জয় জয়াকার। তবে এছাড়াও হলুদের আরও একটি পরিচয় আছে তা হচ্ছে এটি এক প্রকার ভেষজ ঔষধ। নিম্নে কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতার কথা বলা হলোঃ
১। অতিরিক্ত ওজন কমায়ঃ প্রতিদিন নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। এতে করে শরীরের মেটাবলিজমের হার বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত ওজন কমতে থাকে। এছাড়াও হলুদে থাকা কারকিউমিন নামক উপাদান শরীরে থাকা অতিরিক্ত চর্বি গলানোর মাধ্যমে ওজন কমাতে দারুন ভূমিকা পালন করে।
২। লিভারের কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়ঃ লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে হলুদের কোন বিকল্প নেই। হলুদে থাকা কারকিউমিন লিভারের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে দারুন ভাবে সাহায্য করে। এছাড়াও হলুদে থাকা কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান লিভারে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ অপসারণ ভূমিকা পালন করে।
৩। ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়ঃ নিয়মিত হলুদ মেশানো দুধ খেলে কোলাজেনের উৎপাদন বেড়ে যায় এবংত্বক অতিমাত্রায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেই সাথে ব্রণের সকল দাগ ও ত্বকের কালো দাগ আস্তে আস্তে সেরে যায়।
৪। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়েঃ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা নিয়মিত হলুদ খাওয়ার পরামর্শ দেন। কেননা এতে থাকা উপকারী উপাদানগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৫। পিরিয়ডের কষ্ট কমায়ঃ কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতার কথা কম-বেশি সবারই জানা। তবে পিরিয়ডের সময় কাঁচা হলুদ খেলে পিরিয়ডের কষ্ট দূর হয়। কারণ এতে থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান পিরিয়ড সংক্রান্ত কষ্ট দূর করতে দারুন কাজ করে।
৬। রক্ত বিশুদ্ধ করেঃ শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে হলুদের জুড়ি নেই। হলুদের থাকা কারকিউমিন রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান বের করে দেয়। এতে করে রক্ত বিশুদ্ধ হয় এবং ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রক্তরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
কাঁচা হলুদ খাওয়ার ক্ষতি বা অপকারিতা।
প্রতিটি জিনিসেরই উপকারিতা ও অপকারিতা থাকে। কাঁচা হলুদ ও তার ব্যতিক্রম নয়। কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতার চেয়ে অপকারিতা অনেক কম। নিচে কাঁচা হলুদের কিছু ক্ষতি বা অপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ
* কাঁচা হলুদ বেশি খেলে শরীরে খনিজ লবনের পরিমাণ কমে যায়।
* কাঁচা হলুদ বেশি খেলে শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
* কিডনিতে পাথর হতে পারে।
* ক্রনিক ডায়রিয়া হতে পারে।
নিমপাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা।
নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ একসঙ্গে খেলে শরীরের শক্তি উৎপাদন বেড়ে যায়। নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ খালি পেটে খেলে শক্তি বাড়াতে দারুন কাজ করে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে ক্যান্সারের মতো বিপদজনক রোগ এড়িয়ে চলতে হলুদ ও নিমের মিশ্রণ খাওয়া উচিত।
এছাড়াও নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ একসঙ্গে বেটে ত্বকে লাগালে ত্বকের রং ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও কোমল হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url