পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে জানার জন্য বেশ আগ্রহী। পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।

পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন

প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।

পহেলা বৈশাখ কি ? 

পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ। বাংলা বছরের প্রথম দিন। দিনটি সমগ্র বাঙালির প্রাণের উৎসব ও বর্ষবরণের দিন। এই দিনটিকে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ মহা উৎসবের দিন হিসেবে পালন করে। এটি বাঙালি জাতির একটি সর্বজনীন লোকউৎসব।

পহেলা বৈশাখ কিভাবে এলো ?

অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মনে করেন যে, ১৫৫৬ সালে মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন শুরু হয়েছিল। তবে শুরুর দিকে এটিকে বর্ষবরণ হিসাবে পালন করা হতো না। বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় অনেক পরে।

পহেলা বৈশাখ কিভাবে উদযাপন করা হয় ?

বাঙালি জাতির প্রাণের এই উৎসবটি মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, পান্তা ইলিশ খাওয়া, শুভ হালখাতা, নৌকা বাইচ, বলি খেলা ইত্যাদি নানাবিধ কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা নববর্ষের দিন মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

২০২৪ সালের পহেলা বৈশাখ ইংরেজি কত তারিখ ?

২০২৪ সালের পহেলা বৈশাখ ইংরেজি ১৪ এপ্রিল। বাঙালিরা এ দিনটিতে লাল সাদার মিশ্রণে বাহারি রঙের পোশাক পরে, রাজকীয় পান্তা ইলিশ খাওয়া ও নাচ গানের মধ্যে দিয়ে বাংলা নববর্ষ মহা ধুমধামে পালন করে। এটি বাংলা বছরের প্রথম দিন।

বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের প্রবর্তক কে ?

বাংলা সনের প্রবর্তক মুঘল সম্রাট আকবর। প্রথমদিকে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে হয় বঙ্গাব্দ আরও পরে হয় বাংলা নববর্ষ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।

পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের ইতিহাস।

ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাটরা হিজরী সন অনুসারে জমির খাজনা আদায় করতেন। কিন্তু হিজরী সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় কৃষি ফসলের সাথে মিলতো না। তাই অসময়ে কৃষকদের জমির খাজনা পরিশোধ করতে হতো। এতে কৃষকরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়তেন। পরবর্তীতে সম্রাট আকবরের নির্দেশে বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহ উল্লাহ সিরাজী সৌর সন ও হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করেন বাংলা সন। প্রথম দিকে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন,পরে তা হয় বঙ্গাব্দ এবং আর ও পরে হয় বাংলা নববর্ষ।

পহেলা বৈশাখ ও বাঙালি সংস্কৃতি।

পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ।এটি বাংলা বছরের প্রথম দিন।দিনটি বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী মহা ধুমধামে বর্ষবরণের দিন। দিনটি বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় বিশেষ উৎসবের দিন হিসেবে পালিত হয়। পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের জাতীয় উৎসব এবং বাঙ্গালীদের সর্বজনীন লোক উৎসব। পহেলা বৈশাখ শুরু হয়েছিল পুরান ঢাকার মুসলিম মাহিফরাস সম্প্রদায়ের হাতে।

এটি প্রতিবছর পালিত হয় ১৪ই এপ্রিল। এ দিনটি সরকারি ছুটির দিন। দিনটিতে মঙ্গল শোভাযাত্রা, মেলা পান্তা ইলিশ খাওয়া, শুভ হালখাতা ইত্যাদি নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রাকে "মানবতার অমূল্য সংস্কৃতির ঐতিহ্য" হিসেবে ঘোষণা করে।

পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের গুরুত্ব।

পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। বাঙালির জাতীয় জীবনে দিনটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। আমাদের জাতীয় চেতনার সাথে পহেলা বৈশাখের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। বাঙালী সংস্কৃতির সাথে পহেলা বৈশাখ ওতো প্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে। পুরাতন এর গ্লানি মুছে ফেলে নতুন বছর হয়ে ওঠে আরও রঙ্গিন আরো স্বপ্নময়।

প্রতিবছর এই দিনটি আমাদের সামনে হাজির হয় নতুন নতুন বার্তা নিয়ে। অতীতের সব কিছু ভুলে আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে মহাউৎসবে দিনটিকে পালন করে থাকি। প্রত্যেক জাতি ধর্মেরই নিজস্ব ধর্মীয় উৎসব থাকে কিন্তু পহেলা বৈশাখ কোন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি সবার, এটি সর্বজনীন। তাই যথার্থই বলা যায়, ধর্ম যার যার উৎসব কিন্তু সবার। আর এ কারণেই  বাংলা নববর্ষের গুরুত্ব অপরিসীম।

মঙ্গল শোভাযাত্রা কি ? 

মঙ্গল শোভাযাত্রা হচ্ছে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ঢাকা শহরে এর প্রচলন শুরু হয়। বর্তমানে এটি ধর্মনিরপেক্ষ একটি উৎসব হিসাবে সারা বাংলাদেশের ছড়িয়ে পড়েছে। শুরুর দিকে এই শোভাযাত্রার নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।

 যার মূল বিষয়বস্তু হলো আগামী নতুন বছর আমরা যেন পুরাতনের সকল গ্লানি মুছে ফেলে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় নতুন জীবন গড়তে পারি। আর এই সমস্ত ভাবনা থেকেই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা দিনে দিনে হয়ে ওঠে "মঙ্গল শোভাযাত্রা"।

পহেলা বৈশাখ বাঙালি প্রাণের উৎসব ব্যাখ্যা কর।

পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ। বাঙালির প্রাণের উৎসব। জাতি, ধর্ম ,বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবাই এই দিনটিকে উৎসবের আমেজে পালন করে। এ দিনটিতে মানুষ নানান রঙের সেজে নিজেকে উপস্থাপন করে নতুন আঙ্গিকে। নাচ, গান ও আনন্দ উল্লাসের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেয় আপন মহিমায়। সকল ভেদাভেদ ভুলে সেদিন মহাআনন্দে মেতে ওঠে সকলেই। এ যেন এক প্রাণের মিলন মেলা। তাই সহসায় বলা যায়, পহেলা বৈশাখ বাঙালি প্রাণের উৎসব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪