এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন সম্পর্কে জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন সম্পর্কে জানার জন্য বেশ চিন্তিত। এলনিনো এবং লানিনা  বিশ্ববাসীর জন্য একটি অভিশাপ স্বরূপ। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।

এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন সম্পর্কে জানুন

প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।

 এলনিনো এবং লানিনা কি?

এলনিনো হচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরিভাগের জলের গড় তাপমাত্রার সাথে তুলনামূলক নিরবিচ্ছিন্ন পরিবর্তনকে বোঝায়। অর্থাৎ গ্রীষ্মমন্ডলীয় শান্ত সমুদ্রের গড় তাপমাত্রা যখন কমপক্ষে ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে এবং এই ব্যতিক্রম যখন পাঁচ মাস ও তার অধিক সময় ধরে চলতে থাকে তখন এটিকে এলনিনো বা লানিনা বলে অভিহিত করা হয়।

এলনিনো হচ্ছে আবহাওয়ার শুষ্ক বা উষ্ণ পর্যায়। যখন স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা অনেক বেশি হয়, বৃষ্টিপাত একেবারে কমে যায় এবং বন্যাও কম হয়।

 অপরদিকে লানিনা হচ্ছে আবহাওয়ার শীতল পর্যায়। যখন স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে, বৃষ্টিপাত বেশি হয় এবং ঘন ঘন বন্যা দেখা দেয়।

এলনিনো এবং লানিনার পার্থক্য।

গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের কোথাও প্রচন্ড খরা, অতি বৃষ্টি এবং কোথাও তীব্র শীতে পৃথিবীবাসী নাকাল হয়ে পড়েছে।দেশে দেশে দেখা দিয়েছে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানল, প্রচন্ড শীত, বরফ গলন এবং ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পাশাপাশি এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো ঘটছে। নিম্নে এলনিনো এবং লানিনার পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলোঃ

স্প্যানিশ শব্দ এলনিনো অর্থ ছোট বালক। এলনিনো এক প্রকার উষ্ণ স্রোত যা উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়।  এলনিনোর বছরগুলোতে জেলেদের মাছ ধরার পরিমাণ কমে যায়। এতে তাদের অর্থ উপার্জন কম হয়। এলনিনোর প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং বন্যা দেখা দেয় । প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলের তাপমাত্রা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়, খরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে।

স্প্যানিশ শব্দ লানিনা অর্থ ছোট বালিকা। লানিনা একটি শীতল স্রোত। যা দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়। লানিনার প্রভাবে জেলেরা প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরে। এতে তাদের প্রচুর অর্থ উপার্জন হয়। লানিনার প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং বন্যা দেখা দেয়। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলের তাপমাত্রা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়, খরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে।

এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন ব্যাখ্যা কর।

এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্রসহ সামগ্রিক জীবনের উপর প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী ক্রমশ উষ্ণ হচ্ছে এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা গেলে, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। নিম্নে এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন আলোচনা করা হলোঃ

এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য অঞ্চলভেদে বিভিন্ন রকম হয়। আবার পৃথিবীর সব অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও সমান নয়। পৃথিবীর অধিকাংশ ভূমিভাগ মহাসাগরের তুলনায় বেশি উষ্ণ হচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বরফ গলনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও মহাসাগরের স্তরীভবনের ফলে স্রোতের গতি কমে গিয়ে সামগ্রিক স্রোতের পরিবর্তন হচ্ছে।

এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের ফলে গত কয়েক দশক ধরে পৃথিবী ব্যাপক হারে উষ্ণ হচ্ছে। এর ফলে আমাদের পরিবেশ ও জীবজগতের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। যার কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে মাটি শুষ্ক হচ্ছে এবং দাবানলের ঝুঁকি বাড়ছে। যার প্রভাবে ভূমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে এবং খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। বেঁচে থাকার তাগিদে উষ্ণ অঞ্চলের জীব শীতল অঞ্চলের দিকে পরিযায়ন করছে। সামুদ্রিক প্রাণীরা গভীর সমুদ্রের যেখানে ঠান্ডা পানি রয়েছে সেখানে আশ্রয় নিচ্ছে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ পানির উৎস হুমকির মুখে পড়ছে। এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। তাপমাত্রা জনিত সমস্যা সরাসরি স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে এবং নানা রকম সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার ঘটছে।

এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন সব জায়গায় সমানভাবে পরিলক্ষিত হয় না। এর ফলে পৃথিবীর কিছু দেশ ও কিছু অর্থনৈতিক খাত মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। তারা এই পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী নয়। দায়ী হচ্ছে ধনী শিল্পোন্নত দেশ। যারা সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে। ধনী দেশগুলোর কাছে পর্যাপ্ত সম্পদ থাকায় ক্ষতি মোকাবেলায় আমাদের তুলনায় অনেক ভালো পর্যায়ে রয়েছে। এ কারণে বৈষ্ণিক উষ্ণায়নের প্রভাব তাদের ওপর সবচেয়ে কম পড়ে।

সর্বোপরি এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন কৃষি, মৎস্য, বনজ সম্পদ, জ্বালানি এবং পর্যটনসহ অনেক অর্থনৈতিক খাতকে ব্যাপক প্রভাবিত করে। দরিদ্র, নারী, শিশু এবং আদিবাসীরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ তার নিজ বাসস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং অভিবাসন প্রক্রিয়ায় আসতে পারে ব্যাপক পরিবর্তন। 

এলনিনো কত বছর স্থায়ী হয় ?

এলনিনো সাধারণত ২ বছর থেকে ৭ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।  তবে কখনো কখনো এটিকে ৯ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে দেখা যায়।

এলনিনো কোন মহাসাগরে দেখা যায় ?

এলনিনো প্রশান্ত মহাসাগরে দেখা যায়।

এলনিনোর উৎপত্তি কোথায় ?

পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে পেরু ও ইকুয়েডার বরাবর এলনিনোর উৎপত্তি।

বাংলাদেশে এলনিনোর প্রভাব ।

বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধের দেশ হিসাবে এপ্রিল মাস হচ্ছে সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। সেই হিসাবে এপ্রিল ও মে মাসে বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করে। গত ৭৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদদের ধারণা মতে, এই তীব্র তাপপ্রবাহ আরো বেশি হতে পারে। এলনিনো এবং লানিনার প্রভাবে জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন আমাদেরকে নতুনভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।

 এই তীব্র তাপপ্রবাহে বাংলাদেশের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে আউশ ধান, মরিচ, কলা, পেঁপে, পাটসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের  ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অপরদিকে এলনিনোর প্রভাবে এপ্রিলে হাওড়ে বন্যা, আগস্টে উত্তরাঞ্চলে বন্যা এবং পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে আকর্ষিক বন্যার কারণে হাওরের বোরো ধান নষ্ট হচ্ছে এবং উত্তর অঞ্চলের আমন ধান তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ফসল হানি ঘটছে। যার ফলে আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪