তীব্র তাপ প্রবাহে জনজীবনে বিপর্যয় সম্পর্কে জেনে রাখুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা তীব্র তাপ প্রবাহে জনজীবনে বিপর্যয় সম্পর্কে জানার জন্য বেশ চিন্তিত। তীব্র তাপদাহ বিশ্ববাসীর জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে তীব্র তাপ প্রবাহে জনজীবনে বিপর্যয় সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি তীব্র তাপ প্রবাহে জনজীবনে বিপর্যয় সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
তাপ কি ?
তাপ এক প্রকার শক্তি। যা আমাদের শরীরে ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি তৈরি করে। আরও সহজ ভাবে বলা যায়, তাপ এক প্রকার শক্তি, যা দুটি বস্তুর মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য হলে এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে স্থানান্তরিত হয়।
তাপ প্রবাহ কি ?
যদি কোন স্থানে বাতাসের তাপমাত্রা দীর্ঘ সময় ধরে খুব বেশি বৃদ্ধি পায় এবং সেই সাথে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন তাকে তাপ প্রবাহ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, তাপ প্রবাহ হল পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে পৃথিবীর পৃষ্ঠের দিকে তাপ শক্তির চলাচল।
হিট অ্যালার্ট কি ?
তাপ প্রবাহ হলো অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া। আর এই তাপ প্রবাহ সম্পর্কে যখন আগাম সতর্কতা জারি করা হয়, তখন তাকেই মূলত হিট অ্যালার্ট বলে। তাপমাত্রা আরো বেশি পরিমাণে বাড়লে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবন দেখা দেয়। তাই তীব্র তাপ প্রবাহে জনজীবনে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই আগাম সর্তকতা হিসাবে হিট অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
তীব্র তাপ প্রবাহে জনজীবনে বিপর্যয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
আমাদের দেশের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস হচ্ছে এপ্রিল। তীব্র তাপদাহে পুড়ছে সারাদেশ। দিন দিন তাপমাত্রার পরিমাণ যেন বেড়েই চলেছে। তীব্র তাপ প্রবাহে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। প্রখর উত্তাপে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ। জীবন ও জীবিকার তাগিদে তাদের ঘর থেকে বের হতেই হচ্ছে।
রৌদ্রের প্রখর তাপে জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রচন্ড গরম সহ্য করতে না পেরে অনেকেই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে প্রখর তাপদাহে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, অসুস্থ ও বয়স্করা। সেই সাথে ডায়রিয়া, সর্দি জ্বর, শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বহু গুনে বেড়ে গেছে। কোন কোন হাসপাতালে তিল ধরনের ঠাঁই নেই।
আজ ২৫শে এপ্রিল সকাল থেকে আবারো ৭২ ঘন্টার হিট এলার্ট জারি করা হয়েছে, সতর্কতা অবলম্বনের জন্য। অর্থাৎ সবাই যেন এ ব্যাপারে সজাগ হতে পারে। তীব্র তাপ প্রবাহে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা। গত বৃহস্পতিবার ২৫ শে এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে বেশ কিছুদিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির উপরে বিরাজ করছে। সেখানকার কোন কোন রাস্তার পিচ গলে গিয়ে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
তবে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। তারপরও তাপ প্রবাহ কমার তেমন কোন পূর্বাভাস এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তর দিতে পারে নাই। তাই যথার্থই বলা যায়, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে যদি তাপ প্রবাহ না কমে, তবে তীব্র তাপ প্রবাহে জনজীবনে বিপর্যয় আরো কঠিন আকার ধারণ করবে। তখন পরিস্থিতি অনেকটা বেসামাল হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদেরকে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এই তীব্র তাপদাহে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে শ্রমজীবী মানুষ। প্রখর রোদে পুড়ে, ঘাম ঝরিয়ে যে টাকা রোজগার করে তার বিনিময়ে পরিবার পরিজনের জীবিকা নির্বাহ করা হয়। এ সময় তারা অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই নিজেদের সতর্কতার পাশাপাশি প্রত্যেক সামর্থ্যবানের উচিৎ শ্রমজীবী মানুষদেরকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা এবং তাদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেয়া।
তীব্র তাপদাহ কি ?
তীব্র তাপ প্রবাহে জনজীবনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তীব্র এই গরম আবহাওয়াকে বলা হয় তীব্র তাপদাহ বা দাবদাহ। সাধারণত তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করলে তাকে বলা হয় তীব্র তাপদাহ।
তাপ প্রবাহ কি কি ক্ষতি করে ?
তীব্র তাপ প্রবাহে জনজীবনে বিপর্যয়ের কোন সীমা থাকে না। তাপ প্রবাহ মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা ঠিকমতো শ্রম দিতে পারে না। ফলে কৃষি ও শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। এতে করে জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। চরম উত্তাপ সহনশীল নয়, এমন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কি ?
বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বেড়ে যাওয়াকে বলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। আর এটি মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ।
হিট স্ট্রোক কি এবং হিট স্ট্রোক করলে কি করবেন ?
গরম কালের একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যা হচ্ছে হিট স্ট্রোক। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, প্রচন্ড গরমে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তখন তাকে হিট স্ট্রোক বলে। হিট স্ট্রোক করলে যে কাজগুলো করবেন সেগুলো হলোঃ
* রোগীকে ঠান্ডা জায়গায় নিতে হবে।
* শরীরে অতিরিক্ত কাপড় থাকলে খুলে দিতে হবে।
* শুইয়ে দিতে হবে এবং পা দুটো উপরে নিচে ওঠানামা করাতে হবে।
* প্রচুর পানি অথবা তরল খাবার খেতে দিতে হবে।
* হালকা পানি দিয়ে সারা শরীর মুছে দিতে হবে।
* আরামদায়ক বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
* এতেও কাজ না হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url