কাঁচা বাদাম খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা কাঁচা বাদাম খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য বেশ চিন্তিত। কাঁচা বাদাম অত্যন্ত উপকারী একটি মুখরোচক খাদ্য। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে কাঁচা বাদাম খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি কাঁচা বাদাম খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
বাদাম কি ?
বাদাম হচ্ছে শক্ত খোসার মধ্যে সুরক্ষিত একটি ভোজ্য বীজ। প্রকৃতিগত ভাবে অধিকাংশ ফল থেকে বীজ বেরিয়ে আসে কিন্তু বাদামের বেলায় এমনটা ঘটে না। বাদামে শক্ত খোসার প্রাচীর থাকে। তবে সাধারণত কোন শক্ত খোসাযুক্ত ভোজ্য বীজকে বাদাম বলে। বাদাম একটি উচ্চ শক্তির এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য উৎস।
কাঁচা বাদামের পুষ্টিগুণ।
অন্য অনেক খাবারের তুলনায় কাঁচা বাদামের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এটি মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য। কাঁচা বাদামে যে সমস্ত পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো হলঃ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, প্রোটিন, ওমেগা ৩, আয়রন, ভিটামিন এ, বি, ডি, ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা চিনা বাদামে যে সকল উপাদান রয়েছে সেগুলো হল কার্বোহাইড্রেট ৬০গ্রাম, প্রোটিন ৫৩.৩ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৫৬৬ কিলোক্যালরি, ক্যালসিয়াম ৯০ মিলিগ্রাম, আয়রন৩৫০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৩৭ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.৩০ মিলিগ্রাম।
কাঁচা বাদাম খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতা জানলে অবাক হবেন।
রাস্তার ধারে কিংবা বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে অহরহ বাদাম কিনতে পাওয়া যায়। বন্ধু-বান্ধবীদের মজার আড্ডায় বাদাম খাওয়ার মজাই আলাদা। তবে প্রেমিকযুগলদের কাছে ভাজা বাদাম একে অপরকে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়াতে পারলে প্রাণ মন জুড়িয়ে যায়। তবে এই ভাজা বাদামের চাইতে কাঁচা বাদাম খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতা জানলে চোখ কপালে উঠে যাবে। নিচে কাঁচা বাদাম খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতার কথা বলা হলোঃ
১। ওজন কমায়ঃ যারা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তারা নিয়মিত কাঁচা বাদাম খান। কাঁচা বাদাম উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়াই খাওয়ার পরে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা অনুভব হয়। এতে করে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা থাকে না। যার ফলে দিনে দিনে অতিরিক্ত ওজন কমতে থাকে।
২। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ কাঁচা বাদাম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। এটি রক্তে শর্করা বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে। একজন বিখ্যাত পুষ্টিবিজ্ঞানী এবং চিনা বাদাম ইনস্টিটিউট এর গবেষণা পরিচালক ডক্টর সামারা স্টার্লিং বলেছেন একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, চিনা বাদাম রক্তে শর্করা রাতারাতি স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করতে পারে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দারুন ভূমিকা রাখে।
৩। হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করেঃ কাঁচা বাদাম অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ একটি খাবার। যা লিপিড প্রোফাইল উন্নত করে এবং রক্ত চাপের মাত্রা কমায়। যার ফলে নিয়মিত কাঁচা বাদাম খেলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমতে থাকে। এছাড়াও এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে।
৪। ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ যে সমস্ত খাবার ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে কাঁচা বাদাম তাদের মধ্যে অন্যতম। এতে ক্যান্সার প্রতিরোধী সকল উপাদান রয়েছে। Peanut এবং Peanut butter শরীরে ক্যান্সারের জীবাণুর সাথে লড়াই করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ব্যাপক অবদান রাখে।
৫। গর্ভাবস্থায় শিশুর শারীরিক গঠনে অবদান রাখেঃ কাঁচা বাদামে প্রচুর ফলিক এসিড বিদ্যমান থাকায় গর্ভকালীন সময়ে এটি দারুন উপকারী। কাঁচা বাদামে থাকা ফলিক এসিড শিশুর জন্মগত ত্রুটি হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও চিনা বাদামে থাকা ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেলস শিশুর শারীরিক গঠনে দারুন ভূমিকা রাখে।
৬। মেধা শক্তি বিকাশে সহায়কঃ সুস্থ ও তীক্ষ্ণ মস্তিষ্কের জন্য ভিটামিন বি১,নিয়াসিন ও ফলেট এর মত পুষ্টি উপাদান খুবই প্রয়োজন। যা কাঁচা বাদামে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। তাই কাঁচা বাদাম নিয়মিত খেলে মেধা শক্তি বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৭। বাতের ব্যথা নিরাময়ের কাজ করেঃ বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাতের ব্যথা একটি অতি সাধারণ সমস্যা এটি সাধারণত রিউমাইটেড আর্থ্রাইটিস এর কারনে হয়ে থাকে। ব্যথা নাশক ওষুধ সেবনে কিছুটা স্বস্তি হলেও কিডনির জন্য তা দারুন ক্ষতিকর। তাই ঔষধ না খেয়ে চিনা বাদামের তেল হালকা গরম করে ব্যথার জায়গায় মালিশ করলে দারুন উপকার পাওয়া যায়।
এছাড়াও আরো কিছু কাঁচা বাদাম খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতার কথা নিচে বলা হলোঃ
* পিত্তথলিতে পাথর হওয়া ঠেকাতে ভূমিকা রাখে।
*ত্বকে বলি রাখা কমাতে কাজ করে।
* চুল উঠা বন্ধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
* হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে।
* হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কাঁচা বাদাম খেলে কি হয় ?
পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে বাদাম ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে নানা অসুখ-বিসুখের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা বাদাম হল ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন ই, প্রোটিন, ফাইবার, কপার, আয়রন, জিংক, নিয়াসিন,থায়ামিন এবং রিবোফ্লাভিনের ভান্ডার। যে কারণে অনেক শারীরিক সমস্যার সমাধান করে এই কাঁচা বাদাম। নিচে রাতে ভিজিয়ে কাঁচা বাদাম খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতার কথা বলা হলোঃ
* সারাদিন কাজ করার এনার্জি পাওয়া যায়।
*এটি পিরিয়ডকালীন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
* হজম শক্তির উন্নতি ঘটায়।
* মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে।
* ত্বক ও চুলের জন্য দারুন উপকারী।
* হার্ট সুস্থ রাখে।
* বাত ব্যথা কমায়।
* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
* রক্তস্বল্পতা দূর করে।
* সুস্বাস্থ্যের জন্য দারুন উপকারী।
কাঁচা বাদাম খাওয়ার নিয়ম।
যেকোনো খাবারের সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে চাইলে সেই খাবার খাওয়ার সঠিক নিয়ম অবশ্যই ভালো করে জানতে হবে। যাতে করে কোন শারীরিক সমস্যা না হয়। নিচে কাঁচা বাদাম খাওয়ার কিছু নিয়ম তুলে ধরা হলোঃ
* এক গ্লাস কুসুম গরম দুধের সাথে চার থেকে পাঁচটি কাঁচা বাদাম কুচি করে কেটে মিক্সড করে খেতে পারেন। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এভাবে খেলে দারুন উপকার পাবেন।
* রাতে ১০ থেকে ১২ টি বাদাম পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেয়ে ফেলুন। অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
* এছাড়াও রান্নার মাধ্যমে কাঁচা বাদাম খাওয়া হয়। যেমনঃ পায়েস, সেমাই, পোলাওসহ বিভিন্ন রান্নায় কাঁচা বাদাম ব্যবহার করে খাওয়া হয়।
একদিনে কয়টি কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত ?
মানব দেহের প্রয়োজনীয় উপকারী ফ্যাটের মূল উৎস হিসাবে এবং বাড়ন্ত শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের ক্ষেত্রে কাঠবাদাম অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন অন্তত চার থেকে পাঁচটি কাঠবাদাম খাওয়া উচিত।
কাঁচা বাদাম খেলে কি চর্বি বাড়ে ?
না। কাঁচা বাদাম খেলে চর্বি বাড়ে না। বাদামে সবচেয়ে বেশি রয়েছে তেল বা চর্বি। এ কারণে অনেকে ভয়ে বাদাম খেতে চান না। কিন্তু আমাদের জেনে রাখা উচিত বাদামের এই তেলের বেশিরভাগ অংশই হচ্ছে অসম্পৃক্ত চর্বি।
যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই কাঁচা বাদাম খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতা জেনে শুনে আপনি প্রতিদিন এক মুঠো কাঁচা বাদাম খেতে পারেন অনায়াসেই।
কাঁচা বাদাম খাওয়ার অপকারিতা।
কাঁচা বাদামে রয়েছে অনেক উপকারিতা। তারপর ও কাঁচা বাদামে কিছু অপকারিতাতো আছেই। আর সেগুলো হলোঃ
* কাঁচা বাদাম বেশি খেলে এলার্জিজনিত সমস্যা হতে পারে।
* কারো কারো হজমের সমস্যা হতে পারে।
* অনেকের ক্ষেত্রে ওজন বাড়তে পারে।
* কখনো কখনো গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url