তীব্র গরমে আখের রসের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখুন
সুপ্রিয় পাঠক, আপনারা তীব্র গরমে আখের রসের উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য বেশ চিন্তিত। আখের রস অত্যন্ত পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি খাবার। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে তীব্র গরমে আখের রসের উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য আমি তীব্র গরমে আখের রসের উপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
আখ কি ?
আখ বা ইক্ষু পোয়াসি পরিবারের অত্যন্ত পরিচিত একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি লম্বা, বহু বর্ষজীবী ঘাসের একটি প্রজাতি। এর রস চিনি ও গুড় তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আখ উৎপাদিত হয় নাটোর জেলায়।
আখের রসের পুষ্টিগুণ।
তীব্র গরমে শরীর সুস্থ রাখতে আখের রসের কোন বিকল্প নেই। মিষ্টি রসে ভরা অর্থকারী ফসল হচ্ছে আখ। শরীরের পানি শূন্যতা দূরীকরণে এবং জন্ডিস রোগের মহাঔষধ হিসেবে আখের রস দারুন ভূমিকা পালন করে। অত্যন্ত সহজলভ্য, দামের সস্তা এবং অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ আখের রস। মোটামুটি সব ঋতুতেই আখের রস পাওয়া যায়।
এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, শর্করা, মিনারেল, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি। আখের রস খেলে মুহূর্তেই দেহের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। সাধারণত ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিলিটার আখের রসে ১১১ ক্যালরি থাকে। এর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট থাকে ২৭ গ্রাম। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম থাকে ০.২৭ গ্রাম।
তীব্র গরমে আখের রসের উপকারিতা জানলে অবাক হবেন।
গ্রীষ্মের তাপদাহ থেকে একটু স্বস্তি পেতে অনেকেই পান করেন আখের রস। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, আমরা অনেকেই তীব্র গরমে আখের রসের উপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। আখের রস ত্বকের যত্নে এবং বৃক্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দারুন উপকারি। নিম্নে তীব্র গরমে আখের রসের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
১। চুল ও ত্বক ভালো রাখেঃ বিশেষজ্ঞদের মতে, আখের রসে থাকে ম্যাগনেসিয়াম, খনিজ, আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড যা রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে, ত্বক উজ্জ্বল রাখে এবং ব্রণের সমস্যা দূর করে। এছাড়াও এটি খুশকি সমস্যা কমাতে এবং চুল ভালো রাখতে দারুন কাজ করে।
২। সংক্রমণ কমায়ঃ আখের রস ডাইইউরেটিক। ফলে শরীরের বর্জ্য পদার্থ দূর করতে দারুন ভূমিকা রাখে। লিভার ভালো রাখতে এটি মহাঔষধের মত কাজ করে। বিশেষ করে জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থতায় এটি পথ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
৩। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ আখের রসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার মূল উপাদানই হলো ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। যা আখের রসে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।
৪। কিডনি ভালো রাখেঃ আখের রসে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুবই কম। এমনকি সোডিয়াম এবং অসম্পৃক্ত স্নেহ জাতীয় পদার্থ নেই বললেই চলে। ফলে আখের রস কিডনির ওপর চাপ কমায়। তাই তীব্র গরমে আখের রসের উপকারিতা পেতে টাটকা রস পান করুন।
৫। তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়ঃ শরীরের পানিশূন্যতা থাকলে এক গ্লাস আখের রস পান করুন। এটি তাৎক্ষণিক শক্তি যোগানোর একটি ভালো উৎস। আখের রস সুক্রোজ থাকে যা খুব সহজে শরীর দ্বারা শোষিত হয় এবং শরীরের চিনির ঘাটতি খুব সহজে পূর্ণ করতে পারে।
৬। হাড় ও দাঁতের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ বাড়ন্ত শিশুরা যদি আখ চিবিয়ে রস পান করে তাহলে দাঁতের সমস্যা কম হয়। আখের রসে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড় ও দাঁতকে শক্ত মজবুত করে।
৭। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ আখের রস ব্রেস্ট ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
৮। ক্লান্তি দূর করেঃ তীব্র গরমে আখের রসের উপকারিতা পেতে এক গ্লাস আখের রস পান করুন। দেখবেন সাথে সাথেই আপনার ক্লান্তি দূর হবে।
৯। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমায়ঃ আখের রস নিয়মিত পান করলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর হয়।
১০। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ আখের রসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আখের রস কখন খাওয়া উচিত।
আখের রস প্রাকৃতিক পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি পানীয়। তীব্র গরমে আখের রসের উপকারিতার জুড়ি মেলা ভার। এটি একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক পানীয়। ইউটিআই এবং কিডনিতে পাথরের মত সমস্যায় এটি দারুন উপকারি। জন্ডিস নিরাময়ে এটি অব্যর্থ মহাঔষধ। চিকিৎসকের মতে, আখের রস বিকেলে পান করা উচিত।
আখের রস খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে ?
তীব্র গরমে এক ক্লাস ঠান্ডা আখের শরবত যে কাউকে সতেজ করে তুলতে পারে। যদি কোন ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত আখের রস খাওয়া উচিত নয়। কেননা, এতে তার ক্ষতি হতে পারে। আখের রসে যেহেতু চিনি বা সুক্রোজ রয়েছে তাই আখের রস খেলে ডায়াবেটিস বাড়তে পারে।
আখের রস খাওয়ার নিয়ম।
আখের রস আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে সেটি খেতে হবে নিয়ম মেনে। নিম্নলিখিত নিয়ম অনুসরণ করে আখের রস খেতে হয়।
* প্রথমে আখ পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর সেটা থেকে রস বের করে পরিষ্কার কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে পান করতে হবে।
* এছাড়াও আখ পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার দাঁত ও মাড়ি ভালো থাকবে এবং উপকার একটু বেশিই পাবেন।
আখের রসের অপকারিতা।
যে কোন জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা ও থাকে। আখের রসও সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। অতিরিক্ত পরিমাণ আখের রস পান করলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না এবং শরীরের রক্তক্ষরণের সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে রক্ত পাতলা হয়ে যায় এবং রক্তের নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। তাই যাদের রক্তের সমস্যা আছে তাদের আখের রস না খাওয়াই উত্তম। এছাড়াও আখের রসে ঠান্ডা প্রবণতা রয়েছে। তাই যাদের শ্বাস জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের শীতকালে আখের রস না খাওয়াই উত্তম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url