চিরতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন

 প্রিয় পাঠক, আপনারা চিরতার উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য বেশ চিন্তিত। অভাবনীয় ভেষজ গুণে ভরপুর চিরতা। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে চিরতার উপকারিতা বিষয়ে জানানোর চেষ্টা করব। 

চিরতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন

প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি চিরতার উপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।

চিরতা কি ?

চিরতা একটি বহু বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। যা ভারতবর্ষে বিশেষ করে কাশ্মীর ও ভুটানে প্রচুর পরিমাণে জন্মে। এর গড় উচ্চতা প্রায় দেড় মিটার। গাছের পাতা আনুমানিক ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। বৃন্তহীন ফুল দেখতে অনেকটা হালকা সবুজের সাথে গোলাপি মেশানো। ফল দেখতে অনেকটা ডিম্বাকৃতি।

চিরতার ঔষধি গুণ।

চিরতা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। নিয়মিত তিতা জিনিস খেলে অসুখ-বিসুখ হওয়ার প্রবণতা কম থাকে। চিরতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী একটি ভেষজ উপাদান। এটি রক্তে চিনির পরিমাণকে কমিয়ে ব্লাডের সুগার লেভেলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। চিরতার পানি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। অত্যধিক তিক্ততার জন্য জ্বর ও কৃমিনাশক এবং পাচকতার গুণে সারা ভারত জুড়ে প্রসিদ্ধ। অসুস্থ রোগীদের মুখের রুচি ফেরাতে চিরতা ভেজানো পানি দারুন কাজ করে। তাই বলা যায় চিরতার উপকারিতা নানাবিধ।

চিরতার উপকারিতা সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য।

চিরতা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। চিরতার তিক্ত স্বাদের জন্য জ্বর, ত্বকের সমস্যা, প্রদাহের সমস্যা, বাত ব্যথা, পেট ফাঁপা, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের জন্য বিশেষ উপকারী। নিম্নে চিরতার উপকারিতার কথা বলা হলোঃ

১। ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ অতিরিক্ত ওজন একটি মারাত্মক শারীরিক সমস্যা। অতিরিক্ত ওজন কমাতে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ পাওয়া যায়। চিরতা ভেজানো পানি পানের মাধ্যমে খুব সহজে ওজন কমানো যায়।

২। রক্ত পরিশোধক হিসেবে কাজ করেঃ চিরতা স্বাদে তিক্ত হওয়ার কারণে রক্ত পরিশোধন করে থাকে। অ্য়ানিমিয়া থেকে রক্ষা করতে চিরতা দারুন কাজ করে।

৩। লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ লিভারের বিভিন্ন সমস্যায় বিশেষ করে লিভার সিরোসিস এবং লিভারের অন্যান্য অসুখ সারিয়ে তুলতে চিরতা বিশেষ ভূমিকা রাখে।

৪। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ পরিপাকতন্ত্র সংক্রান্ত রোগ হল কোষ্ঠকাঠিন্য। চিরতা ভেজানো পানি কোষ্ঠকাঠিন্য সারিয়ে তুলতে দারুন কাজ করে।

৫। কৃমিনাশকঃ চিরতায় তিক্ততা বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় কৃমিনাশক হিসাবে কাজ করে। আধাগ্রাম চিরতার গুঁড়ো সকালে মধুসহ তিন দিন সেবন করুন। কৃমির উপদ্রব চলে যাবে।

৬। ত্বকের সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখেঃ ত্বকের যাবতীয় সমস্যার সমাধানে চিরতা ভিজিয়ে পানি খেলে অথবা চিরতার পেস্ট বানিয়ে ত্বকে লাগালে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

৭। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করেঃ চিরতা ভেজানো পানি প্রতিদিন সকালে নিয়মিত পান করলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৮। পেট ফাঁপা সমস্যার সমাধানঃ ক্ষুদ্রান্ত আমাদের শরীরের একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তৈলাক্ত ও ভাঁজাপোড়া খাবার পেটের বিভিন্ন রোগব্যাধির জন্য দায়ী। চিরতা ক্ষুদ্রান্ত থেকে কৃমি বের করে দিয়ে পেট ফাঁপাসহ পেটের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করে থাকে।

৯। বাত ব্যথায় উপকারীঃ চিরতা বাত ব্যথার নিরাময়ে দারুন কাজ করে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষের হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা, হাত পা ফুলে যাওয়া এবং বাত ব্যথায় দারুন কাজ করে।

১০। জ্বর সারায়ঃজ্বর সারিয়ে তুলতে চিরতা কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণে এটি খুবই কার্যকর। তাই চিরতার উপকারিতার কথা লিখে বর্ণনা করা বেশ কঠিন। 

চিরতা ভিজিয়ে জল খেলে কি হয় ?

চিরতা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে চিরতাকে মহাঔষধ বলা হয়ে থাকে। চিরতা ভেজানো জল খেলে অনেক রোগের উপশম হয়। চিরতা খুব ভালো একটি লিভার টনিক। চিরতা ভেজানো জল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, আর্থ্রাইটিসের ব্যথায়, রক্ত বিশুদ্ধতায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দারুন কাজ করে। তাই বলা যায় চিরতার উপকারিতার কথা সবারই জানা।

চিরতা খাওয়ার নিয়ম।

আয়ুর্বেদ বিশ্বের প্রাচীনতম চিকিৎসা পদ্ধতির একটি। যা ভারতবর্ষে বহুকাল আগে থেকে চলে আসছে। আমাদের চারপাশে অনেক ভেষজ উপাদান রয়েছে যা বিভিন্ন রোগব্যাধির বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম। তাদের মধ্যে চিরতা অন্যতম। চিরতার উপকারিতা সঠিকভাবে পেতে চাইলে নিম্নলিখিত উপায়ে চিরতা খেতে হবে।

১। প্রতিদিন রাত্রে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানিতে ৫ থেকে ৬ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে সকালে অর্ধেক এবং রাত্রে ঘুমানোর আগে বাকি অংশ খেতে হবে।

২। ক্ষত শুকানোর ক্ষেত্রে এক কাপ গরম পানিতে চিরতা ভিজিয়ে সকালে ওই পানি ছেঁকে ক্ষতস্থান ভালো করে মুছে দিতে হবে। তাহলে কিছুদিনের মধ্যে ক্ষত সেরে যাবে।

৩। জ্বর সারাতে সাত থেকে আট কাপ পানিতে চিরতা  ভিজিয়ে সিদ্ধ করে সেটাকে দুই কাপ পানিতে পরিণত করতে হবে। সেই পানি সকালে অর্ধেক এবং বিকেলে অর্ধেক পান করলে জ্বর এমনিতেই সেরে যাবে।

৪। হাঁপানির সমস্যায় এক গ্রাম চিরতার গোড়ার সাথে খাঁটি মধু মিশিয়ে খেতে হবে। এভাবে কয়েকদিন খেলে হাঁপানির সমস্যার সমাধান হবে।

চিরতা একাধারে কতদিন খাওয়া যায় ?                        

চিরতা একটানা ১০ থেকে ১৫ দিনের বেশি খাওয়া উচিত নয়। কেননা এতে কিডনি ও যৌন সমস্যা হতে পারে।

চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে ?

দীর্ঘদিন একাধারে চিরতা খেলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। তাই কিডনি রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত চিরতা খাওয়া উচিত নয়।

শেষ কথাঃ

চিরতায় রয়েছে নানা রকমের ভেষজ গুণ। বহু রোগের মহাঔষধ হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। তাই চিরতার উপকারিতা নানাবিধ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
2 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Nasima78
    Nasima78 10 March 2024 at 22:38

    পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।

    • Monowar Hossain
      Monowar Hossain 10 March 2024 at 22:41

      অনেক অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪