ছেলেদের স্বপ্নদোষের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা ছেলেদের স্বপ্নদোষের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানার জন্য বেশ চিন্তিত। স্বপ্নদোষ মানব জীবনে স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে ছেলেদের স্বপ্নদোষের কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে জানানোর চেষ্টা করব।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি ছেলেদের স্বপ্নদোষের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
স্বপ্নদোষ কি ?
সাধারণত ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের স্বপ্নদোষ একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। বীর্যথলি পূর্ণ হওয়ার পর ঘুমন্ত অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত বীর্যপাত ঘটে মানবদেহে বীর্যের ভারসাম্য রক্ষা হয় একে স্বপ্নদোষ বলে। স্বপ্নদোষের সময় অনেকেই ঘুমন্ত অবস্থায় যৌন কর্মকাণ্ডের প্রতিচ্ছবি অবলোকন করেন। তবে উক্ত অনুভূতি ছাড়াও স্বপ্নদোষ হতে পারে।
স্বপ্নদোষ কেন হয় ?
ছেলেরা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছালে তাদের বীর্যথলিতে বীর্য এবং অন্ডকোষে শুক্রানু তৈরি হয়। এভাবে বীর্যথলিতে বীর্য জমা হতে থাকে। বীর্য থলির ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বীর্য জমা হলে নিদ্রারত অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত ঘটে বীর্যের ভারসাম্য রক্ষা করে। সাধারণত এভাবেই বীর্যপাত হয়।
কত বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেদের স্বপ্নদোষ হয় ?
সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে স্বপ্নদোষ শুরু হয় এবং প্রায় ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত হতে পারে। তবে বয়ঃসন্ধিকালে এটি বেশি হয়ে থাকে এবং বিবাহের পর এমনটা হয় না বললেই চলে।
ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ কেন হয় ?
ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতে যৌন আকাঙ্ক্ষা বেশি থাকার কারণে হরমোন গত পরিবর্তনের ফলে শারীরবৃত্তীয় উদ্দীপনার সৃষ্টি করে, যার ফলে রাতের বেলা ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একেবারে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
ছেলেদের স্বপ্নদোষের কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে জেনে রাখা ভালো।
১। মুখ্য কারণঃ বয়ঃসন্ধিকালে যৌন হরমোনের আধিক্যের কারণে।
২। গৌণ কারণঃ
* হস্তমৈথুন করা।
* যৌন বিষয়ক অতিরিক্ত চিন্তা করা।
* পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হওয়া।
* যৌন উদ্দীপক বই পড়া।
* সয়নের পূর্বে যৌন চিন্তা করা বা দেখা।
* যৌন বিষয়ক খোলামেলা আলোচনা করা।
* নারী-পুরুষ খোলামেলা জীবন যাপন করা।
স্বপ্নদোষ হল নারী -পুরুষের ঘুমের মধ্যে বীর্যপাতের একটি অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা। এটি টিনেজারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে অর্থাৎ ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলে মেয়েদের বেশি হয়ে থাকে। তবে এতে ভয় পাবার কিছু নেই। স্বপ্নদোষ একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। একটি নির্দিষ্ট বয়স পার হলেই এটি এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। এতে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। এটি থেকে মুক্তির সঠিক কোন উপায় বা প্রতিকারও নেই।
তবে নিম্নলিখিত উপায়গুলো অবলম্বন করলে অনেকটা এড়িয়ে চলা সম্ভব।
* পর্নো ভিডিও না দেখা।
* রোমান্টিক সিনেমা না দেখা।
* মেয়েদের নিয়ে কল্পনা থেকে বিরত থাকা।
* রাত্রে শয়নের পূর্বে প্রস্রাব করে নেওয়া।
*রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে র' চা পান করা।
* হস্তমৈথুন না করা।
*প্রতিদিন অশ্বগন্ধার পাউডার রাত্রে ভিজিয়ে সকালে পান করা।
*ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত পানি পান না করা।
*রাতে খাবারের পরপরই ঘুমাতে না যাওয়া।
*প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ পুদিনা পাতা ও মিছরী খাওয়ার অভ্যাস করা।
* দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা।
* রাত্রে ঘুমানোর আগে ঢিলেঢালা পোশাক পরা।
* প্রতিদিন পবিত্র কুরআনের ৩০ পারার "সুরা তারিক " পড়ে শয়ন করা।
স্বপ্নদোষ হলে কি ক্ষতি হয় ?
না। স্বপ্নদোষ স্বাভাবিক হলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। তবে স্বপ্নদোষ যদি ঘন ঘন বা মাত্রাতিরিক্ত হয় তবে শরীরের অনেক ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে যে ক্ষতিগুলো হয় সেগুলো হলো ঘুম কমে যাওয়া, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, স্মৃতিভ্রংশ, যৌন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়াএবং লিঙ্গ শিথিল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
স্বপ্নদোষ হলে কি গোসল করতে হবে ?
হ্যাঁ। গোসল করতে হবে। নানা কারণে মানুষের শরীর অপবিত্র হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু অপবিত্রতা থেকে মুক্তি পেতে অজু করতে হয় এবং কিছু কিছু অপবিত্রতা থেকে পরিত্রাণ পেতে গোসল করতে হয়। যেমনঃ স্ত্রী সহবাস, স্বপ্নদোষ ও মেয়েদের পিরিয়ডের পর পবিত্র হওয়ার জন্য ফরজ গোসল করতে হয়।
স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পাওয়ার দোয়া।
স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিম্নলিখিত দোয়া পাঠ করতে হবে। তাহলে স্বপ্নদোষ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। "আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু আহইয়া" অর্থাৎ হে আল্লাহ!আপনার নামে মৃত্যু বরণ করছি এবং আপনার নামেই পুনর্জীবিত হই। সহীহ বুখারী আয়াত ৬৩১২ ।
স্বপ্নদোষ বন্ধ হওয়ার হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।
স্বপ্নদোষ যদি সপ্তাহে একবারের বেশি হয় এবং মাসে ৫ থেকে ৬ বারের বেশি হয় তাহলে এটাকে অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ বলা যেতে পারে। এই অবস্থা চলতে থাকলে নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এ সমস্যার সমাধানে নিম্নলিখিত হোমিওপ্যাথিক ঔষধগুলি সেবন করলে ব্যাপক উপকার পাওয়া যাবে। ঔষধগুলি হলোঃ
নাক্সভমিকা ৬ বা ৩০ শক্তি, চাইনা ৬ বা ৩০ শক্তি, থুজা Q, সালফার ৩০ শক্তি, কান্থারিস ৩০ শক্তি ইত্যাদি।
স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পাওয়ার এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ।
সত্য কথা বলতে কি অতিরিক্ত স্বপ্ন দোষের বিশেষ কোন চিকিৎসা নেই। তবে অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে নিম্নলিখিত কিছু ওষুধ সেবন করলে রোগ থেকে উপশম পাওয়া যায়। যেমনঃ
নার্ভেন্টঃ এই ওষুধটি মূলত স্নায়বিক শক্তি ও পুরুষাঙ্গের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
সেবন বিধিঃ প্রতিদিন সকালেও রাতে আহারের পূর্বে খেতে হবে । অথবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
টোরোক্স এএস আর ২০০ এমজি।
সেবন বিধিঃ দিনে দুইবার সকালেও রাতে আহারের পূর্বে খেতে হবে। অথবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
শেষ কথাঃ
উপরের আলোচনায় আমরা ছেলেদের স্বপ্নদোষের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আপনারা ছেলেদের স্বপ্নদোষের কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে খুব সহজে বুঝতে পেরেছেন। সত্য কথা বলতে কি ? এর সঠিক কোন প্রতিকার বা চিকিৎসা নেই। তবে উপরের আলোচিত বিষয় গুলো মেনে চললে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url