থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা থানকুনি পাতার উপকারিতা কিভাবে পাবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। থানকুনি পাতা বহু গুনে গুণান্বিত একটি অত্যন্ত সুপরিচিত ভেষজ উপাদান। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
থানকুনি কি ?
থানকুনি এক প্রকার খুব ছোট বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Centella Asiatica . আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। এর পাতা দেখতে গোলাকৃতির এবং পাতার কিনারে খাঁজ রয়েছে। সাধারণত পুকুরপাড় বা জলাশয়ের আশেপাশে স্যাঁতসেঁতে জায়গায় এটি ভালো জন্মায়।
থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখুন।
থানকুনি অতি পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ। থানকুনি পাতায় অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান বিদ্যমান থাকায় মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং চুল পড়া বন্ধ করে। থানকুনি পাতায় প্রচুর ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, মুখের ঘা দূর করে, সর্দি- কাশি উপশম করে এবং আমাশয়সহ পেটের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করে। তাই যথার্থই বলা যায়, থানকুনি পাতার উপকারিতা অতুলনীয়।
এছাড়াও আরও কিছু থানকুনি পাতার উপকারিতা নিম্নে দেওয়া হলোঃ
১। ত্বকের ক্ষত সারাতেঃ শরীরের কোথাও কেটে গেলে থানকুনি পাতা বেটে কাঁটা স্থানে লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়, ব্যথা উপশম হয় এবং খুব দ্রুত ক্ষত শুকিয়ে যায়।
২। শরীরের রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখেঃ শরীরের রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখতে থানকুনি পাতা দারুন কাজ করে। থানকুনি পাতার রস খেলে রক্ত বিশুদ্ধ হয় এবং শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছায়। এতে শরীরের নানান জটিলতা দূর হয়।
৩। শরীরের জ্বালাপোড়া দূর করেঃ থানকুনি পাতা ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ত্বককে ভেতর থেকে ঠান্ডা করে এবং জ্বালাপোড়া দূর করে। এতে করে ত্বকের সতেজ ভাব ফুটে ওঠে।
৪। আলসার দূর করেঃ পেটের যাবতীয় সমস্যার সমাধানে থানকুনি পাতা ভীষণ উপকারী। আমাশয় ও আলসারের মতো রোগ নিরাময়ে দারুন ভূমিকা রাখে থানকুনি।
৫। মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ব্রেনসেল চমৎকারভাবে কাজ করে এবং স্মৃতিশক্তির উন্নতি হয়।
৬। ঘুম ভালো হয়ঃ বিভিন্ন কারণে অনেকেই নিদ্রাহীনতায় ভোগেন। থানকুনি পাতা ভেজানো পানি স্নায়ু শিথিল করে দারুন ঘুম আনায়ন করে।
৭ ত্বক সতেজ রাখেঃ থানকুনি পাতায় প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। তাই থানকুনি পাতার নির্যাস ক্লান্ত ভাব দূর করে, ত্বক সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখে। থানকুনি পাতায় প্রদাহরোধী উপাদান বিদ্যমান থাকায় ব্রণের বিস্তৃতি কমায় এবং ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
৮। ত্বকের বলিরেখা দূর করেঃ থানকুনিতে থাকা উপাদান সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ত্বকের বলিরেখা দূর করে।
থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম।
প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত এই ভেষজ উপাদানটি বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। যেমনঃ
* প্রতিদিন এক গ্লাস হালকা গরম দুধে চার থেকে পাঁচ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
* প্রথমে কিছু পরিমাণ পাতা বেটে নিন। তারপর সেই রসের সাথে সমপরিমাণ মধু মিশে খেতে পারেন।
* প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন।
* এছাড়াও গাছ থেকে সরাসরি থানকুনি পাতা তুলে পানিতে পরিষ্কার করে চিবিয়ে খেতে পারেন।
থানকুনি পাতা খেলে কি ফর্সা হয় ?
থানকুনি পাতা মুখের কালো দাগ দূর করে। এছাড়াও ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ঠিক রেখে ত্বক কোমল, মসৃণ, উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখে। তাই সহসাই বলা যায় থানকুনি পাতার উপকারিতা ব্যাপক।
থানকুনি পাতা মুখে লাগালে কি হয় ?
থানকুনি পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান বিদ্যমান থাকায় মুখে ব্রনের বিস্তৃতি কমায়। ব্রণের দাগ দূর করতেও থানকুনি পাতার নির্যাস দারুন উপকারী। এছাড়াও থানকুনি পাতায় ভিটামিন বি, সি, আয়রন ও অন্যান্য উপকারী উপাদান বিদ্যমান থাকায় ত্বকের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
থানকুনি পাতা বেশি খেলে কি কোন ক্ষতি হয় ?
হ্যাঁ। থানকুনি পাতা বেশি খেলে ক্ষতি হয়। থানকুনি যেমন পেটের ব্যথা দূর করে, তেমনি বেশি খেলে পেটের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে খেলে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাবসহ নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই থানকুনি পাতা পরিমাণ মতো খেতে হবে।
যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা।
যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। ইদানিংকালে অনেকেই ভেষজ উপাদানের দিকে বেশি ঝুঁকছে। কারণ বাজারে প্রাপ্ত কৃত্রিম জিনিস শরীরের জন্য মোটেই ভালো নয়। আমাদের বাসা বাড়ির আশেপাশে অনেক কিছুই চোখে পড়ে কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার বিধি না জানার কারণে তা আমাদের অগোচরেই থেকে যায়।
তেমনি একটি প্রাকৃতিক ভেষজ থানকুনি পাতা। এটি নিয়মিত খেলে আমাদের বয়স কমে যাবে এবং চেহারায় রূপ লাবণ্য ফিরে আসবে। যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার রস দারুন কাজ করে। প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধে চার থেকে পাঁচ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে চেহারায় উজ্জ্বল ভাব ফিরে আসবে এবং মনের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। তাই মানব জীবনে থানকুনি পাতার উপকারিতা অবর্ণনীয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url