২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে জেনে রাখুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে জানাজ জন্য বেশ চিন্তিত। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতীয় জীবনে এক অত্যন্ত স্মরণীয় দিন। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিষয়ে জানানোর  চেষ্টা করব।

২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে জেনে রাখুন

প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।

২১ শে ফেব্রুয়ারি কি দিবস ? 

২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার জন্য ভাষা শহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকে স্মরণ করে জাতি প্রতিবছর ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে ভাষা দিবস হিসাবে পালন করতো। কিন্তু ১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ায় বাঙালি সহ সারা বিশ্বজুড়ে এখন দিবসটি "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসাবে পালন করা হচ্ছে।

একুশে ফেব্রুয়ারির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য।

আউযুবিল্লাহিমিনাশ শায়তানির রাজিম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আজ "২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস"। আমি আমার বক্তব্যের শুরুতেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে আমার বক্তব্য শুরু করছি। আজকের আলোচনা সভায় উপস্থিত সম্মানিত সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি বৃন্দ ও আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ এবং মঞ্চের সামনে উপবিষ্ট সম্মানিত সুধিবৃন্দ সকলের প্রতি রইল আমার সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।

আজ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন যে দিনটি না আসলে আমরা মায়ের মুখের ভাষায় কথা বলতে পারতাম না। যার চেতনার হাত ধরে আমরা পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা ও স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ।

আর মহান ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট একদিনে তৈরি হয়নি। বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের বহিঃপ্রকাশ এই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি।

যার ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নুরুল আমিন সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেন। ছাত্র সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্ররা মিছিল করতে থাকে।

সরকারের পেটোয়াবাহিনী তখন মিছিলের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে প্রাণ হারান সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ নাম না জানা অনেকেই।

তারা বুকের তাজা রক্ত রাস্তায় ঢেলে দিয়ে পিছ ঢালা পথ রক্তে রঞ্জিত করেছিল বলেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই আন্দোলন শুধু ভাষার দাবিতেই ছিল না, ছিল পাকিস্তানি শাসন - শোষণের বিরুদ্ধে এক দৃঢ় প্রতিবাদ।

যার ধারাবাহিকতায় পূর্ব পাকিস্তানের দুর্বার আন্দোলনের মুখে তারা বারবার পিছু হটতে বাধ্য হয়। তাই আমরা সহসাই বলতে পারি ২১ মানে মাথা নত না করা এক রক্তাক্ত ইতিহাস। যার হাত ধরে আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও লাল সবুজের পতাকা। 

পরিশেষে, আমি আবারও সকল ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করে ও উপস্থিত সকলকে সালাম জানিয়ে এবং সকলের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে আমার বক্তব্য থেকে এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।

কত সাল থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করা হচ্ছে ?

২০০০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে "২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে পালন করা হচ্ছে। সেই থেকে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত সকল দেশ যথাযোগ্য মর্যদায় দিনটি পালন করে আসছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ দিবস কবে পালন করা হয় ?

ভাষা শহীদদের মহান আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে ১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো শহীদ দিবস পালন করে। ঐদিন দেশের সর্বস্তরের মানুষ খালি পায়ে শোভাযাত্রা করে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে দশটি বাক্য।

বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য একটি দিন হল একুশে ফেব্রুয়ারি। বাঙালি জাতি এই দিনটিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে উদযাপন করে। নিম্নে একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে দশটি বাক্য দেওয়া হলোঃ

১। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির জীবনে একটি অত্যন্ত স্মরণীয় দিন।

২। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে একাধারে শোক, শক্তি ও গৌরবের দিন।

৩। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত ও জব্বার সহ নাম না জানা অনেকেই।

৪। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা হওয়াই বিশ্ববাসীর কাছে বাঙালি জাতি আজ অত্যন্ত সুপরিচিত।

৫। একুশে ফেব্রুয়ারি সমস্ত বাঙালি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

৬। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরপরই পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার আমাদের ওপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।

৭। তারা আমাদের মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চেয়েছিল।

৮। ভাষা শহীদদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারছি।

৯। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর  ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

১০। সকল ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই, যারা জীবন উৎসর্গ করে ছিলেন মায়ের ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য।

২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো।

১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় এবং এতে ১৮৮ টি দেশ এক বাক্যে সমর্থন জানালে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর ২০০০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটিকে জাতিসংঘের সদস্য দেশ সমূহে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়ে থাকে।

একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব।

একুশে ফেব্রুয়ারির সংগ্রামের যে চেতনা তা আজও বাঙালি মনে প্রেরণার শক্তি হিসাবে সদা জাগ্রত আছে। তাই বলা যায় আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসে যে চেতনার আবেগ মিশে আছে তা ধ্বংস করা এতটা সহজ নয়। একুশের মিছিল, একুশের স্লোগান, একুশের গান সেই অপশক্তিকে রুখে দিয়েছিল এবং ভবিষ্যতেও রুখবে বলে আমরা আশাবাদী। তাই বাঙালির জাতীয় জীবনে মহান একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব অত্যন্ত ব্যাপক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪