ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ে জানার জন্য বেশ চিন্তিত। ডাবের পানি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
ডাবের পানির পুষ্টিগুণ।
ডাবের পানি অত্যন্ত উপকারী অকৃত্রিম এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিহীন একটি প্রাকৃতিক পানীয়। ডাবের পানিতে প্রচুর মিনারেল থাকায় এই পানি পান করলে এক মুহূর্তেই শরীরে চাঙ্গা ভাব ফিরে আসে। ডাবের পানি তৃষ্ণা মিটানোর পাশাপাশি নানান পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। সর্বোপরি ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা অল্প কথায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশে খুব সহজে প্রাপ্ত ডাবের পানির গুনাগুন সম্পর্কে অনেকেরই জানা নেই। প্রতি ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে জলীয় অংশ ৯৫ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৩ গ্রাম, আমিষ ২.৩ গ্রাম, শর্করা ২.৪ গ্রাম, চর্বি ০.০১গ্রাম , আয়রন ০.১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৫০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ০.১১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ১০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ২.৫ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৫০ মিলিগ্রাম এবং খাদ্য শক্তি ২৩ কিলোক্যালরি থাকে।
ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা জেনে রাখুন।
শরীরের বাইরের সৌন্দর্য চর্চার পাশাপাশি এর ভেতরের যত্নেরও বেশ প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন নিয়মিত সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। আমাদের শরীরের ভেতর-বাহির দুটোই ভালো রাখে এমন একটি পানীয় হচ্ছে ডাবের পানি। হার্বস আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকের রুপবিশেষজ্ঞ আরফিন মৌসুমী প্রতিদিন একটি ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন। এতে আপনার শরীর হবে সুস্থ,ত্বক হবে সুন্দর ও কোমল। তাই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা হয় খালি পেটে জল, ভরা পেটে ফল। তাই সহসাই বলা যায় ডাবের পানির উপকারিতা ব্যাপক।
এছাড়াও নিয়মিত ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতাগুলো নিম্নে দেয়া হলোঃ
১। খাবার হজম হয়ঃ নিয়মিত ডাবের পানি খেলে খাবার খুব ভালোভাবে হজম হয়। ফলে শরীরে মেদ জমতে পারে না এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২। পেট পরিষ্কার করেঃ ডাবের পানি পেট পরিষ্কার রাখে। ফলে ব্রণ বা মুখের কালো দাগ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
৩। চুল পড়া বন্ধ করেঃ ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং সি থাকে। ফলে চুলের গোড়া মজবুত করে, চুল ওঠা বন্ধ করে। এছাড়াও ডাবের পানি মানব ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী।
৪। নখের ভঙ্গরতা দূর করেঃ ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। যা নখের ভঙ্গুরতা দূর করে, নখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
৫। চোখের নিচের কালো দাগ দূর করেঃ ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকায় চোখের নিচের কালো দাগ দূর করে এবং ঠোঁট ফাটা ও ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করে।
৬। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে। তাই নিয়মিত ডাবের পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
৭।ওজন কমায়ঃ ডাবের পানি খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। তাহলে ক্ষুধার প্রবণতা কমে যায় এবং মানুষ কম পরিমাণ খেতে অভ্যস্ত হয়। এতে করে শরীরের ওজন আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
৮। অতিরিক্ত গরমে পানি শূন্যতা দূর করেঃ গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরমের ফলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ ঘামের মাধ্যমে পানি বের হয়ে যায়। এতে করে শরীর পানি শূন্য হয়ে পড়ে। ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট থাকায় পানি শূন্যতা দূর করে এবং শক্তি বাড়ায়।
ডাবের শাঁসের উপকারিতা।
গরমের স্বস্তিতে ডাবের পানির কোন বিকল্প নেই। ডাবের পানির মত ডাবের শাঁসও বেশ উপকারী। ডাবের শাঁসে যে উপকারী গুণগুলো রয়েছে সেগুলো হলঃ
১। ডাবের শাঁস ওজন কমাতে সাহায্য করে।
২। ডাবের শাঁস খাদ্য হজমে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৩। ডাবের শাঁস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৪। ডাবের শাঁস মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
৫। ডাবের শাঁসে তাৎক্ষণিক এনার্জি পাওয়া যায়।
৬। ডাবের শাঁসের তৈলাক্ত পদার্থ হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
৭। ডাবের শাঁসে ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৮। ডাবের শাঁস শরীরের গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ করে।
ডাবের পানি সংরক্ষণের উপায়।
গরম পানিতে ফুটানো কাঁচের বোতলে ডাবের পানি ভর্তি করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করা যায়। এই প্রক্রিয়ায় ডাবের পানি ৬ থেকে ৭ মাস সংরক্ষণ করা যায়।
ডাবের পানি খেলে কি রক্তচাপ বাড়ে ?
ডাবের পানিতে সোডিয়াম থাকে। যা রক্তচাপ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। তাই যাদের রক্তচাপ একেবারে কম তারা রক্তের চাপ বাড়াতে ডাবের পানি খেতে পারেন।
ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম।
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে ডাবের পানি পান করা যাবে কি ?
হ্যাঁ। পান করা যাবে। চিকিৎসকের মতে, প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর আধা লিটার স্যালাইন পানি পান করতে হবে। এছাড়াও তরল পদার্থের মধ্যে চিড়ার পানি, ভাতের মাড় এবং ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে।
শেষ কথাঃ
পানির অপর নাম জীবন। তবে সেটা যদি ডাবের পানি হয় তাহলে আরও উত্তম। তাই যথার্থই বলা যায় ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা অবর্ণনীয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url