তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য বেশ চিন্তিত। অত্যন্ত পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ টক জাতীয় একটি ফল হচ্ছে তেঁতুল। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।

তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।

তেঁতুল কি ? 

তেঁতুলের বৈজ্ঞানিক নাম TAMARINDUS INDICA। এটি এক জাতীয় টক ফল বিশেষ। যার নাম শুনলেই জিভে জল এসে যায়। মেয়েদের কাছে অত্যন্ত লোভনীয় একটি ফল। তেঁতুল পছন্দ করে না এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া ভার। তেঁতুল গাছ বৃহৎ এবং সুদৃশ্য চিরসবুজ বৃক্ষ। তেঁতুলের আদি নিবাস সম্ভবত আফ্রিকার সাভানা অঞ্চলে। তবে সুদান থেকে বীজের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর বংশবিস্তার হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।

 তেঁতুলের পুষ্টিগুণ।

তেঁতুল অত্যন্ত পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি ফল। তেঁতুলে প্রায় সব ধরনের ভিটামিন বা খাদ্য উপাদান রয়েছে। তবে তেঁতুলে যে ভিটামিনগুলো সবচেয়ে বেশি রয়েছে সেগুলো হলো ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, থায়ামিন,রিবোফ্লাভিন  এবং নিয়াসিনের মত প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শুধু কি তাই ? এগুলোর পাশাপাশি তেঁতুলে আরও যে উপাদানগুলো রয়েছে সেগুলো হলো ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার ইত্যাদি।

জেনে রাখুন তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা।

টক মিষ্টি তেঁতুল পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। খাবারের স্বাদ বাড়াতে তেঁতুলের জুড়ি নেই। ফুচকা ও চটপটির স্বাদ বাড়িয়ে দেয় তেঁতুল গোলা পানি। শুধু খাবারের স্বাদ বাড়াতে নয় বরং স্বাস্থ্যের যত্নেও তেঁতুলের কোন তুলনা হয় না। প্রাচীনকাল থেকে ঔষধি গুনে ভরপুর তেঁতুল নানা চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতিদিন কেউ যদি অল্প অল্প করে তেঁতুল খায় তাহলে সে অনেক ধরনের রোগ থেকে প্রতিকার পায়। নিম্নে তেঁতুলের খাওয়ার উপকারিতার কথা বলা হলোঃ

১। হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতেঃ তেঁতুল রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।কোলেস্টেরলের  সমস্যায় জর্জরিত রোগীর নিয়মিত তেঁতুল খেতে হবে। হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে তেঁতুল খাওয়ার উপকারীতা ব্যাপক।

২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ ঠান্ডা লাগা এবং সর্দি কাশি থেকে রেহাই পেতে কুসুম কুসুম গরম পানিতে তেঁতুল আর গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে ব্যাপক উপকার পাওয়া যায়। তেঁতুলে থাকা ভিটামিন সি এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতার কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।

৩। ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ তেঁতুলে থাকা হাইড্রোক্সি সাইট্রিক এসিড শরীরের চর্বি জমতে দেয় না। এছাড়াও এই এসিড নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা বাড়িয়ে ক্ষুধা কামাতে সাহায্য করে। ফলে ঘন ঘন খাওয়ার প্রবণতা কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৪। চুল ও ত্বকের যত্নেঃ নিয়মিত তেঁতুল খেলে চুল ও ত্বকের যত্নে আলাদা কোনো প্রসাধনীর দরকার হয় না। তেঁতুলে থাকা ভিটামিন সি ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এছাড়াও চুলের যত্নের তেঁতুলের ভূমিকা অপরিসীম।

৫। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ তেঁতুলে থাকা এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।  কেউ যদি নিয়মিত তেঁতুল খায় তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৬। হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ নিয়মিত তেঁতুল খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল। যার ফলে তেঁতুল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।

৭। ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণ এন্ট্রি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকায়  ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

তেঁতুল কখন খেতে হয়।

নানা গুনে গুণান্বিত তেঁতুল বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে বর্তমানে তেঁতুল ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও হাত-পা জ্বালাপোড়া রোগী তেঁতুল খেলে খুব সহজেই উপকার পান। পাঁকা তেঁতুল রাত্রে ভিজিয়ে সকালে শুধু পানি খেতে হবে। তাহলে অনেক রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।

তেঁতুল খেলে কি বীর্য পাতলা হয় ?

হ্যাঁ। তেঁতুল খেলে বীর্য পাতলা হতে পারে। তেঁতুলে থাকা ট্যানিন নামক পদার্থটি বীর্যপাতের সময় বীর্যকে জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে। ফলে খুব তাড়াতাড়ি বীর্যপাত হয়। এছাড়াও তেঁতুলে থাকা অ্যাসিড বীর্য নালীতে প্রদাহ বা ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।

তেঁতুল খেলে কি রক্ত পানি হয়ে যায় ?

তেঁতুল রক্তের ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে। তবে তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায় বা বুদ্ধি কমে যায় এগুলো ধর্মীয়  কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। শুধু তাই নয় তেঁতুল রক্ত পরিষ্কার করে এবং চিন্তা করার ক্ষমতা বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়। তাই তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা অনেক।

মেয়েদের তেঁতুল খেলে কি হয় ?

তেঁতুল খেতে কম-বেশি সবাই পছন্দ করে। তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা একটু বেশি পছন্দ করে। তেঁতুল খেলে মেয়েদের কোন শারীরিক ক্ষতি হয় না বরং তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা অনেক । মেয়েরা তেঁতুল খেলে মাসিক বন্ধ বা সন্তান ধারনের কোন সমস্যা হয় না। তেঁতুল খেলে মেয়েদের ত্বক খুব উজ্জ্বল হয় এবং শরীর স্লিম থাকে। এছাড়াও মুখের রুচি বৃদ্ধিতে তেঁতুলের কোন বিকল্প নেই। তাই মেয়েদের জন্য তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা অনেক।

তেঁতুলের ভেষজ গুণ।

তেঁতুল ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ একটি টক জাতীয় ফল। ইউনানী, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথিক এবং অ্যালোপ্যাথিক ঔষধের কাঁচামাল হিসাবে তেঁতুল বেশ সমাদৃত। পাঁকা ফল হৃদরোগের জন্য উপকারী ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তেঁতুলের সাথে রসুন মিশিয়ে খেলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।  তেঁতুল খেলে প্যারালাইসিস রোগীর অনুভূতি বাড়ে। এছাড়াও তেঁতুলে থাকা টারটারিক এসিড হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। শুধু কি তাই ? তেঁতুলের তৈরি আচার আমাদের দেশের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখরোচক খাবার।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪