বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে জেনে রাখুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস" কখন, কিভাবে পালন করবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। ভালবাসার মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করে দেয়া অকৃত্রিম ভালোবাসায় ভরপুর "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস"। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব কখন, কিভাবে আপনারা এই "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস" উদযাপন করবেন।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে জেনে রাখুন

প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস" সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।

 ১৪ ই ফেব্রুয়ারি কি দিবস ?

১৪ ই ফেব্রুয়ারি "ওয়ার্ল্ড ভ্যালেন্টাইন'স ডে" বা "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস"। এটি যুবক - যুবতীদের জন্য একটি বার্ষিক উৎসব বা মহা আনন্দের দিন। বর্তমান সময়ের যুবক - যুবতীরা বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই দিনটি মহা উৎসবে পালন করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রেম, ভালবাসা আর অনুরাগ, বিরাগের মধ্যে দিয়ে দিনটি তারা মহা ধুমধামে পালন করে।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের জনক কে ?

১৪ ই ফেব্রুয়ারি "ভ্যালেন্টাইন'স ডে"। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন আজ। এদিনে বাঙালি মনে মূর্ছনা ছড়ায় ভালোবাসা। এই দিনটিকে বিশ্ববাসি" বিশ্ব ভালোবাসা দিবস" হিসাবে পালন করে। প্রেমিক- প্রেমিকা, বন্ধু-বান্ধব, স্বামী-স্ত্রী, ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ মানুষেরা এই দিন একে অন্যকে তাদের ভালোবাসার অনুভূতি জানায়। বর্তমান সময়ে দিনটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের জনক পোপ সেন্ট জেলাসিউ।

ভ্যালেন্টাইন'স ডে এর ইতিহাস।

২৬৯ সালে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে ইতালির রোম নগরীতে একজন খ্রিস্টান পাদ্রী বাস করতেন। যিনি পেশায় একজন চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের জন্য নয় বরং অনেক মেয়ের সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগে অত্যাচারী রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। বন্দি অবস্থায় তিনি একজন কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়ে জুলিয়াকে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলেছিলেন এবং ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।

 দৃষ্টিহীন মেয়ের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বহুগুনে বেড়ে যায়। এতে রাজা প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত ও ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তিনি তার প্রেমিকা জুলিয়াকে উদ্দেশ্যে করে লিখেছিলেন "ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন" অর্থাৎ" ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন"। সেই দিনটি ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২৭০ সাল।

 অতঃপর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ৪৯৬ সালে জেলাসিউ প্রথম "জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন" স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে "ভ্যালেন্টাইন দিবস" হিসাবে ঘোষণা  করে। ভালোবাসা মানে সীমাহীন আকাশ। অসীমের তার গভীরতা। সেই থেকে আজও দিনটি " বিশ্ব ভালোবাসা দিবস" হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশসহ প্রাচ্যের দেশগুলোতে এই দিনটি  মহাসমারোহে পালন করা হচ্ছে।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস পালন করা হয় কেন ?

এ দিনটিতে বাসন্তী মোহে মুগ্ধতা ছড়ায় প্রাণের আকুতি। যুগল প্রাণে জাগরিত হয় তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। তাই ভালোলাগা ভালোবাসার অনুভূতি মানুষের সহজাত। কিন্তু সহজাত এই অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে অনেককে জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে।  তাই ভালোবাসা নামের সহজাত এই অব্যক্ত অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন মূলতঃ তাদের মহিমান্বিত করতেই প্রতি বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস" পালন করা হয়ে থাকে। যার মূল ভূমিকায় ছিলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। 

অত্যাচারী রোমান সম্রাট নানা অজুহাতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে  কারাবন্দি করেন। কারাবন্দি থাকা অবস্থায় একজন কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসা করে তিনি দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এতে করে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক বেড়ে যায়। এতে তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। দিনটি ছিল ২৭০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।

 অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিও প্রথম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে "ভ্যালেন্টাইন দিবস" ঘোষণা করেন। সেই থেকে আজও দিনটি সারা বিশ্বে " বিশ্ব ভালোবাসা দিবস" হিসাবে পালন করা হয়ে থাকে। শুধু কি তাই ? দিনটি বর্ণিল হয়ে ওঠে নারী- পুরুষের হলুদ, লাল, সাদা, বেগুনি আর গোলাপি রঙের বিভিন্ন পোশাকে। আর সারা শরীরে লতার মতো জড়িয়ে থাকে বিভিন্ন রঙের রঙিন বাহারী ফুল।

ভ্যালেন্টাইন ডে কবে থেকে পালন করা হয় ?

খ্রিস্টীয় ৪৯৬ সাল থেকে পোপ সেন্ট জেলাসিও প্রথম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন স্মরণে দিবসটি পালন করেন। সেই থেকে আজও দিনটি পরস্পরের প্রতি প্রেম ভালবাসার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে ১৯৮০ সালের পর থেকে দিনটি পালন করা হয়। তবে ১৯৯৩ সাল থেকে দিবসটি বাংলাদেশের তরুণ সমাজের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

 পাশ্চাত্য সাংস্কৃতি এবং বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি পহেলা ফাগুন একই দিনে হওয়াই বাংলাদেশের মানুষের কাছে দিবসটি এক ভিন্নমাত্রা যুক্ত করেছে। যার ফলে এই বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফুল, কার্ড, চকলেট ও শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয় একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। কেবল তরুণ- তরুণী নয়, সব বয়সী মানুষের প্রাণে ভালোবাসা সঞ্চারিত হয়  বিশেষ এই দিনটিতে।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে জেনে রাখুন ভালো লাগবে।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডে, যে দিনটিকে বিশ্ববাসী "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস" হিসাবে পালন করে। প্রেমিক-প্রেমিকা,বন্ধু-বান্ধব,স্বামী-স্ত্রী,ছাত্র-ছাত্রী,শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একে অন্যের প্রতি ভালবাসা জানাই এই দিনে। দিনটিকে বর্তমানে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়ে থাকে।

কথিত আছে, প্রাচীন রোমে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেবদেবীর রানী জুনোর সম্মানে ছুটির দিন। সে সময় জুনোকে নারী ও প্রেমের দেবী মনে করা হতো। কারো কারো মতে, এটিই ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবস হওয়ার মূল কারণ। আবার কেউ কেউ বলেন, সম্রাট ক্লডিয়াস ২০০০ সালে বিয়ে প্রথা নিষিদ্ধ করেন। তিনি মনে করেন যুবকরা বিয়ে করলে যুদ্ধে যাবে কে ?

 সম্রাটের এই অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদ করেন এক যুবক। যার নাম ভ্যালেন্টাইন্স। সম্রাট একথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে যুবকের মৃত্যুদণ্ড দেন। যার ফলে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভোর বেলায় তার মাথা কেটে ফেলা হয়। ভালবাসার জন্য ভ্যালেন্টাইন্সের এই আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে তখন থেকেই দিবসটিকে "ভ্যালেন্টাইন্স দিবস" হিসাবে পালন করা হয়।

এছাড়াও অনেকে মনে করেন, প্রাচীন রোমে ভ্যালেন্টাইন্স নামে একজন চিকিৎসক ছিলেন। যিনি মানব সেবা করতেন। তিনি একদিন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। প্রাচীন রোমে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করা তখন অপরাধ ছিল এবং এই ধর্মে বিশ্বাসীদের শাস্তি দেওয়া হতো। একদিন রোমের এক কারাপ্রধান তার অন্ধ মেয়েকে চিকিৎসার জন্য ভ্যালেন্টাইন্স এর কাছে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি তাকে কথা দিয়েছিলেন তিনি সাধ্যমতো মেয়েটির চিকিৎসা করবেন।

 মেয়েটির চিকিৎসা চলমান ছিল। এমন সময় হঠাৎ একদিন সম্রাটের সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইন্সকে বেঁধে নিয়ে চলে যায়। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার অপরাধে ২৭০ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি সম্রাটের আদেশে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ডের আগে ভ্যালেন্টাইন্স অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন। হত্যার পর কারাপ্রধান চিরকুটটি মেয়েটিকে দিয়েছিলেন। যাতে লেখা ছিল "ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইনস"

মেয়েটি চিরকুটের ভিতর বসন্তের হলুদ ফুলের সুন্দর রং দেখতে পেয়েছিলেন। কারণ এরই মধ্যে মেয়েটি দৃষ্টি ফিরে পেয়েছিলেন। ভালোবাসার এ অমর কীর্তির জন্য ৪৯৬ সালে জেলাসিউ ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে "ভ্যালেন্টাইন্স দিবস" হিসাবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে দিনটি আজ পর্যন্ত "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস" হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে ইসলাম কি বলে 

একে অপরের প্রতি ভালবাসা থাকা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা মুমিন হবে, আর তোমরা মমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পর একে অপরকে ভালো না বাসবে। 

কিন্তু আজ বিশ্ব ভালবাসা দিবস নামে যে নির্লজ্জ দিবস পালন করা হচ্ছে সেটি ইসলামে সম্পূর্ণ নিষেধ। বিয়ের আগে তরুণ- তরুণীদের পরস্পরের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, কথা- বার্তা, মেলামেশা, প্রেম- ভালোবাসা ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণ হারাম। ইসলামে কোরআন হাদিসের দৃষ্টিতে ভালোবাসা কেবলমাত্র বিয়ের পরেই।

 বিয়ের পরে স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে যে আবেগঘন ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তাতে সওয়াব ও কল্যাণ নিহিত আছে। বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, নোংরামিতে ভরপুর বর্তমান যুগের ভালোবাসা ইসলাম সমর্থন করে না। শরিয়াহ মোতাবেক ইসলামে এটি মহাপাপ। কাজেই এই অপসংস্কৃতির কাছ থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪