চিয়া সিডের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন
চিয়া সিড কি ?
চিয়া সিড হচ্ছে মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিসপানিকা উদ্ভিদের বীজ। অত্যন্ত উপকারী এই বীজটির আদি জন্মস্থান পশ্চিম ও মধ্য আমেরিকা। সেখানকার প্রাচীন আদিবাসী অ্যাজটেক জাতি চিয়া বীজ নিয়মিত খেতেন। প্রাচীন মায়া ও অ্যাজটেক জাতি চিয়া বীজকে সোনার চেয়েও দামি মনে করতেন। তারা বিশ্বাস করতো এটা তাদের শক্তি ও সাহস যোগায়। তারা মনে করতেন চিয়া সিডের উপকারিতা অসাধারণ। চিয়া সিড সব ধরনের আবহাওয়ায় জন্মাতে পারে। এতে পোকামাকড়ের তেমন আক্রমণ হয় না বললেই চলে। অনেকটা ডিম্বাকৃতির ধূসর বর্ণের সাদা কালো দাগ যুক্ত। চিয়া সিড দেখতে অনেকটা ছোট আকারের হয়।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম।
চিয়া সিড অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। চিয়া সিড যে কোনো ফলের জুসের সাথে খাওয়া যায়। শুধুমাত্র পানিতে ভিজিয়েও চিয়া সিড পান করা যায়। চিয়া সিডের নিরপেক্ষ স্বাদের জন্য সব ধরনের খাবারের সাথে খাওয়া যায়। চিয়া সিড রাত্রে পানিতে ভিজিয়ে সকালে পান করতে হয়। এছাড়াও আপনি চাইলে চিয়া সিড কুসুম গরম পানিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাত্রে ঘুমানোর আগে খেতে পারে।
চিয়া সিডের উপকারিতা জেনে রাখা ভালো।
চিয়া সিড পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে অন্যতম। যে কোন বীজ জাতীয় খাবারই শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিম্নে চিয়া সিডের উপকারিতার কথা বলা হলোঃ
১। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ পুষ্টিবিদদের মতে চিয়া সিডে থাকা ওমেগা -৩ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
২। কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করেঃ চিয়া সিড শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। যা মানুষকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
৩। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণঃ চিয়া সিড রক্তে ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখে। যাতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
৪। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে আরো শক্তিশালী করে।
৫। ওজন কমায়ঃ চিয়া সিড শরীরের মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করে অতিরিক্ত ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে।
৬। হাড়ের সুরক্ষাঃ চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকায় হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় দারুণ কাজ করে।
৭। কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ চিয়া সিড কোলন পরিষ্কার রাখে। যার ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে।
৮। বর্জ্য পদার্থ বের করেঃ চিয়া সিড শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। যার ফলে শরীরে এসিডিটির কোন সমস্যা থাকে না।
৯। জয়েন্টের ব্যাথা কমায়ঃ চিয়া সিড হাটু ও মাজার ব্যাথাসহ যে কোনো জয়েন্টের ব্যথা কমায়।
১০। ত্বকের সুরক্ষাঃ চিয়া সিড ত্বক সুন্দর রাখে। এছাড়াও চুল ও নখ সুন্দর রাখতে চিয়া সিড দারুন কাজ করে।
সত্য কথা বলতে কি এত অল্প কথায় চিয়া সিডের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না।
চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভালো ?
চিয়া সিড হলো চিয়া বীজ থেকে প্রাপ্ত একটি উপাদান। যা শারীরিক সুস্থতার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। চিয়া সিড কিডনির জন্য অসম্ভব রকমের একটি ভালো খাদ্য উপাদান। চিয়া সিড ফাইবার ও প্রোটিনের উৎস হিসাবে কাজ করে, কিডনির স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। কিডনির যাবতীয় সমস্যায় চিয়া সিডের উপকারিতা ব্যাপক।
চিয়া সিড খেলে কি ত্বক সুন্দর হয় ?
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে চিয়া সিডের দারুন ভূমিকা রয়েছে। চর্বি কমাতে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিয়া বীজ ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। চিয়া বীজ শুধু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করে না ত্বক পরিচর্যাতেও দারুন ভূমিকা পালন করে। ত্বকের ভিতর থেকে প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য ফেরাতে এবং সকল কালো দাগ দূর করতে মহাঔষধের মত কাজ করে। তাই ত্বকের যত্নে চিয়া সিডের উপকারিতা অবর্ণনীয়।
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম।
চিয়া সিড মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাদ্য উপাদান। ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ সৈয়দা শিরিনা স্মৃতি জানান, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এবং রাত্রে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানির মধ্যে দুই চা চামচ চিয়া সিড এবং সমপরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে খেতে হবে। এতে করে ভালো ফল পাওয়া যাবে। অর্থাৎ ওজনতো কমবেই সেই সাথে পেটও ভর্তি থাকবে। তবে খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে অবশ্যই পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তাই ওজন কমাতে চিয়া সিডের উপকারিতা অনেক।
চিয়া সিডের বাংলা নাম কি ?
চিয়া সিডের বাংলা নাম হুরহুরীয়া।
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ।
আজ কাল অনেকেই স্বাস্থ্য নিয়ে বেশ সচেতন। বিশেষ করে করোনার পর থেকে এই স্বাস্থ্য সচেতনতা আরও বহুগণ বেড়েছে। তাই স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাদ্য তালিকায় বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার চিয়া সিড।
চিয়া সিডে আছে দুধের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, পালংয়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি আয়রন, মুরগির চেয়ে তিনগুণ বেশি প্রোটিন, এবং সামুদ্রিক মাছ স্যামনের এর চেয়ে তিনগুণ বেশি ওমেগা -৩।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url