কলা গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা কলা গাছের পরিচর্যা কখন, কিভাবে করবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। কলা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব আপনারা কখন, কিভাবে কলা গাছের পরিচর্যা করবেন।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি কলা গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি । বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
কলা কি ?
কলা বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত সুপরিচিত একটি ফল। এটি সাধারণত উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলের একটি ফসল। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই যে কলার উৎপত্তিস্থল সেটি সবারই জানা। আমাদের দেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই কলা অন্যতম প্রধান ফল। বাংলাদেশের উঁচু ও পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে শত শত বছর ধরে কলার চাষ হয়ে আসছে। পার্বত্য এলাকার পাহাড়ি বা বনকলা খুবই মিষ্টি হয়। পৃথিবীর বহু দেশে কলা প্রধান অর্থকরী ফসল। তাই খনার বচনে আছে," কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত"
কলার প্রকারভেদ।
কলা MUSACEAC পরিবারের একটি ফলজ উদ্ভিদ। কলার বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। তবে সবগুলো প্রজাতির উৎপত্তি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায়। বাংলাদেশে প্রায় ১৯ জাতের কলা রয়েছে। পার্বত্য এলাকায় বাংলা কলা, পাহাড়ি কলা, বন কলা এবং মামা কলা নামের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে। তবে দিন দিন কলার জাতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । গাছের বৈশিষ্ট্য অনুসারে বাংলাদেশের কলা গাছকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ লম্বা জাতের গাছ ও খাটো জাতের গাছ। পাকা অবস্থায় খাওয়ার জন্য কলার জাত চার প্রকার যথাঃ
*বীজমুক্ত কলাঃ সবরি, অমৃত সাগর, দুধ সাগর, অগ্নিশ্বর ইত্যাদি।
* আংশিক বীজযুক্ত কলাঃ চম্পা, চিনি চম্পা, কবরী, জাব কাঠালী ইত্যাদি।
* বীজযুক্ত কলাঃ গোমা, সাঙ্গি, আইটা ইত্যাদি।
*আনাজি কলাঃ বর ভাগ্নে, বেহুলা, মন্দিরা, বিয়ের বাতি ইত্যাদি।
কলার পুষ্টিগুণ।
কলা সবারই প্রিয় একটি ফল। কলা বিভিন্ন পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ একটি ফল। পাকা কলাতে আছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, সিয়ামিন, খনিজ, রিবোফ্লাভিন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। কলা ক্যালরির একটি ভালো উৎস। কলায় থাকা এ সমস্ত ভিটামিন শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।
কলা খাওয়ার উপকারিতা।
কলা শুধু খেতেই মজাদার নয়,পুষ্টি গুনেও কলার জুড়ি মেলা ভার। কলায় প্রচুর পরিমাণ ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী। নিম্নে কলার কয়েকটি উপকারের কথা বলা হলোঃ
১। হজমের সমস্যায় এবং কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে কলার কোন বিকল্প নেই। কলায় থাকা ফাইবার এ সব সমস্যার সমাধানে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
২। ক্ষুধা নিবারণে কলা খান। এতে ওজন বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আবার কলায় দ্রুত পেটও ভরে।
৩। কলায় থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৪। কলায় প্রচুর পটাশিয়াম রয়েছে। যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে।
৫। কলায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম হৃদরোগের ঝুকি কমায়।
৬। নিয়মিত কলা খেলে কিডনির কোন সমস্যা হয় না।
৭। দ্রুত শক্তি পেতে চাইলে প্রতিদিন নিয়মিত কলা খান।
৮। এন্টিঅক্সিডেন্টের একটি অন্যতম উৎস হলো কলা। নিয়মিত কলা খেলে ইমিউনিটিসিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীর সতেজ থাকে। চকচকে ত্বক এবং উজ্জ্বল চুলের জন্য কলার কোন বিকল্প নেই।
কলা গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় কখন ?
প্রচুর শীত এবং বর্ষাকাল ছাড়া বছরের যে কোন সময়ই কলার চারা রোপন করা যায়। তবে কলার চারা লাগানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে আশ্বিন ও কার্তিক মাস। এ সময় চারা রোপন করলে ব্যাপক ফলন হয়। এছাড়াও মাঘ, চৈত্র এবং বৈশাখ মাসেও কলার চারা রোপন করা যায়। শুধু কলা গাছ রোপন করলেই হবেনা। কলা গাছের পরিচর্যা সঠিকভাবে করতে হবে। তবেই ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
কলা গাছের পরিচর্যা বিষয়ে জেনে রাখুন।
কলা গাছের পরিচর্যা বিষয়ে আমরা মোটামুটি সকলেই কম-বেশী জানি। তবে কলার পর্যাপ্ত ফলন পেতে হলে আমাদেরকে কলা গাছের পরিচর্যা বিষয়ে খুব ভালোভাবে জানতে হবে। চারা রোপনের পর মাটিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে পানি সেচ দিতে হবে। শুকনো মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর পানি সেচ দিতে হবে। তবে বর্ষার সময় বাগানে যেন পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রত্যেক সেচের পূর্বে টিএসপি, এমওপি এবং ফসফরাসযুক্ত সার দিতে হবে। পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য মাঝে মধ্যে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
কলার সবচেয়ে ভালো কীটনাশক কোনটি ?
যে কোনো ফসলের জন্য কীটনাশক এর ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। কলার সবচেয়ে ভালো কীটনাশক হচ্ছে ইমিডাক্লোপিড। পোকামাকড়ের হাত থেকে কলা এবং কলার গাছকে রক্ষা করতে হলে ইমিডা ক্লোপিড জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলিলিটার কীটনাশক মিশিয়ে প্রতি পাঁচ শতক জমিতে সঠিকভাবে স্প্রে করতে হবে। এছাড়াও কৃমি রোগ দমনে বছরে তিন থেকে চার বার ফুরাডান ৫ জি প্রয়োগ করতে হবে।
কলা মোটা করার পদ্ধতি।
কলা মোটা করার অন্যতম পদ্ধতি হচ্ছে জিব্রেলিক এসিডের ব্যবহার। দিনের ঠান্ডার সময় জিব্রেলিক এসিড পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার ৬ ঘন্টার মধ্যে যদি বৃষ্টিপাত হয়, তবে জিব্রেলিক এসিড আবার স্প্রে করতে হবে। এর ফলে কলা খুব অল্প সময়ের মধ্যে মোটা হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url