ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কখন, কিভাবে করবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। ফসল উৎপাদনের  রাসায়নিক সার ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব কখন, কিভাবে আপনারা ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ব্যবহার করবেন।

ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় আর্টিকেল পাঠক,  আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ব্যবহার সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।

 সার কি ?

সার হলো প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে প্রাপ্ত কোনো উপাদান যা মাটিতে বা উদ্ভিদের টিস্যুতে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। যার মাধ্যমে উদ্ভিদ বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান পেয়ে থাকে। সার গাছপালা বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।

রাসায়নিক সার কি ?

কৃত্রিম পদ্ধতিতে এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যে সার উৎপাদন করা হয় তাকে রাসায়নিক সার বা অজৈব সার বলে। যেমন ইউরিয়া, টি এস পি, এম ও পি, অ্যামোনিয়াম সালফেট, সুপার ফসফেট ইত্যাদি হলো রাসায়নিক সার বা অজৈব সারের উদাহরণ। উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান রাসায়নিক সারে প্রচুর পরিমাণে থাকে এবং এগুলো খুব সহজলভ্য।

সার কত প্রকার ও কি কি ?

সার বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কৃষক আদিকাল থেকে   করে থাকে। সার মাটির পুষ্টি উপাদান ফিরে পেতে সাহায্য করে। মিশ্রিত উপাদানের ওপর ভিত্তি করে সারকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ এক উপাদানের সার ও দুই বা ততোধিক উপাদানের সার।

 এছাড়াও সারকে আরও দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ জৈব সার ও অজৈব সার। গোবর ও কম্পোস্ট সার জৈব সার এবং ইউরিয়া, টি এস পি, এমওপি ইত্যাদি হলো রাসায়নিক সার বা অজৈব সার।

বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক সারের নাম ও কাজ ?

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। বাংলাদেশে ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ব্যাপক হারে ব্যবহার  হয়ে থাকে। আমাদের দেশে কৃষিতে মূলত ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, ডিএপি, জিপসাম এবং বোরন সার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর এক একটি সার এক এক রকম কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ইউরিয়া সারের কাজঃ

ইউরিয়া একটি নাইট্রোজেন সংবলিত রাসায়নিক সার। যা ব্যাপকভাবে ফসলি জমিতে ব্যবহার করা হয়। ইউরিয়া সারে নাইট্রোজেনের পরিমাণ ৪৬ শতাংশ। ইউরিয়া সার নাইট্রোজেন সরবরাহ করে গাছের শিকড় বৃদ্ধি এবং শাঁক সবজির পর্যাপ্ত পাতা, ডালপালা ও কান্ড উৎপাদনে সাহায্য করে। ইউরিয়া সার ক্লোরোফিল উৎপাদন করে গাছকে গাঢ় সবুজ বর্ণ প্রদান করে থাকে।

টিএসপি, ডিএপি বা ফসফেট জাতীয় সারের কাজঃ

টিএসপি এবং ডি এ পি এই দুইটি সার হলো ফসফেট জাতীয় রাসায়নিক সার বা অজৈব সার। ফসফেট জাতীয় সার কোষ বিভাজনে অংশগ্রহণ করে শর্করা উৎপাদন এবং আত্তীকরণের সাহায্য করে থাকে। গাছের মূল ও শিকড় গঠন এবং বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং গাছকে শক্তিশালী করে, ফলের পরিপক্কতা বৃদ্ধি করে।

এমওপি স্যারের কাজঃ

এমওপি সারে শতকরা ৫০% পটাশ থাকে। উদ্ভিদে শর্করা দ্রব্য পরিবহনে সাহায্য করে এবং আমিষ উৎপাদনে সাহায্য করে। এমওপি গাছের কাঠামো শক্ত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

জিপসাম স্যারের কাজঃ

জিপসাম আমিষ উৎপাদনে সাহায্য করে এবং গাছের বর্ণ সবুজ রাখতে ভূমিকা রাখে।

বোরন সারের কাজঃ

বোরন সার গাছের কোষ বৃদ্ধিতে এবং পাতা, কাণ্ড ও ফুলের রং আকর্ষণীয় করতে সহায়তা করে। পরাগরেণু সুস্থ, সবল রাখার মাধ্যমে বীজ উৎপাদনে সহায়তা করে এবং চিটা হওয়া বন্ধ করে থাকে। বোরন গাছের ফুল ও ফল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।

ভলো ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের ব্যবহারঃ

 ভালো ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের ব্যবহার অনস্বীকার্য। ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের ব্যবহার সঠিকভাবে করতে গেলে দুটি বিষয়ে নজর রাখা দরকার। একঃ ফসলের ধরন, ফসলের জীবনকাল এবং  ফলনের মাত্রার উপর ভিত্তি করে সারের মাত্রা ঠিক করা। দুইঃ সারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কোন সার কখন, কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা।

 তাই, ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে অধিক ফসল উৎপাদন এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়াই সবার কাম্য। তাই মাটির গুনাগুন পরীক্ষা করে সারের মাত্রা নির্ধারণ করা সবচেয়ে উত্তম। এছাড়াও ফসল উৎপাদনের রাসায়নিক সারের ব্যবহার কিভাবে করতে হবে সেগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সার সুপারিশ গাইড অনুযায়ী এবং অনলাইন সার সুপারিশ নির্দেশিকা সফটওয়্যার ব্যবহার করে সারের সঠিক মাত্রা জানা যেতে পারে।

সবচেয়ে ভালো সার কোনটি ?

সবচেয়ে ভালো সার হলো NPK বা নাইট্রোজেন ফসফরাস ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ সার। এটি মূলত তিনটি সারের মিশ্রণ। অর্থাৎ নাইট্রোজেন সবুজ পাতা ও ডালপালা তৈরিতে সহায়তা করে, ফসফরাস মূলের বিকাশে সহায়তা করে এবং পটাশিয়াম উদ্ভিদকে তাপ বা ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে।

উদ্ভিদের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কোন সার 

উদ্ভিদের দ্রুত বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশী সাহায্য করে ইউরিয়া সার। ইউরিয়া সার নাইট্রোজেন সরবরাহ করে শিকড় বিস্তার এবং পাতা, কান্ড, কুশি ও ডালপালা উৎপাদনে সহায়তা করে। এছাড়াও ক্লোরোফিল উৎপাদন করে গাছকে গাঢ় সবুজ বর্ণ প্রদানে সহায়তা করে।

ধান চাষে পটাশ সার ব্যবস্থাপনা।

ধান চাষে পটাশ সারের গুরুত্ব ব্যাপক। গাছের পুষ্টি উপাদান গুলির মধ্যে পটাশিয়াম অন্যতম। যার অভাবে গাছ তার জীবন চক্র পরিপূর্ণ করতে পারেনা। কৃষি গবেষকদের মতে, আধুনিক জাতের প্রতি টন ধান উৎপাদনে মাটি থেকে ২৪ কেজি পটাশিয়াম অপসারিত হয়। মাটির উর্বরতা হ্রাসের কারণ হলো অপসারিত পুষ্টি উপাদান পূরণ না করা।

পটাশ সারের গুরুত্বঃ

১। পটাশ সার গাছের শিকড় বৃদ্ধি করে এবং পাতার আকার বৃদ্ধি করে।

২। প্রতি ছড়ায় পুষ্ট দানার সংখ্যা বাড়ায় এবং দানার ওজন বাড়ায়।

৩। গাছের কাঠামো শক্তিশালী করে এবং প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকে ও কৃষকের আয় বাড়াতে সাহায্য করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪