আম গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা আম গাছের পরিচর্যা কিভাবে করবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। আম অত্যন্ত সুমিষ্ট একটি ফল। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব আপনারা কিভাবে আম গাছের পরিচর্যা করবেন।

আম গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি আম গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।

 আম কত প্রকার ও কি কি ?

আমকে ফলের রাজা বলা হয়। গ্রীষ্মকালের সবচেয়ে সুমিষ্ট ফল হচ্ছে আম। আমের বেশ কিছু জাত প্রচলিত আছে। নিচে আমের বহুল প্রচলিত জাতগুলোর নাম দেওয়া হলোঃ ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসাপাত, আম্রপালি, মল্লিকা, কাঁচামিঠা, মিস্ত্রিদানা ,তোতাপুরী, হাড়িভাঙ্গা, লখনা, বারোমাসি, অরুনা, সুবর্ণরেখা, আলফানসো, রানীপছন্দ, ব্যানানা ম্যাংগো, মিয়াজাকি ইত্যাদি।

আম গাছে সার প্রয়োগ ।

আম গাছের সঠিক বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত ফল পাওয়ার জন্য সারের কোন বিকল্প নেই। তাই প্রতিবছর সঠিক সময়ে নিয়মমতো সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম বছর প্রতি গাছে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম এমওপি এবং ২০০ গ্রাম ট্রিপুল সুপার ফসফেট প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বছর গুন করে সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। যেমনঃ দশ বছরের গাছ হলে ১০০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০০ গ্রাম এমওপি এবং ২০০০ গ্রাম ট্রিপল সুপার ফসফেট দিতে হবে।

এছাড়াও গাছের বয়স ভেদে পর্যাপ্ত পরিমাণ গোবর সার দিতে হবে। সমস্ত সারগুলো দুই ভাগে ভাগ করে অর্ধেক সার সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এবং বাকি অর্ধেক সার মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফল যখন মটর দানার মত হয়, তখন প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ দিতে হবে। তাহলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।

আম গাছে কীটনাশক স্প্রে করার নিয়ম।

যে কোনো কীটনাশক প্রয়োগ করার আগে অবশ্যই চারটি মূলনীতি মেনে চলতে হবে। এগুলো হলো সঠিক কীটনাশক নির্বাচন, সঠিক মাত্রা নির্ধারণ, সঠিক সময় নির্বাচন এবং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ। এই মূলনীতিগুলো মেনে চললে আম গাছের পোকা দমন করা সম্ভব। আমের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে হপার পোকা বা শোষক পোকা।

 এই হপার পোকা দমনের জন্য আমের মুকুল যখন তিন থেকে চার সেন্টিমিটার লম্বা হয় তখন প্রথমবার এবং আম যখন মটর দানার মত হয় তখন দ্বিতীয়বার প্রয়োগ করতে হয়। এই পোকা দমনে সাইপারমিথ্রিন জাতীয় কীটনাশক ১০ ই সি, ১০ লিটার পানিতে, ১০ মিলিলিটার কীটনাশক মিশিয়ে পুরো গাছে স্প্রে করতে হবে। তাহলে হপার পোকাসহ আম গাছের সব ধরনের পোকা দমন করা সম্ভব হবে।

আমের মুকুল আসার আগে আম গাছের পরিচর্যা।

মুকুল আসার আগের সময়টা আম গাছের পরিচর্যার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। মুকুল আসার আনুমানিক ৭ থেকে ১৫ দিন আগে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক একসাথে মিশিয়ে পুরো আছে স্প্রে করে দিতে হবে যেন সম্পূর্ণ গাছ ধুয়ে যায়। মুকুল আসা শুরু করলে কিছুই দিবেন না কেননা এ সময় পরাগায়ন হয়। এবার ফল মটর দানার মত হলে আবার একই পদ্ধতিতে কীটনাশক প্রয়োগ করবেন।এতে করে আমের ফলন অনেক গুণ বেড়ে যাবে।

মুকুল আসার পরে আম গাছের পরিচর্যা।

আমের মুকুল আসার পর শোষক বা হপার পোকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। এরা আমের কচি ডগা ও মুকুল থেকে রস চুষে খেয়ে নেয়। ফলে মুকুল শুকিয়ে ঝরে যায়। আরেকটি কারণে মুকুল আসার পর মুকুল ঝরে যায় সেটি হচ্ছে ছত্রাকের আক্রমণ। এ সময় পাউডারী মিলডিউ নামক ছত্রাকের কারণে আমের গুটি কালো হয়ে আস্তে আস্তে ঝরে যায়। এছাড়াও মুকুল ঝরে যাওয়ার আরো একটি বড় কারণ হলো জমিতে পানির অভাব। তাই প্রয়োজন মতো পানি সেচ দিতে হবে।

 এবার মুকুল আসার পর আমরা দেখব যে, মুকুল সম্পূর্ণরূপে এসেছে কিন্তু ফোটেনি । এমতাবস্থায় প্রতি লিটার পানিতে এক এমএল সাইপারমিথ্রিন ও আড়াই গ্রাম করে ছত্রাকনাশক পাউডার মিশ্রিত করে স্প্রে করতে হবে । সবশেষে আম যখন মটর দানার মত হবে তখন আর একবার একই হারে স্প্রে করতে হবে। তাহলে আমের  ভালো ফলন পাওয়া যাবে।

সবচেয়ে ভালো আম কোথায় চাষ হয়।

বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই কমবেশি আমের চাষ হয়ে থাকে। তবে এক এক এলাকায় এক এক ধরনের আমের চাষ ভালো হয়। আমাদের দেশে সবচেয়ে ভাল আম হয় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায়।

আমের রাজা কে ?

গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে আমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ কারণে আমকে ফলের রাজা বলা হয়। অপরদিকে আমের রাজা হচ্ছে ল্যাংড়া।

আমের এনথ্রাকনোজ রোগ কি ?

আমের এনথ্রাকনোজ  বা ফুসকা রোগ একটি ছত্রাক জনিত রোগ। এই রোগ হলে আমের ফলন খুব কম হয়।

 এ রোগের লক্ষণঃ

পাতা, বোঁটা, ডাল ,পুষ্পমুঞ্জরী ও আমে এ রোগ হয়।

পাতা ও ডালে বাদামী দাগ দেখা যায়।

আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে শুকিয়ে যায়।

আক্রান্ত আম ঝরে যায়।

প্রতিকারঃ

আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

বাগান পরিষ্কার রাখতে হবে।

বছরে দুবার সার প্রয়োগ করতে হবে।

এ রোগ ব্যাপক আকারে দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার প্রোপাকেনাজল ১০ থেকে ১২ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪