হাঁটু ব্যাথা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা হাঁটু ব্যথা কিভাবে দূর করবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। হাঁটু ব্যথা একটি দীর্ঘস্থায়ী জটিল সমস্যা। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব কিভাবে আপনারা হাঁটু ব্যথা সারাবেন।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি হাঁটু ব্যথা সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
হাঁটু ব্যাথা কেন হয় ?
ইদানিং প্রায়ই হাঁটু ব্যথার কথা শোনা যাচ্ছে। যে কোন বয়সেই এই ব্যথা হতে পারে। হাঁটু ব্যথার সাথে বার্ধক্যের তেমন কোন সম্পর্ক নেই। প্রথমত শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে হাঁটুতে ব্যথা হয়। আবার অনেকক্ষণ নিচে বসে কাজ করলেও হাঁটুতে ব্যথা হয়। তবে হাঁটু ব্যথা কমাতে শরীর চর্চার কোন বিকল্প নেই।
হাঁটু ব্যথার লক্ষণ বা উপসর্গগুলো কি কি ?
হাঁটু আপনার শরীরের সবচেয়ে বড় জয়েন্ট। যার সাথে হাড়, লিগামেন্ট, কাটিলেজ এবং টেন্ডন জড়িত। এ কারণে হাঁটু ব্যথা প্রায় পরিবর্তিত হয় গঠনজনিত কারণে। ফলে আপনার ব্যথার তীব্রতা কম বেশি হতে পারে।
হাঁটু ব্যথার লক্ষণ বা উপসর্গগুলো হলোঃ
১। লিগামেন্টের ক্ষতির কারণে সিঁড়ি ব্যবহারে অসুবিধা।
২। হাঁটু ভাঁজ করতে অসুবিধা।
৩। হাঁটু ফোলা এবং লাল ভাব হওয়া।
৪। হাঁটু প্রসারিত করতে অসুবিধা বোধ করা।
৫। শরীরের ওজন বিপরীত পায়ে স্থানান্তর করা।
হাঁটু ব্যথার কারণগুলো কি কি ?
হাঁটু ব্যথার নানাবিধ কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে বয়স জনিত হাড় ক্ষয় বা অষ্টিও আর্থ্রাইটিস। এছাড়াও লিগামেন্টে আঘাত পাওয়া, দুইটি হাড়ের মধ্যে দূরত্ব কমে যাওয়া ,অতিরিক্ত ওজন এবং বাতসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে হাঁটুতে ব্যথা হয়। সাধারণত পুরুষের তুলনায় মেয়েরা এই রোগে বেশি ভোগে।
হাঁটু ব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি ?
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের জোড়ায় ক্ষয় হতে থাকে। আর এটি মূলত হাঁটু ব্যথার মূল কারণ। এছাড়াও অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার কারণেও অনেককে হাঁটু ব্যথার সমস্যায় জর্জরিত হতে দেখা যায়। তবে হাঁটু ব্যথা কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
১। এসেন্সিয়াল অয়েলঃ শরীরের যেকোন জোড়ের ব্যথায় মালিশ অত্যন্ত উপকারী।এসেন্সিয়াল অয়েল এক্ষেত্রে ব্যাথা নিরাময়ে দারুন কাজ করে। এই তেল পেশি সিথিল করে আক্রান্ত স্থানের ব্যথা কমায়।
২। তাপ ও ঠান্ডা বরফঃ ব্যাথা নিরাময়ে গরম তাপ ও ঠান্ডা বরফ প্রয়োগ করা দুটোই ব্যাপক উপকারী। তবে ব্যথার ধারণ অনুযায়ী এ দুটোর যেকোনো একটি প্রয়োগ করতে হবে।বাতের ব্যথা নিরময়ে গরম তাপ দেওয়া এবং খেলাধুলা ও দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ার ব্যথায় ঠান্ডা বরফ প্রয়োগ করতে হবে।
৩। অ্যাপল সাইডার ভিনেগারঃ এর ভিতর থাকা প্রদানশক উপাদান বাতজনিত হাঁটু ব্যথায় বেশ উপকারী। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানিতে আধা কাপ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার পান করতে হবে। এভাবে নিয়মিত পান করলে ব্যাপক উপকার পাবেন।
৪। আদার নির্যাসঃ আদা হচ্ছে সর্ব রোগের দাদা। তাই আদার তেল বা সরাসরি আদা খাওয়া হাঁটুর ব্যথায় ভীষণ উপকারী।আদা প্রাকৃতিক প্রদাহ নাশক হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন সকাল বিকাল ২ কাপ আদা চা পান করলে বেশ উপকার পাবেন।
৫। হলুদঃ হলুদ ওষুধি গুনে ভরপুর প্রাচীন কাল থেকেই। হলুদে থাকা প্রদাহ নাশক উপাদান বারকিউমিন হাড়ের জোড়ার ব্যাথা এবং প্রদাহ সারাতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন এক গ্লাস পানিতে আদা ও হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে ১২ থেকে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে পান করতে হবে। এভাবে নিয়মিত পান করলে ব্যাপক উপকার পাবেন।
৬। ইপসম লবনঃ ইপসম লবণে থাকে ম্যাগনেসিয়াম ও সালফেট। যা ব্যথা নিরাময়ের কাজ করে এবং আক্রান্ত স্থানের ফোলা কমায়। গোসলের পানিতে বড় এক চামচ ইপসম লবণ মিশিয়ে আধাঘন্টা ডুবে থাকতে পারেন।এতে ভালো ফল পাবেন।
হাঁটু ব্যথা সারানোর ব্যায়ামঃ
হাঁটু ব্যথার সমস্যা এখন প্রতি ঘরে ঘরে। তবে মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা অনেক বেশি। চিন্তার কোন কারণ নেই, নিম্নে উল্লেখিত ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করলে এই সমস্যার সমাধান পাবেন।
১। স্ট্রেসিং এক্সারসাইজ করতে হবেঃ স্ট্রেসিং সকলেরই করা উচিত। তবে হাঁটু ব্যথার সমস্যায় এটি দারুন উপকারি। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট এই ব্যায়াম করতে হবে।
২। স্ট্রেন্থেনিং এক্সারসাইজ করাঃ এই সমস্যায় চুপচাপ বসে না থেকে প্রতিদিন ১৫ মিনিট স্ট্রেন্থেনিং এক্সারসাইজ করতে হবে। তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ব্যথা কমে যাবে।
৩। সাঁতার কাটাঃ সাতার কাটা একটি উত্তম ব্যায়াম। এটি নিয়মিত করলে শরীরের সকল অঙ্গের ব্যথা দূর হয়। প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট এই ব্যায়াম করতে হবে।
৪। হাঁটাচলা করাঃ হাঁটার মত সহজ-সরল ব্যায়াম পৃথিবীতে আর নেই। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। আপনার শরীরের সব ব্যথা চলে যাবে।
৫। যোগা, তাই চিঃ প্রাচীন ভারতীয়রা মনে করতেন, শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হচ্ছে ব্যায়াম। তাই নিয়মিত যোগা, তাই চি অভ্যাস করুন। আপনার শরীরের সব ব্যথা নিমিষেই হারিয়ে যাবে।
হাঁটু ব্যাথার চিকিৎসা।
হাঁটুর ব্যথায় বরফ কিংবা গরম পানি সেঁক বা গরম তাপ আপনাকে ব্যাপক আরাম দিতে পারে। তবে সেটার জন্য অবশ্যই আপনাকে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আঘাত জনিত হাঁটু ব্যথায় ঠান্ডা বরফ দিলে আপনি ব্যাপক আরাম পাবেন। তবে দীর্ঘদিনের বাত ব্যথায় বা আর্থ্রাইটিস জনিত ব্যথায় গরম পানির সেঁক সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
হাড়ের ক্ষয়জনিত কারণে হাঁটুতে ব্যথা হলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় রোগীর অস্থির সন্ধিতে ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। আবার অনেক সময় জীবনের শেষ চিকিৎসা হিসাবে হাঁটু প্রতিস্থাপনের দরকার হয়। তবে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রখা এবং দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন আনায়ন করতে পারলে হাঁটু ব্যথা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথার ওষুধের নাম কি ?
হাঁটু ব্যথা নিরাময়ে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। তবে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ঔষধ হলো ডিক্লোমল ট্যাবলেট। যা হাঁটুর ফোলা ভাব বা ব্যথায় দারুন কাজ করে।
হাঁটু ব্যথায় হোমিও চিকিৎসা।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সবচেয়ে কম খরচে জনপ্রিয় চিকিৎসা। রোগের লক্ষণ এবং রোগীর ওপর নির্ভর করে এই চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এটি একমাত্র উপায় যা রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলে। এজন্য একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। হাঁটু ব্যথার চিকিৎসায় কিছু প্রতিকার এখানে দেওয়া হলোঃ
ব্রায়োনিয়া অ্যালবাঃ যদি আপনার হাঁটা চলাফেরায় ব্যথা অনুভব হয়, তবে ব্রায়োনিয়া অ্যালবা দারুণ কাজ করে।
রাসটক্সঃ আবহাওয়া জনিত কারণে যদি আপনার হাঁটুতে ব্যথা অনুভব হয়, সেক্ষেত্রে রাসটক্স দারুন কাজ করে।
লাচেসিসঃ যদি হাঁটুর ব্যথা রিউমাটেড আর্থ্রাইটিস জনিত কারণে হয়, তবে লাচেসিস মহাওষুধ হিসাবে কাজ করে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url