ত্বকের যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা ত্বকের যত্ন কখন, কিভাবে করবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। ত্বক মানব দেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব আপনারা কখন, কিভাবে ত্বকের যত্ন নিবেন।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি ত্বকের যত্ন সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
ত্বক কি ?
ত্বক হচ্ছে মেরুদন্ডী প্রাণীর শরীরের বাইরের নরম আবরণ যা দেহকে আবৃত করে রাখে। এই ত্বক প্রাণী দেহের ভিতরের অংশগুলোকে রক্ষা করে। ত্বক মানব দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ। স্তন্যপায়ী প্রাণীর ত্বকে লোম বা ছোট ছোট চুল থাকে।
ত্বকের কাজ কি ?
ত্বক রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে এবং দেহ থেকে অতিরিক্ত পানি অপসারণ প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও ত্বক শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যক এবং ভিটামিন ডি উৎপাদক হিসেবে কাজ করে। প্রাণীভেদে ত্বক আলাদা আলাদা এবং একই প্রাণীতে অবস্থান ভেদে ত্বকের পুরুত্ব আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
ত্বক কত প্রকার ও কি কি ?
সুন্দর ত্বক সবাই চাই। এক এক জনের ত্বকে এক এক ধরনের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। তাই ত্বকের বৈশিষ্ট্যর উপর ভিত্তি করে ত্বক সাধারণত ৫ প্রকার যথাঃ
১। তৈলাক্ত ত্বক।
২। শুষ্ক ত্বক।
৩। সংমিশ্রণ ত্বক।
৪। সংবেদনশীল ত্বক।
৫। স্বাভাবিক ত্বক
ত্বক কত ধরনের ?
মানব দেহের ত্বক একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সবাই চাই এই অঙ্গটিকে আকর্ষণীয় রাখতে। ধরণ অনুযায়ী এক এক জনের ত্বক এক এক ধরনের হয়ে থাকে। তাই ধরন অনুযায়ী ত্বক তিন প্রকার যথাঃ
১। শুষ্ক ত্বক।
২। তৈলাক্ত ত্বক।
৩। সংবেদনশীল ত্বক।
ত্বক তন্ত্রের গঠন ও কাজ।
ত্বক হল শরীরের বৃহত্তম এবং প্রতিরক্ষামূলক অঙ্গ। যা শরীরের বাহ্যিক পৃষ্ঠকে আবৃত করে এবং প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রাথমিক বাধা হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ত্বক শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা, ট্রমা, প্যাথোজেন, অনুজীব এবং সব ধরনের বিষাক্ত পদার্থের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে। ত্বকের তিনটি স্তর রয়েছে যথাঃ
১। এপিডার্মিস।
২। ডার্মিস।
৩। হাইপোডার্মিস।
ত্বক সুন্দর রাখার পাঁচ অভ্যাস।
সুন্দর ত্বক একদিনে তৈরি হয় না। এর জন্য পরিশ্রম করতে হয়। ভালো অভ্যাস ও নিয়মিত ত্বকের যত্নই পারে হাস্যোজ্জ্বল কোমল ত্বক উপহার দিতে। হাস্যোজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার পাঁচটি উপায়।
১। ত্বক পরিষ্কার রাখা ও ময়েশ্চারাইজ করাঃ স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হল ত্বক পরিষ্কার রাখা ও ময়েশ্চারাইজ ব্যবহার করা। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সহনশীল একটি ফেসওয়াশ দিয়ে নিয়মিত মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এছাড়াও মশ্চারাইজিং বডি সোপ ব্যবহার করলে আপনার ত্বক হবে নরম কোমল ও সতেজ।
২। সুষম খাবার গ্রহণ করাঃ সুষম খাদ্য শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। শরীরের সার্বিক কার্যক্রমকে সচল রাখে খাদ্য। আর এর উপরে নির্ভর করে ত্বকের অবস্থা। খাবার থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি, ভিটামিন, খনিজ ও প্রোটিন কোষের মেমব্রেন উৎপাদনে সাহায্য করে। যা আমাদের ত্বককে অতিবেগুনি রশ্মির মতো ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে রক্ষা করে থাকে।
৩। মন খুলে হাসাঃ ব্যস্ততার মাঝে আমরা অনেকেই হাসতে ভুলে গেছি। কিন্তু আপনারা জানেন কি হাসির সময় আমাদের দেহে রক্ত চলাচল বেশি হয়। ত্বক অক্সিজেন ও পুষ্টি পায়। যার ফলে আমাদের ত্বকের রং আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মন ভালো থাকে। চেহারা আরও সুন্দর ও সুশ্রী হয়।
৪। পর্যাপ্ত পানি পান করাঃ পানির অপর নাম জীবন। আমাদের শরীরে প্রায় ৭০ ভাগই পানি। পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বক স্বাস্থ্যবান ও উজ্জ্বল থাকে। তাই বেশি করে পানি পান করুন। পানি আমাদের দেহ থেকে দূষিত বর্জ্য পদার্থ গুলো বের করে দেয়। ফলে ত্বকে নমনীয়তা বজায় থাকে। দিনে দিনে ত্বক হয়ে ওঠে আরো কোমল আর ও সতেজ।
৫। অঙ্গ সঞ্চালনঃ সুন্দর, সুশ্রী ত্বকের জন্য অঙ্গ সঞ্চালন করা খুবই জরুরী। আমরা যখন কোন কাজ করি তখন ক্যালোরি ক্ষয় হয় এবং শরীরে এনডোরফিনস নামক কেমিক্যাল উৎপন্ন হয়। যা আমাদের মস্তিষ্কের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে আনন্দদায়ক অনুভূতি নিয়ে আসে। আর এই অনুভূতি হাস্যোজ্জ্বল কোমল ত্বক উপহার দেয়। তাই সুন্দর ত্বক পেতে চাইলে এই বিষয়গুলো অনুসরণ করুন।
ত্বকের যত্ন সম্পর্কে জেনে রাখুন মজার কিছু টিপস।
আমরা সবাই ত্বককে সুন্দর ও সতেজ রাখতে চাই। কিন্তু কেউই ত্বকের যত্ন নিতে চায় না। ত্বক সুন্দর, কোমল, মোহনীয় এবং সতেজ রাখতে হলে আমাদের ত্বকের যত্ন নিতে হবে।আসুন আমরা নিচে ত্বকের যত্ন সম্পর্কে বেশ কিছু টিপস জেনে নেই।
১। রোদ এড়িয়ে চলাঃ সব সময় রোদ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। কেননা সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকের দারুন ক্ষতি করে। তাই ত্বকের যত্ন সঠিকভাবে করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই রোদ এড়িয়ে চলতে হবে।
২। মেকআপ রিমুভ করাঃ প্রতিদিন আপনি যে মেকআপ করেন বাসায় এসে তা রিমুভ করে নিন। কেননা মেকআপ মুখে দীর্ঘক্ষন থাকলে ত্বকের দারুন ক্ষতি করে।
৩। ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুনঃ সবসময় ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। ময়েশ্চারাইজার আপনার ত্বককে সব ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে। মেকআপ করার আগে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। এতে আপনার ত্বকের কোন ক্ষতি হবে না।
৪। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবেঃ সঠিক ঘুম না হলে আপনার ত্বকের অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই সুস্থ সুন্দর ত্বকের জন্য ভালো ঘুম অত্যন্ত জরুরী। প্রতিদিন রাতে কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমান। তাহলে আপনার ত্বক খুব ভালো থাকবে।
৫। ভালো খাবার খেতে হবেঃ ভালো খাবার গ্রহণের উপর ত্বকের যত্ন বহুলাংশে নির্ভরশীল। তাই ত্বক ভালো রাখতে চাইলে প্রতিদিন ভালো খাবার খেতে হবে।
৬। গ্রিন জুস পান করুনঃ সুন্দর ত্বকের জন্য গ্রীন ভেজিটেবলস অথবা ফলের জুস অনেক বেশি উপকারী। তাই প্রতিদিন চেষ্টা করুন গ্রিন জুস খেতে। এতে আপনার ত্বক অনেক ভালো থাকবে।
কোন ধরনের ত্বক সবচেয়ে ভালো ?
যে ত্বক খুব বেশি তৈলাক্ত বা শুষ্ক হবে না সেই ত্বক সবচেয়ে ভালো। লোমকূপ হবে ক্ষুদ্র দৃশ্যমান। দেখতে কোমল, মসৃণ ও আরামদায়ক মনে হবে। এই ত্বকে তেমন কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। ফলে এই ত্বক নিয়ে কোন চিন্তা করার দরকার হয় না।
কোন ধরনের ত্বকে সাধারণত দাগ কম থাকে ?
মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের ত্বক দেখতে পাওয়া যায়। কোন কোন ত্বকে দাগ বেশি আবার কোন কোন ত্বকে দাগ কম দেখা যায়। তবে স্বাভাবিক ত্বকে দাগ বা ছোপ সাধারণত থাকে না। এ ধরনের ত্বকে তেমন কোনো বলি রেখাও দেখতে পাওয়া যায় না। তাই স্বাভাবিক ত্বকে দাগ কম থাকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url