ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা ব্রেস্ট ক্যান্সার কখন, কিভাবে হয় সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। মহিলাদের এটি একটি নীরব প্রাণঘাতী রোগ। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব কেন, কখন, কিভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়।

ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন

প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথে থাকুন।

 ব্রেস্ট ক্যান্সার কি ?

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, মানুষের স্তনের ভিতরে থাকা কোষগুলি যদি হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন এটির উৎপত্তি হয়। ব্রেস্টের মধ্যে থাকা বিভিন্ন কোষগুলির মধ্যে যে কোন কোষেই এই প্রাণঘাতী রোগ হতে পারে। তবে মাতৃদুগ্ধ উৎপাদনকারী কোষেই এই ক্যান্সার বেশি হয়ে থাকে।

 ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয় ?

ব্রেস্ট ক্যান্সার মহিলাদের একটি প্রাণঘাতী রোগ। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। মহিলারা এই গোপন অঙ্গের রোগগুলো কারো কাছে বলতে চান না। ফলে তারা এই নিরব ঘাতকব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। অধিকাংশ নারীরা নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে মোটেই সচেতন না। বিভিন্ন কারণে স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে। তবে যেসব মায়েরা সন্তানকে তাদের বুকের দুধ খাওয়ান না, তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ ?

ব্রেস্ট ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। তবে যে সমস্ত কারণে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি সবচাইতে বেশি সেগুলো হলঃ

বয়স ও লিঙ্গঃ

৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী মেয়েদের স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি।

জেনেটিক্স বা বংশগতঃ

জেনেটিক্স বা বংশগত কারণে স্তন ক্যান্সার বেশি হয়।

মাদক গ্রহণঃ

যারা নিয়মিত বা অনিয়মিত ধূমপান বা মাদক গ্রহণ করে তাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি।

অতিরিক্ত ওজনঃ

 মেদ-বাহুল্যতা বা অতিরিক্ত ওজন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

তেজস্ক্রিয় বিকিরণঃ

  তেজস্ক্রিয় বিকিরণের কারণে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

হরমোন থেরাপিঃ

অনেক সময় হরমোন থেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কারণে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো কি কি ?

ব্রেস্ট ক্যান্সারের অনেকগুলো লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে। সেগুলো হলঃ

স্তনের কোন অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া।

স্তনের আকার বা আকৃতির মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা।

স্তনবৃন্তের আকারে পরিবর্তন লক্ষ্য করা।

স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ মাঝে মধ্যে বের হওয়া।

স্তনবৃন্তের পাশে ফুসকুড়ি বের হওয়া।

বগলে চাকা চাকা ভাব অনুভব করা।

স্তনের ভেতর শক্ত হয়ে যাওয়া।

স্তনের বোঁটা লালচে হওয়া বা ব্যাথা করা।

ব্রেস্ট ক্যান্সার চেনার উপায়গুলো কি কি ?

নিম্নলিখিত উপায়ে সহজে এটি চেনা যায়।

স্তনে বা বগলে পিণ্ড হওয়া।

উভয় স্তনের রঙের পরিবর্তন হওয়া।

পুরো স্তন বা একটি অংশ ফুলে যাওয়া।

স্তনের আকার বা আকৃতির মধ্যে পরিবর্তন।

স্তনবৃন্তে চুলকানি বা ব্যথা অনুভব করা।

স্তনের ত্বক কুঁচকে যাওয়া।

ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে করণীয় কি কি ?

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে সচেতন হওয়া। নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা। নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা। সব ধরনের মাদক থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখা। এছাড়াও হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়ার সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং নিয়মিত চেকআপ করা।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা।

বেশ কয়েকটি উপায়ে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম বায়োপসি করে ক্যান্সার প্রমাণিত হলে তবেই ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া উচিত। এরপর আরো কিছু উচ্চতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ক্যান্সারের পর্যায় নির্ধারণ করতে হবে। স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রধানত তিনটি উপায়ে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। যেমনঃ অপারেশন, সিস্টেমিক থেরাপি এবং রেডিও থেরাপি।

কেমোথেরাপি স্তন ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত অস্ত্রোপচারের আগে এবং পরে কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হরমোনাল থেরাপি স্তন ক্যান্সারের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের প্রতি অতি সংবেদনশীল।

এক সময় স্তন ক্যান্সার হলে সম্পূর্ণ স্তনটি কেটে ফেলা হতো। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়নের ফলে স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে স্তনটি রেখে শুধুমাত্র টিউমারটি অপসারণ করার মাধ্যমে সার্জারি করা হয়ে থাকে। যা বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয়।

ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিকারের উপায় গুলো কি কি ?

বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চললে স্তন ক্যান্সার অনেকটা রোধ করা যায়। স্তন ক্যান্সার প্রতিকারের উপায় গুলো হলোঃ

মাদক সেবন বন্ধঃ

সব ধরনের মাদক সেবন বন্ধ করতে হবে।

তামাক সেবন বন্ধঃ

যেকোনো ধরনের তামাক জাতীয় নেশা বন্ধ করতে হবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণঃ

শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মেদ বাহুল্যতা বর্জন করতে হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ

 নিয়মিত ব্যায়াম করে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকতে হবে।

বুকের দুধ খাওয়ানোঃ

 শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।এতে স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমে যাবে।

হরমোন থেরাপি হ্রাসঃ

হরমোন থেরাপি প্রয়োগ সীমিত রাখতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪