মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন, কিভাবে হয় সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। জরায়ুতে টিউমার মহিলাদের একটি স্বাভাবিক সমস্যা। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব কেন এবং কিভাবে মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার হয়।
জরায়ু কি ?
ল্যাটিন শব্দ ইউটেরাস থেকে জরায়ু শব্দের উৎপত্তি। জরায়ু হল নারী দেহে বিদ্যমান স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের একটি অন্যতম প্রধান অঙ্গ। এই জরায়ুতেই গর্ভস্থ ভ্রুণ বা গর্ভকালীন সন্তান বড় হতে থাকে।
মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয় ?
মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার হওয়ার নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। তবে যাদের দেরিতে বিয়ে হয়, সন্তানাদি নেই বা সন্তান কম তাদের ক্ষেত্রে এই টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যথা সময়ে সন্তান ধারণ করা জরায়ুর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও জরায়ু পেশির অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে যে টিউমার হয় তার নাম ফাইব্রয়েড। সাধারণত ৩০ বছরের উর্ধ্বে প্রজননক্ষম মেয়েদের এ ধরনের টিউমার হয়ে থাকে।
জরায়ু টিউমার চেনার উপায় কি ?
জরায়ুতে টিউমার হলে কি কি সমস্যা হয় ?
মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার হলে অনেকগুলো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমনঃ
অতিরিক্ত রক্তস্রাবঃ
জরায়ুতে টিউমার হলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ হয়।
প্রচন্ড ব্যথাঃ
জরায়ুতে টিউমার হলে তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়।
গর্ভধারণে বাধাঃ
জরায়ুতে টিউমার হলে ফেলোপিয়ান টিউবকে বন্ধ করে দেয়। ফলে গর্ভধারণ করা সম্ভব হয় না।
সহবাস কালীন ব্যথাঃ
টিউমার হলে সহবাসের সময় প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে।
মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার হলে করণীয় কি ?
মেয়েদের মাতৃত্বের অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গ হচ্ছে ইউটেরাস বা জরায়ু। মেয়েদের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিতে যে কোনো সময় টিউমার হতে পারে। মেয়েদের প্রজননক্ষম বয়সে জরায়ুতে সাধারণত যে টিউমার হয় সেটি হচ্ছে ফাইব্রয়েড বা মায়োমা। একমাত্র অপারেশনই হচ্ছে ফাইব্রয়েড টিউমারের প্রধান চিকিৎসা। এই অপারেশন মূলত দুইভাবে হয়ে থাকে। ১। জরায়ু কেটে ফেলা। ২। জরায়ুর দেয়াল থেকে ফাইব্রয়েড কেটে ফেলা।
দুটি পদ্ধতিতে মেয়েদের জরায়ুর টিউমার অপারেশন করা হয়ে থাকে। ১। ছিদ্র করে ২। পেট কেটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অপারেশনে জরায়ু কেটে ফেলা হয়। তবে আসার কথা এই যে, জরায়ুর টিউমার অপারেশনের যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে লেজার সার্জারির মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে কাটা ছেঁড়া ও রক্তপাতহীনভাবে লেজারের মাধ্যমে জরায়ুর টিউমার অপারেশন করা হচ্ছে। মহিলাদের এই অভিনব চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই হচ্ছে।
জরায়ুতে টিউমার হলে কি বাচ্চা হয় ?
হ্যাঁ। জরায়ুতে টিউমার হলে বাচ্চা হয়। তবে জরায়ুতে টিউমার হলে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানে কিছুটা জটিলতা তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ফাইব্রয়েড আকারে ছোট হলে তেমন কোন সমস্যা হয় না। আর ফাইব্রয়েড আকারে বড় হলে তা অপসারণ করে গর্ভবতী হওয়া ও সন্তান জন্মদান করা সম্ভব।
জরায়ুতে টিউমার হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায় ?
মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার হলে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমনঃ
১। পিরিয়ডের সমস্যাঃ সাধারণত একজন মেয়ের পিরিয়ড শুরুর দিন থেকে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে শেষ হয়। কিন্তু জরায়ুতে টিউমার হলে ৭ থেকে ১০ দিন লেগে যেতে পারে।
২। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণঃ জরায়ুতে টিউমার হলে রক্তক্ষরণের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
৩। প্রচন্ড পেট ব্যথাঃ জরায়ুতে টিউমার হলে পিরিয়ডের সময় প্রচন্ড পেট ব্যাথা করে।
জরায়ু অপারেশনের পর কি বাচ্চা হয় ?
না। জরায়ু অপারেশনের পর বাচ্চা হয় না। আপনার যদি জরায়ু অপারেশনের আগে মাসিক হয়ে থাকে, তবে জরায়ু অপারেশনের পর আর মাসিক হবে না। সেক্ষেত্রে আপনি আর গর্ভবতী ও হতে পারবেন না। আর গর্ভবতী হতে না পারলে বাচ্চা হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার কেন হয় ?
জরায়ু টিউমার হওয়ার সুস্পষ্ট কোন কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে যে সমস্ত কারণগুলো জরায়ু টিউমারের জন্য দায়ী মনে করা হয় সেগুলো হলঃ বংশগত, গ্রোথ ফ্যাক্টর ও জিনগত। তবে অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার হওয়ার বিশেষ কোনো কারণ নেই।
জরায়ু টিউমার প্রতিরোধের উপায়।
জরায়ু টিউমার প্রতিরোধের বিভিন্ন উপায় রয়েছে। তবে নিম্নে জরায়ু টিউমার প্রতিরোধের সাতটি উপায় বর্ণনা করা হলোঃ
১। এইচপিভির বিরুদ্ধে টিকাঃ এইচপিভি এর বিরুদ্ধে টিকা গ্রহণ করতে হবে।
২। নিরাপদ সেক্সঃ যৌনতার সময় কনডম ব্যবহার করতে হবে।
৩। ধূমপান ছেড়ে দিতে হবেঃ ধূমপানের অভ্যাস থাকলে ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে। কেননা ধূমপান জরায়ু মুখের ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়াতে সাহায্য করে।
৪। সুষম খাদ্য গ্রহণঃ সুস্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্য অতীব জরুরী। কেননা সুষম খাদ্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৫। স্থূলতা হ্রাসঃ ওজন সবসময় স্বাভাবিক রাখতে হবে। অতিরিক্ত ওজন জরায়ু টিউমারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৬। স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনঃ সব সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সহবাসের পর যৌনাঙ্গ ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
৭। নিয়মিত প্যাপ পরীক্ষাঃ মহিলারা যৌন সক্রিয় হওয়ার সাথে সাথে পরীক্ষা শুরু করতে পারবেন এবং এভাবে ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url