পেঁয়াজ চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা পেঁয়াজ চাষ কখন, কিভাবে করবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। মুখরোচক খাদ্য তৈরিতে পেঁয়াজের কোন বিকল্প নেই। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব কখন কিভাবে আপনারা পেঁয়াজ চাষ করবেন।
পেঁয়াজ চাষের জন্য কোন মাটি ভালো ?
পেঁয়াজ চাষের জন্য মাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উর্বর বেলে দো-আশ মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য খুবই উত্তম। বর্ষায় যেখানে বৃষ্টির জল জমে না এরূপ উঁচু জমি পেঁয়াজ চাষের উপযোগী। পেঁয়াজ চাষের জমিতে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
পেঁয়াজ লাগানোর উপযুক্ত সময় কখন ?
পেঁয়াজ রবি ও খরিফ মৌসুমে চাষ করা হয়। রবি মৌসুমে অক্টোবর থেকে নভেম্বর অথবা ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে বীজতলায় বীজ বপন করতে হয় এবং খরিফ মৌসুমে জুলাই থেকে আগস্ট মাসে বীজ বপন করতে হয়। তারপর বীজ লাগানোর উপযুক্ত হলে জমিতে রোপন করতে হয়।
পেঁয়াজ চাষের জন্য জমি তৈরী করার পদ্ধতি।
পেঁয়াজ গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্থকারী ফসল। মসলা ও সবজি হিসেবে এর ব্যবহার ব্যাপক। প্রথমে জমিকে আগাছা মুক্ত করতে হবে। তারপর কমপক্ষে চার থেকে পাঁচটি চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালোভাবে ঝুরঝুরা করতে হবে। অতঃপর তিন ফুট পর পর বেড তৈরি করতে হবে এবং দুই বেডের মাঝখানে কমপক্ষে এক ফুট জায়গা ফাঁকা রাখতে হয়। তারপর চারা রোপন করতে হয়।
পেঁয়াজ কত প্রকার ও কি কি ?
পেঁয়াজ খাদ্যের অন্যতম উপাদানই শুধু নয় এটি আবার কোন কোন খাদ্যের মুখরোচক খাদ্যে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধরনের পেঁয়াজ হয়ে থাকে সেগুলো হলো
হলুদ পেঁয়াজঃ এর ভেতরটা আইভরি সাদা রংয়ের এর গন্ধ খুব গাঢ় এবং সালফারের মত।
মিষ্টি পেঁয়াজঃ এর খোসা হালকা এবং মিষ্টি স্বাদের হয়।
সাদা পেঁয়াজঃ এই পেঁয়াজ সাদা রংয়ের এবং বেশ মিষ্টি হয়।
লাল পেঁয়াজঃ এই পেঁয়াজ হালকা মিষ্টি এবং কাঁচা খাওয়া যায়।
সবুজ পেঁয়াজঃ এই পেঁয়াজ খুব একটা বিকশিত হয় না, তবে এই পেঁয়াজের পাতা রান্না এবং সালাদ করে খাওয়া হয়।
স্যালটসঃ এই পেঁয়াজ ব্রাউন রংয়ের ছোট আকৃতির এবং এর ভেতরটা পার্পল রঙের হয়।
পেঁয়াজের সবচেয়ে উন্নত জাত কোনটি ?
পেঁয়াজের সবচেয়ে উন্নত জাত হচ্ছে বারি ৫। এই পেঁয়াজের ফলন সাধারণ পেঁয়াজ এর চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি হয়। এটি উদ্ভাবন করেছেন মাগুরা আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র।
শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি।
মানব সভ্যতার সূচনা থেকেই পেঁয়াজের ব্যবহার শুরু হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রান্নার কাজে পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। রান্না-বান্নায় স্বাদ আনয়নের ক্ষেত্রে পেঁয়াজের কোন বিকল্প নেই।
জমি ও মাটিঃ
উর্বর বেলে দো-আঁশ মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য উত্তম। পেঁয়াজ চাষের জন্য উঁচু জমি প্রয়োজন, যেখানে বৃষ্টির জল জমে না। আবার পেঁয়াজের জমিতে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
জাত নির্বাচনঃ
আমাদের দেশে এখনো দেশি পেঁয়াজের চাষ করা হয়ে থাকে। দেশী জাতের পেঁয়াজগুলো হলো তাহেরপুরি, ভাতি, ঝিটকা ও কৈলাসনগর। সম্প্রতিকালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র হতে বারি ১ বারি ২ বারি ৩ বারি ৪ বারি ৫ বারি ৬ জাতের উন্নত মানের পেঁয়াজ উদ্ভাবন করা হয়েছে। যার ফলন বিঘা প্রতি অনেক বেশি।
চারা তৈরিঃ
৩ মিটার * এক মিটার আকারের বীজ তলার জন্য ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। পেঁয়াজ ও রবি ও খরিপ মৌসুমে চাষ করা হয়। রবি মৌসুমে অক্টোবর থেকে নভেম্বর অথবা ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস এবং খরিপ মৌসুমে জুলাই থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বীজ বপন করতে হয়। বীজ লাগানোর উপযুক্ত হলে চারা রোপন করতে হয়।
চারা রোপনঃ
চার থেকে পাঁচটি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হয়।১০ *১০ সেন্টিমিটার দূরত্বে চারা রোপণ করতে হয়। বর্ষার সময় ১ মিটার চওড়া ও ১০ সেন্টিমিটার উচু বেড তৈরি করতে হয়। দুই বেডের মাঝখানে ২০ সেন্টিমিটার চওড়া পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা রাখতে হয়।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
পেঁয়াজের জমিতে ৩০ মন গোবর, ইউরিয়া ৩৩ কেজি, টিএসপি ৩৩ কেজি ,এমওপি ২০ কেজি, ফুরাডান ২ কেজি, বরুণ ১ কেজি এবং জিঙ্ক ১ কেজি প্রয়োগ করতে হয়।
সেচ ও আগাছা পরিষ্কারঃ
পেঁয়াজের জমিতে রসের অভাব থাকলে প্রয়োজন মত সেচ দিতে হয়। বৃষ্টির পানি যাতে না জমে, সেজন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
বালাই ব্যবস্থাপনাঃ
পেঁয়াজের সবচেয়ে ক্ষতিকারক পোকা হচ্ছে থ্রিপস। এ পোকা আকারে ছোট হলেও ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। এ পোকা পাতার রস চুষে খায় এবং গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। যার ফলে বিঘা প্রতিফলন কম হয়।
কীটনাশক প্রয়োগঃ
নীল বা সাদা রঙের আঠালো ফাঁদ পেতে পোকা দমন করা যেতে পারে। আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে এক মিলি লিটার এট্রাপিড ৭ থেকে ১০ দিন পর পর ব্যবহার করতে হবে
কাণ্ড পচা রোগঃ
স্কেলরোসিয়াম রলফসি এবং ফিউজারিয়াম নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। কন্দ ও শিকড়ে পচন ধরে এবং আক্রান্ত গাছ পাতা হলুদ হয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে। প্রথমত, আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে। তাতেও কাজ না হলে প্রতি লিটার পানিতে দুই মিলি ফলিকিউর মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
পেঁয়াজ গাছ পরিপক্ক হলে পাতা পর্যায়ক্রমে হেলে পড়ে। প্রায় ৭০ থেকে ৮০ % গাছের অবস্থা এ ধরনের হলে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে হয়।
পেঁয়াজ খেলে কি ক্ষতি হয় ?
না। পেঁয়াজ খেলে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তবে কাঁচা পেঁয়াজ বেশি পরিমাণে খেলে এলার্জিক সমস্যা হতে পারে। তাই পরিমাণ মতো পেঁয়াজ খেতে হবে।
কাঁচা পেঁয়াজের উপকারিতা।
কাঁচা পেঁয়াজে পটাশিয়ামের মত নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। কাঁচা পেঁয়াজে ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতাও রয়েছে। হজম শক্তি বৃদ্ধিতে পেঁয়াজ দারুন কাজ করে। পেঁয়াজ ত্বক, চুল ও রক্ত চলাচলে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
পেঁয়াজ কত দিনের ফসল ?
বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩৫ থেকে ৪৫ দিন ও রবি মৌসুমে প্রায় ৪০থেকে ৫০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
বিঘা প্রতি পেঁয়াজের ফলন কত হয় ?
সাধারণত বিঘা প্রতি পেঁয়াজের ফলন ৮০ থেকে ১০০ মণ হয়ে থাকে। তবে পরিচর্যা ভালো করলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০মণ হয়ে থাকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url