বিছানাকান্দি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন

প্রিয় পাঠক ,আপনারা বিছানাকান্দি কখন, কিভাবে দেখতে যাবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। মোহনীয় প্রাকৃতিক রুপ বৈচিত্রে ভরপুর সিলেটের এই পর্যটন কেন্দ্র । চিন্তার কোন কারণ নেই ,আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব,কখন কিভাবে আপনারা বিছানাকান্দি দেখতে যাবেন । 

বিছানাকান্দি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন

 প্রিয় আর্টিকেল পাঠক,আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি বিছানাকান্দি সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি।বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন ।

বিছানাকান্দি কোথায় অবস্থিত ?

বিছানাকান্দি বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের এক নিভৃত পল্লিতে অবস্থিত। মূলত এটি একটি পাথর কোয়ারি। এখানে খাসিয়া পর্বতের বহু স্তর এক সাথে মিলিত হয়েছে। খাসিয়া পর্বত হতে বয়ে আসা একটি ঝর্ণা সুদৃশ্য হ্রদের সৃষ্টি করেছে যা পিয়াইন নদের সাথে যুক্ত হয়েছে। এখানকার শিলাগুলো পাহাড়ি ঢলের পানির মাধ্যমে নেমে আসে ।

বিছানাকান্দি কিভাবে যাবো ?

বিছানাকান্দি যেতে হলে সিলেটের আম্বরখানা থেকে সিএনজিতে চড়ে হাদারপার নামক স্থানে যেতে হবে। জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ১৪০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা। সারা দিনের জন্য সিএনজি রিজার্ভ নিলে ভাড়া পড়বে ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা। হাদারপার নৌকা ঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ করে বিছানাকান্দি মেইন পয়েন্টে যেতে পারবেন। শীতকাল ও বর্ষার আগে নদীতে পানির পরিমান কম থাকায় আপনি চাইলে হাদারপার থেকে বাইকে চড়ে বিছানাকান্দি যেতে পারবেন। জনপ্রতি বাইক ভাড়া লাগবে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ।

সিলেট থেকে বিছানাকান্দি কত কিলোমিটার ?

বিছানাকান্দি সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে বাংলাদেশ -ভারত সীমান্তের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে অবস্থিত। এর তিনদিকে মেঘালয় রাজ্যের উঁচু উঁচু সবুজের সমারোহ । সিলেট থেকে বিছানাকান্দির দূরুত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার।

বিছানাকান্দির সৌন্দর্য ?

বিছানাকান্দি মূলত জাফলং ও ভোলাগঞ্জের মতোই পাথর কোয়ারি। এটি সিলেট জেলার পর্যটন স্বর্গ।বিছানাকান্দির যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাথর আর পাথর। দূর থেকে দেখলে মনে হয় এ যেন এক পাথরের বিছানা। বিভিন্ন রকমের পাথরের উপর দিয়ে বয়ে আসা স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা এখানে তৈরী করেছে এক মনভোলানো মনোরম পরিবেশ। সবুজ পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে রয়েছে সুবিশাল ঝর্ণাধারা। বর্ষাকালে ঘন কালো মেঘ পাহাড়ের উপর দিয়ে উড়াউড়ি করে। মনে হয় যেন এক মেঘের রাজ্যে প্রবেশ করেছি। সব মিলিয়ে নদী, পাহাড়,বনভূমি আর ঝর্ণাধরার অপূর্ব মিলনে সৃষ্টি হয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বিছানাকান্দি ।

জাফলং থেকে বিছানকান্দি কত কিলোমিটার 

বিছানাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রটি প্রাচীন জৈন্তা রাজ্যের অন্তর্গত। বর্তমানে এই পর্যটন এলাকাটি গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। জাফলং থেকে বিছানাকান্দির দূরুত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার।

বিছানাকান্দির নৌকা ভাড়া কত ?

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিছানাকান্দি যেতে সবারই মন চায়। এখানকার নৌকা ভাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান ও টুরিস্ট পুলিশ কর্তৃক নির্ধারিত ১৫০০ টাকা। অসাধু নৌকা সিন্ডিকেট আপনার কাছে অনেক ভাড়া চেয়ে বসবে। তাই দর দাম ঠিক করে নৌকায় উঠবেন। দুটি উপায়ে আপনি নৌকা যোগে বিছানাকান্দি যেতে পারবেন।

 প্রথমতঃ জাফলং থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে পীরের বাজার নৌকাঘাটে যেতে হবে। বর্ষাকালে বিছানাকান্দি ভ্রমণে গেলে আপনি বিছানাকান্দি ও পানথুমাই ঝর্ণা দেখার জন্য একত্রে নৌকা ভাড়া করতে পারেন।সেক্ষেত্রে নৌকা ভাড়া লাগবে ২০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা। আর শুধুমাত্র বিছানাকান্দির জন্য নৌকা ভাড়া লাগবে ১০০০টাকা থেকে ১৫০০ টাকা ।

 দ্বিতীয়তঃ জাফলং থেকে সরাসরি সিএনজি যোগে হাদারপার নামক বাজারে নামতে হবে। তারপর  হাদারপার নৌকা ঘাটে গিয়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিছানকান্দি যেতে পারবেন। হাদরপার বাজার থেকে আর ও একটি সহজ উপায়ে জনপ্রতি মাত্র ৫০ টাকা ভাড়ায় মোটর বাইকে খুব অল্প সময়ে বিছানাকান্দি যেতে পারবেন ।

বিছানাকান্দির অজানা ইতিহাস জেনে রাখুন কাজে লাগবে ?

সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট সীমান্তবর্তী উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে বিছানাকান্দি অবস্থিত। পানি আর পাথরের শয্যা খ্যাত এই পর্যটনকেন্দ্র ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। শীত আর বর্ষায় এক এক রুপ ধারণ করে সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া পিয়াইন নদ। সিলেটের বিছানাকান্দির সবটুকু এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ছোট-বড় অসংখ্য পাথর ।

 সবুজ পাহাড়ের কোলে এ যেন এক পাথরের বিছানা। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়গুলো একটু বেশীই সবুজ থাকে, আর পাহাড়ের গা বেয়ে ছুটে চলা ঝর্ণাগুলোও থাকে বেশ প্রাণবন্ত। প্রকৃতি যেন  অপার মহিমায় সৌন্দর্যের সবটুকু ঢেলে দিয়েছে বিছানাকান্দিকে ।

বিছানাকান্দি যাওয়ার উপযুক্ত সময় ।

বিছানাকান্দি বছরের যে কোন সময় ভ্রমণ করার  জন্য উপযুক্ত । তবে বর্ষাকাল ভ্রমণের সবচেয়ে আদর্শ সময়। কেননা এর প্রকৃত রুপ লাবণ্য একমাত্র বর্ষাকালেই দেখা যায়। সবুজ পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা ঘন কালো মেঘ আর ভরা যৌবন প্রাপ্ত ঝর্ণাধারার পানিতে ডুবে থাকা অগণিত পাথরগুলো এক অনিন্দ সুন্দর সৌন্দর্যের জন্ম দিয়েছে। পাহাড়,নদ,ঝর্ণা আর মেঘের অপূর্ব মিলন বিছানাকান্দিকে ইদানিংকালে প্রকৃতি প্রেমিকদের মিলনস্থলে পরিণত করেছে ।

বিছানাকান্দির আসে পাশের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি ?

সিলেট জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হচ্ছে বিছানাকান্দি। এর আসে পাশে আরও কিছু সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় স্থান রয়েছে।যেমনঃ পানথুমাই ঝর্ণা ,সারি নদীর লালাখাল ,তামাবিল জিরো পয়েন্ট, খাসিয়াপুঞ্জি এবং সংগ্রামপুঞ্জি মায়াবী ঝর্ণা। এ সব প্রাকৃতিক ভূ-দৃশ্যগুলি নিজ চোখে না দেখলে জীবনের অনেক কিছুই অপূর্ণতা থেকে যায়।

বিছানাকান্দির নদীর নাম কি ? 

সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে পত পত করে বয়ে চলা বিছানাকান্দির নদীটির নাম পিয়াইন নদ।মেঘালয়ের উচু উচু পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথরগুলোর গা ছুঁয়ে জলরাশি বিরামহীনভাবে ছুটে চলেছে পিয়াইন নদে। দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বিছানাকান্দিতে পৌঁছানোর পর অপরুপ স্বর্গীয় সৌন্দর্য দেখে মুহুর্তেই পথের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪