মেঘ পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ভূমিকাঃ প্রিয় পাঠক, আপনারা মেঘ পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালি কখন, কিভাবে দেখতে যাবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। মোহনীয় রুপ বৈচিত্রে ভরপুর রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি। চিন্তার কোন কারণ নেই,আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব কখন, কিভাবে মেঘ পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালি দেখতে যাবেন।

মেঘ পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় আর্টিকল পাঠক,আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি মেঘ পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালি সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি । বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।

সাজেক ভ্যালি কোথায় অবস্থিত ?

অপরুপ রুপ সৌন্দর্যে ভরপুর মেঘ পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। সাজেক ভ্যালির আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সাজেক ভ্যালির উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য,দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু ,পূর্বে ভারতের মিজোরাম এবং পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা অবস্থিত। এটি রাঙামাটি জেলার সর্ব উত্তরে ভারতের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত।

সাজেক ভ্যালি পাহাড়ের উচ্চতা কত ?

সাজেক ভ্যালি রুইলুইপাড়া, হামারিপাড়া এবং কংলাকপাড়া এই তিনটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। ১৮৮৫ সালে সাজেক ভ্যালির রুইলুইপাড়া প্রতিষ্ঠিত। রুইলুইপাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। সাজেক ভ্যালির কংকলাক পাহাড়ের উচ্চতা ভূ-পূষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত । এটি সাজেক ভ্যালির সর্বোচ্চ পাহাড়। পাহাড়ের বুকে এ যেন এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অবারিত লীলাভূমি।

সাজেক ভ্যালি কে কি বলা হয় ?

বর্তমান সময়ে নৈসর্গিক সৌন্দর্য ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান মেঘ পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালি। পার্বত্য রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক ইউনিয়ন বাংলাদেশর সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। সাজেক ভ্যালির অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও ভৌগোলিক অস্থানের দিক থেকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়া  খুব সহজ। সাজেকে  মূলত উপজাতীয় সমপ্রদায়ের লোকেরা বসবাস করে। কমলা,কলা,ও,আনারস সাজেকের বেশ বিখ্যাত ফল। এখানকার পাহাড়ী কলা খেতে খুবই মিষ্টি। রাঙামাটির অনেকটা অংশ দেখা যায় সাজেক ভ্যালি থেকে। এজন্য সাজেক  ভ্যালিকে রাঙামাটির ছাদ বলা হয় ।

সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান ।

চারপাশে মনোরম সারি সারি পাহাড়, সাদা তুলোর মতো মেঘের ভেলা, সবুজে ঘেরা ঘন বনভূমি আপনাকে আকর্ষণ করবেই। মেঘ পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালি জায়গাটি দেখতে  খুবই সুন্দর। সাজেক ভ্যালি এমনই এক মোহনীয় জায়গা যেখানে একই দিনে প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন তিন রকম রুপের সান্নিধ্যে আপনি হতে পারেন আকৃষ্ট। কখনো খুব গরম অনুভব হবে, আবার হঠাৎ করেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামতে শুরু করবে আবার কখনো বা চোখের নিমিষেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে আপনার চারপাশ।

 সাদা তুলোর মতো মেঘের উড়াউড়ির দৃশ্য দেখতে সাজেক ভ্যালি সবচেয়ে উত্তম জায়গা। তাই ছবি তোলার মত অসংখ্য জায়গা দেখতে পাবেন। সাজেকের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রুইলুই পাড়া, কংকলাক পাড়, হ্যালিপ্যাড, লুসাই গ্রাম এবং কংকলাক পাহাড়। কংলাক পাহাড় হচ্ছে এখানে ভ্রমণ করতে আসা পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত কংলাকপাড়া সাজেক ভ্যালির সর্ব শেষ গ্রাম। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায় এই পাহাড়।

 যেখানে রয়েছে শুধু মেঘ আর মেঘ। দেখতে পাবেন সাদা মেঘের ভেলা। কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের আসামের লুসাই পাহাড় এই কংকলাকপাড়া থেকে দেখা যায়। সাজেকে ভোরবেলা মেঘের খেলা আর সূর্যোদয়ের আলোর মেলা এক সাথে দেখা যায়। এখানে প্রবেশ করলে মনে হবে এ যেন এক মেঘের রাজ্যে প্রবেশ করেছি। মাঝে মধ্যে সূ্র্যের উঁকি দেওয়ার দৃশ্য আপনাকে সব কষ্টের কথা ভুলিয়ে দিবে।

মেঘ পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য দেখলে অবাক হবেন ।

সাজেকের সর্বত্র মেঘ, পাহাড় আর সবুজে ঘেরা বন বনানী। এখান থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায়। সাজেকের রুইলুইপাড়া থেকে ট্রেকিং করে কংকলাক পাহাড়ে যাওয়া যায়। কংকলাক হচ্ছে সজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। কংকলাকে যাওয়ার পথে ভারতের মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড় ,আদিবাসীদের জীবন যাপন এবং চারিদিকে মেঘের আনাগোনা দেখা যায়। এখানে বছরের নিদিষ্ট সময়ে উপজাতীয় উৎসব অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায় এবং তাদের সংস্কৃতির নানা উপকরণ দেখা যায়।

 এক কথায় বলা যায়, মেঘ পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য কথায় লিখে শেষ করা যাবেনা। প্রকৃতি এখানে সকাল বিকাল রং বদলায়। সমুদ্রের ঢেউয়ের মত সারি সারি পাহাড় আর তুলোর মত মেঘ তারই মাঝে দাঁড়িয়ে আছে অপরুপ রুপ সৌন্দর্যে ভরপুর নৈস্বর্গিক মেঘ পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালি। পাহাড়ের বুক চিরে আঁকা বাঁকা মনমাতানো পিছঢালা পথ, রাস্তার দু-পাশেই রয়েছে আদিবাসীদের গ্রাম।

 সবুজে ঘেরা নীল আকাশ যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। পাহাড় ও মেঘের অপূ্র্ব মিলনের জন্যই সাজেককে বলা হয় মেঘের রাজ্য। সৌন্দর্য পিপাসু মানুষদের জন্য এ যেন এক প্রকৃতির লীলাভূমি। আর একটু দুরেই রয়েছে ভারতের আসাম রাজ্যের পাহাড়। কি অপার মহিমায় মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে অপরুপ দৃশ্য নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করা যায় না।

ঢাকা থেকে সাজেক কিভাবে যাবো ?

সাজেক ভ্যালির অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি উপজেলার দীঘিনলা থেকে সাজেক যাতায়াত অনেক সহজলভ্য। তাই প্রথমেই আপনাকে সরাসরি খাগড়াছড়ি আসতে হবে। সড়কপথে ঢাকা থেকে সাজেক ভ্যালি যেতে হলে শান্তি পরিবহন,হানিফ এন্টার প্রাইজ,শ্যামলী,সৌদিয়া, এস আলম, ঈগল ইত্যাদি বাসে করে ঢাকা থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা পর্যন্ত যাবেন। 

ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ৬২০ থেকে ৮০০ টাকা। এসি বাসে করে যেতে চাইলে সেন্টমার্টিন হুন্দাই,হানিফ এন্টার প্রাইজ ,শ্যামলী, দেশ ট্রাভেলস,ইকোনো সার্ভিস ইত্যাদি পরিবহনে করে যেতে পারবেন।  দীঘিনলা থেকে চান্দের গাড়ী করে সাজেক যাবেন।

আরও পড়ুন ঃ আমার সম্পর্কে কিছু না বলা কথা

রাঙামাটি থেকে সাজেক  যাওয়ার জন্য সড়ক ও নৌপথে আলাদা আলাদা রুট আছে । নৌপথে রিজার্ভ বাজার এলাকা থেকে সকাল ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে বাঘাইছড়ির লঞ্চ ছাড়ে। সেখান থেকে দীঘিনালা হয়ে সাজেক যেতে পারেন। এছাড়াও সড়ক পথে রাঙামাটি থেকে বাঘাইছড়ি হয়ে সাজেক যেতে পারেন।

সাজেক ভ্যালির জন্য কোন মাস ভালো ।

আসলে মেঘ পাহাড়ের রাজ্য সাজেক ভ্যালির রুপের কোনো তুলনা হয়না। পুরোটা বছর জুড়েই বর্ণিল রুপে সেজে থাকে সাজেক ভ্যালি। বছরের যে কোন সময়ই আপনি সাজেক ভ্যালি যেতে পারেন । তবে বর্ষার ভরা মৌসুমে পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কা থাকায় না যাওয়াই উত্তম। তাই বর্ষার পরে শীতের শুরুর দিক পর্যন্ত সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের আদর্শ সময়। বিশেষ করে জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মেঘের খেলা সবচেয়ে বেশী  দেখা যায় । তাই  এই সময়টা সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করা সবচেয়ে ভালো ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪