প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর সেন্টমার্টিন দ্বীপ কখন,কিভাবে দেখতে যাবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব কখন, কিভাবে আপনারা প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর সেন্টমার্টিন দ্বীপ দেখতে যাবেন।

প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর  সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের পুরাতন নাম কি ?

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার একটি ইউনিয়ন।এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। কিছু আরব ব্যবসায়ী এই দ্বীপটির নামকরণ করেন জিঞ্জিরা। এখানে আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন যে, বন্দর নগরী চট্রগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূ্র্ব এশিয়ায় ব্যবসায়িক কাজে যাতায়াতের সময় আরবরা এই দ্বিপটিকে বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করতো। যার ফলে এই দ্বিপটিকে মানুষ জিঞ্জিরা নামেই চিনতো। প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর সেন্টমার্টিন দ্বীপের পুরাতন নাম জিঞ্জিরা ।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের অপর  নাম  কি ?

অপরুপ রুপ সৌন্দর্যে ভরপুর সেন্টমার্টিন দ্বীপের অপর নাম নারিকেল জিঞ্জিরা ।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ কোথায় অবস্থিত ?

সেন্টমর্টিন দ্বীপ বাংলাদেশর সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের  উত্তর -পূর্বাংশে অবস্থিত। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলা হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ কে আবিস্কার করেন ?

১৯৪৩ সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সেন্টমার্টিন দ্বীপ আবিস্কার করেন।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ কত বর্গ  কিলোমিটার ?

সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮  বর্গ  কিলোমিটার । দ্বীপটি উত্তর -দক্ষিণে লম্বা । ভৌগোলিক  ভাবে এটি তিনটি অংশে বিভক্ত। উত্তর অংশের নাম উত্তর পাড়া ,দক্ষিণের অংশের নাম দক্ষিণ পাড়া এবং পূ্র্ব দিকের অংশের নাম গলাচিপা।

প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর সেন্টমার্টিন দ্বীপ কেন বিখ্যাত ?

বাংলাদেশের মূল ভুখন্ড থেকে দক্ষিণে প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর সেন্টমার্টিন দ্বীপ। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। প্রকৃতি তার আপন মহিমায় সুনিপুণ হাতে তৈরী করেছে এই দ্বীপটি। যা বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত। নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ এ দ্বীপটিকে করেছে অনন্য। পাখীর কলকাকলী দ্বীপটির সৌন্দর্যকে আর ও বাড়িয়ে তুলেছে যার অর্ধেকই কিন্তু পরিযায়ী ।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি ?

প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলোর  মধ্যে অন্যতম হচ্ছে  ছেঁড়া দ্বীপ ও সারি সারি নারিকেল গাছ। এ ছাড়াও সেন্টমার্টিন দ্বীপের পশ্চিম পাড়ের বীচ থেকে আপনি দেখতে পারেন আপনার জীবনের সেরা সূ্র্যাস্ত।

সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার উপায় ?

প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর সেন্টমার্টিন দ্বীপ যাওয়ার বেশীরভাগ শীপ টেকনাফ থেকে ছেড়ে যায়। টেকনাফ থেকে জাহাজ অথবা ট্রলারে যাওয়া ভাল। আবার কক্সবাজার থেকেও শীপে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। এ ছাড়াও বর্তমানে চট্রগ্রাম থেকে এমভি বে ওয়ান শীপে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়।

সেন্টমার্টিন দ্বীপে কি কি পাওয়া যায় ?

সৌন্দর্য পিপাসু মানুষদের জন্য প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনেক কিছুই পাওয়া যায়। যেমন ঃ সামুদ্রিক শৈবাল, বিভিন্ন প্রজাতির শামুক, ঝিনুক, বিভিন্ন জাতীয় উদ্ভিদ, বিভিন্ন প্রজাতির  সামুদ্রিক মাছ, লাল কাঁকড়া এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখী।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ কি পর্যটকদের জন্য নিরাপদ 

সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য নিরাপদ। তবে সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপে বিভিন্ন কারণে পর্যটকদের  যাওয়া নিষিদ্ধ।

সেন্টমার্টিন দ্বীপে জাহাজ চলাচল কখন বন্ধ থাকে ?

সেন্টমার্টিন দ্বীপে জাহাজ চলাচল সাধারণত আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে জাহাজ চলাচল শুরু হয় এবং এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলে। জাহাজ ছাড়াও স্পিড বোট, ট্রলার বা মালবাহী বোটে সারা বছর সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়া যায়।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ কত সালে আবিস্কৃত ?

ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ভ্রমণে দ্বীপটি আবিস্কার করেন। সেন্টমার্টিন অফ ট্যুরস নাম অনুসারে "ইসলা ডি সান মার্টিন "নামকরণ করেছিলেন। অসম্ভব সুন্দর এই দ্বীপটি  বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। প্রায় ১০০ থেকে ১২৫ বছর পূর্বে এই দ্বীপে মানুষের বসবাস শুরু হয়। ১৮৯০ সালে কিছু বাঙালী ও রাখাইন সম্প্রদায় এই দ্বীপে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। 

 ১৯০০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে ভূমি জরিপের সময় এ দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।১৯৪৭সালে পাক ভারত বিভাজনের সময় এই দ্বীপটিকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দ্বীপটি বংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভ্রমণ খরচ কত ?

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরপুর সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ প্যাকেজ খরচ নির্ভর করে আপনি কোন মানের জাহাজে চড়ে এবং কেমন মানের রিসোর্টে থাকবেন তার উপর। সাধারণ মানের প্যাকেজ প্রাইসগুলো ঢাকা থেকে যাওয়া আসাসহ জনপ্রতি ৫৫০০ টাকা থেকে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত। 

টেকনাফ থেকে প্রতিদিন বেশ কিছু জাহাজ সকাল ৯.৩০ মিনিটে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।জাহাজের শ্রেণীভেদে ভাড়া ৫৫০ থেকে ১৫০০ টাকা। জাহাজে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। এ ছাড়াও 

 ১ . কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পারেন জাহাজে করে। এখান থেকে দুইভাবে সেন্টমার্টিন যেতে পারেন। ক) সরাসরি কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন। খ) কক্সবাজার টু টেকনাফ,টেকনাফ টু সেন্টমার্টিন। এভাবে সেন্টমার্টিন যাওয়া ব্যয় বহুল ও কষ্টসাধ্য।

২.সেন্টমার্টিন যাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে যে কোনভাবে টেকনাফে যাওয়া এবং টেকনাফের জেটিঘাট থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া। ভাড়া জনপ্রতি ৬৫০ থেকে ১৮০০ টাকা।

৩.আর যারা এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ তারা টেকনাফ থেকে ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যেতে পারেন। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা। তবে ট্রলারে একটু জীবনের ঝুকি থাকে। তাই জীবনের ঝুকি নিয়ে ট্রলারে না যাওয়াই উত্তম।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের হোটেল ভাড়া কত ?

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়  দ্বীপ সেন্টমার্টিন। সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেহেতু শুকনো মৌসুমে যাওয়া যায় ,তাই অক্টোবর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে পর্যটকদের ভীড় লেগেই থাকে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে থাকার জন্য ছোট বড় প্রায় ১৫০টির মতো হোটেল  রিসোর্ট  রয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে থাকার জন্য যে হোটেল রিসোর্টগুলো রয়েছে অবস্থানের ভিত্তিতে সেগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।যেমন পূর্ব বিচের রিসোর্ট ,পশ্চিম বিচের রিসোর্ট এবং উত্তর বিচের রিসোর্ট ।

 এর মধ্যে সেন্টমার্টিন থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো পশ্চিম বিচের রিসোর্ট। সেন্টমার্টিন দ্বীপে হোটেল রিসোর্টসমূহে থাকার জন্য হোটেলের মান অনুসারে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত।ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড় থাকায় আগে থেকেই হোটেলের সিট বুকিং করা ভালো ।

সেন্টমর্টিন যাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন ?

সৈকত বা  দ্বীপ আদিকাল থেকেই সবার কাছে প্রিয়। সমুদ্রের নোনা জলের উত্তাল গর্জন হৃদয়কে শিহরিত করে, মনের মাঝে বিরাজ করে অন্য রকম এক রোমাঞ্চ। শীত ও বসন্ত অর্থাৎ নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি  সময় পর্যন্ত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত জাহজ চলাচল করে। আর ট্রলার বা স্পিড বোটে করে সারা বছরই সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। তাছাড়া শীতকাল ছাড়া অন্য সব ঋতুতেই সাগর উত্তাল থাকে বলে বছরের অন্য সময় যাতায়াত নিরাপদ নয়। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪