ভিটামিন সমৃদ্ধ কচু শাকের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা ভিটামিন সমৃদ্ধ কচু শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য বেশ চিন্তিত। কচু শাক অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাবার। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে ভিটামিন সমৃদ্ধ কচু শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি ভিটামিন সমৃদ্ধ কচু শাকের উপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
কচু শাক কি ?
কচু ARACEAE গোত্রভুক্ত কন্দ জাতীয় এক ধরনের উদ্ভিদ। কচু চাষকৃত প্রাচীন উদ্ভিদ গুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব এলাকায় কম-বেশি কচু পাওয়া যায়। রাস্তার দু'ধারে, বাড়ির আনাচে-কানাচে এবং পতিত জমিতে কচু শাক জন্মাতে দেখা যায়। বনে যে কচু জন্মায় তাকে বলে বুনো কচু। তবে কচুর সবগুলো জাত খাওয়ার উপযোগী নয়। খাওয়ার উপযোগী জাতগুলি হল মুখীকচু, পানিকচু, পঞ্চমুখী কচু, দুধকচু, মানকচু ও শোলাকচু ইত্যাদি।
কচু শাকের পুষ্টিগুণ।
কচু খুবই পরিচিত একটি সবজি। এর পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। কচুর কোন অংশই ফেলনা নয়। এর মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল, লতি সবকিছুই খাওয়া হয়। কচুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। যা মানব দেহের জন্য ভীষণ উপকারী। কচুতে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে দারুন কাজ করে। কচুর মূল উপাদান আয়রন। যা শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রেখে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক রাখে।
প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে থাকে ৩৯ গ্রাম প্রোটিন, ৬.৮ গ্রাম শর্করা, ১৫ গ্রাম চর্বি, ২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০ মিলিগ্রাম আয়রন এবং ৫৬ মিলিগ্রাম খাদ্য শক্তি থাকে।
ভিটামিন সমৃদ্ধ কচু শাকের উপকারিতা জানলে অবাক হবেন।
ভিটামিন সমৃদ্ধ কচু শাকের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। বাড়ির আনাচে-কানাচে অবহেলা অযত্নে বেড়ে ওঠা কচু শাকের স্বাদ একবার পেলে কেউ আর ভুলতে পারে না। চিংড়ি মাছ দিয়ে কচু শাক অথবা ইলিশের মাথা দিয়ে কচু শাক রান্না করে খাওয়ার মজাই আলাদা। কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি,ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী। নিচে ভিটামিন সমৃদ্ধ কচু শাকের উপকারিতা বর্ণনা করা হলোঃ
১। দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ দৃষ্টিশক্তির সমস্যা এখন প্রতিটি ঘরে ঘরে। অনেক কম বয়সী বাচ্চাদের এখন পাওয়ার চশমা ব্যবহার করতে হয়। ভুল খাদ্যাভ্যাস এই সমস্যার প্রধান কারণ।হারানো দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে এটি দারুন কাজ করে। কচুর পাতায় থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তির উন্নয়নের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান।
২। জয়েন্টের ব্যথা কমায়ঃ বয়স্ক ব্যক্তিরা বিশেষ করে মেয়েরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন। নিয়মিত কচু শাক খেলে জয়েন্টের ব্যথা ধীরে ধীরে চলে যাবে, আপনি ফিরে পাবেন আপনার স্বাভাবিক জীবন।
৩। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আপনার অনেক রোগের কারণ হতে পারে। তাই এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আপনি যদি নিয়মিত কচু শাক খান তাহলে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
৪। ওজন কমায়ঃ অতিরিক্ত ওজন বর্তমান সময়ের একটি মারাত্মক সমস্যা।খ্যাদ্যাভ্যাসের কারণে এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে অনেকেই অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় ভুগছেন। কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা শরীরের মেটাবলিজম এর প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। ফলে অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
৫। রক্তশূন্যতা দূর করেঃ কচু শাকে প্রচুর পরিমাণ আয়রন আছে। নিয়মিত কচু শাক খেলে শরীরের রক্তশূন্যতা দূর হয়।
৬। হাড় ও দাঁতের গঠনে ভূমিকা রাখেঃ কচু শাকের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো এই শাকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফসফরাস রয়েছে। যা হাড় ও দাঁতের গঠনে দারুন ভূমিকা রাখে।
৭। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কচু শাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে। যা খাবার হজমের সাহায্য করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তারা যদি কচু শাক নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য চিরতরে চলে যাবে।
৮। ক্ষত সারাতে কাজ করেঃ কচুর শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত সারাতে দারুন কাজ করে।
৯। ভিটামিন ও আয়রনের ঘাটতি পূরণ করেঃ কচু শাকে ভিটামিন ও আয়রন প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। গর্ভবতী মায়েদের এটি খুবই প্রয়োজন। তাই গর্ভবতী মায়েদের কচু শাক নিয়মিত খেলে ভিটামিন ও আয়রনের ঘাটতি অতি সহজে পূরণ হয়।
১০। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কচু শাকে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যারা নিয়মিত কচু শাক খান তাদের ছোটখাটো রোগব্যাধি হয় না বললেই চলে।
কচু খেলে গলা চুলকায় কেন ?
কচুতে প্রচুর পরিমাণে রাফাইড রয়েছে। যার বৈজ্ঞানিক নাম ক্যালসিয়াম অক্সালেট। যা কচু খাওয়ার সময় গলায় আটকে যায়। যার ফলে কচু খেলে আমাদের গলা চুলকায়।
কচু শাক খেলে কি এলার্জি হয় ?
কচু শাকে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম অক্সালেট রয়েছে। যার কারণে অনেকেরই কচুর শাক খেলে গলা ও শরীর চুলকায়। তাই যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের কচু শাক খাওয়া উচিত নয়। তাই সহসায় বলা যায়, কারো কারো কচু শাক খেলে এলার্জি হয়।
কচু শাকের অপকারিতা।
কচু শাকের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তারপরও কচু শাকের সামান্য কিছু অপকারিতা রয়েছে। কেননা এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম অক্সালেট রয়েছে। যার কারণে কচু শাক খেলে অনেক সময় গলা চুলকায়। তবে কচু শাক রান্না করার সময় লেবুর রস অথবা সিরকা দিলে এই সমস্যা আর থাকে না।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url