পবিত্র মাহে রমজান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা পবিত্র মাহে রমজান সম্পর্কে জানার জন্য বেশ চিন্তিত। পবিত্র মাহে রমজান ইসলাম ধর্মের অনুসারী মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে পবিত্র মাহে রমজান সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।
প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি পবিত্র মাহে রমজান সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।
মাহে রমজানের অর্থ কি ?
মাহে রমজান শব্দের অর্থ রোজার মাস। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র মাস এটি। মহাগ্রন্থ আল কোরআন এই মাসেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল।
রমজান মাসের ফজিলত।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন," যখন রমজান মাস আসে তখন জান্নাতের সবগুলো দরজা খুলে দেওয়া হয়, আর জাহান্নামের সবগুলো দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়"। শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়। পবিত্র মাহে রমজান বাকি মাসগুলো অপেক্ষা মর্যাদাশীল ও বরকত ময় মাস। নিম্নে পবিত্র মাহে রমজান মাসের ফজিলত বর্ণনা করা হলোঃ
ইবাদতের বিশেষ মাস হচ্ছে রমজান মাস। রমজান মাস হচ্ছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। আর এ মাসের প্রধান ইবাদত হচ্ছে রোজা রাখা। সাওম শব্দের বহুবচন হচ্ছে সিয়াম যার অর্থ বিরত থাকা। বাংলায় সাওম বা সিয়ামকে রোজা বলা হয়। রমজান মাসের এক বিশেষ উপহার হচ্ছে তারাবির নামাজ। এছাড়াও রমজানের বিশেষ পুরস্কার হিসেবে রয়েছে "শবে কদর"।
এ মাসের প্রতিটি নেক আমলের ফজিলত ৭০ থেকে ৭০০ গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এ মাসেই মানব জাতির মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কোরআন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ হয়। এ মাসের একটি নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরজ ইবাদতের সমতুল্য। আর এ মাসের একটি ফরজ ইবাদত অন্য মাসের ৭০টি ফরজ ইবাদতের সমতুল্য। তাই রমজান মাসের ফজিলত এত অল্প কথায় বর্ণনা করা মোটেই সম্ভব নয়।
রোজার ফজিলত।
সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম। রোজার অসংখ্য ফজিলত কোরআন হাদিসে বর্ণিত আছে। নিম্নে রোজার কয়েকটি ফজিলতের কথা তুলে ধরা হলোঃ
১। রোজার প্রতিদান মহান আল্লাহ স্বয়ং নিজেই দেবেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, বান্দা একমাত্র আমার জন্যই তার পানাহার ও কামাচার বর্জন করে। রোজা একমাত্র আমার জন্যই এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৪।
২। জান্নাতের একটি বিশেষ দরজা রয়েছে। যার নাম রাইয়ান। সেই দরজা দিয়ে কেবল রোজাদারগনই প্রবেশ করতে পারবে। সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৬।
৩। রোজাদারগন রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করে, জান্নাতের পানি পান করবে। তারপর থেকে আর কখনো তারা পিপাসার্ত হবে না। তিরমিজি, হাদিস নং ৭৬৫।
৪। রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল স্বরূপ। মহান আল্লাহতালা বলেন, রোজা হল ঢাল। এই ঢাল দ্বারা বান্দা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ১৪৬৬৯।
৫। রোজা কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সেদিন রোজা বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনের বেলা খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। মহানবী (সাঃ) বলেন, অতঃপর তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৬৬২৬।
৬। ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখলে পূর্ববর্তী জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৩৮।
রোজা রাখার উপকারিতা।
রোজা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান মহান আল্লাহতালার অনুগ্রহ লাভের আশায় রোজা রাখেন। রোজা শুধু ধর্মীয় বিধানই নয়, এটি বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য দারুন উপকারী। রোজায় রয়েছে শারীরিক ও মানসিক নানান উপকারিতা।
নিম্নে রোজা রাখার কিছু উপকারের কথা বলা হলোঃ
১। শরীর সুস্থ রাখেঃ রোজা থাকলে সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয়। এতে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাটও চর্বি কমে যায়। সেই সাথে শরীরে জমাকৃত টক্সিন কিডনির মাধ্যমে বের হয়ে, শরীর সুস্থ রাখে।
২। ওজন কমায়ঃ শরীরকে জীবাণুমুক্ত করার একটি কার্যকরী উপায় হল রোজা। যারা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান, তারা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন।
৩। হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ রোজায় সারাদিন পেট খালি থাকার কারণে খাবার হজমের এসিড ধীরগতিতে নিঃসারিত হয়। যার ফলে হজম শক্তি জনিত সমস্যা দূর করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
৪। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রোজার কোন বিকল্প নেই। কারণ দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
৫। রক্তচাপ কমায়ঃ রোজায় দিনের বেলা পানাহার বন্ধ থাকার কারণে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে থাকে। যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা দূর হয়।
রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (র) বর্ণনা করেন মহানবী সাঃ এরশাদ করেন, সিয়াম এবং কোরআন হাশরের ময়দানে বান্দা-বান্দির জন্য সুপারিশ করবে এবং মহান আল্লাহতালা তাদের উভয়ের সুপারিশ কবুল করবেন।
পবিত্র মাহে রমজান সম্পর্কে আমাদের যা জানা দরকার।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতালা পবিত্র মাহে রমজান সম্পর্কে বলেছেন যে, তিনি আমাদের জন্য রোজা ফরজ করেছেন; যেমনটি আমাদের পূর্ববর্তীগনের ওপরও ফরজ করা হয়েছিল। রমজান হল রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। মানব জীবনের বহুগুণ ও বৈশিষ্ট্য অর্জনের মাস হলো রমজান। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন, এ মাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি এ মাসের পরিপূর্ণ শিক্ষা ও বরকত লাভের উদ্দেশ্যে দুই মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে রমজান মাসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। পবিত্র মাহে রমজান মাসে রোজাব্রত পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করা। এই মাসটি সবর তথা ধৈর্য্যের মাস। যার প্রতিফলন হিসেবে জান্নাত সুনিশ্চিত।
সাহারি খেলে পূণ্য হয় এবং ফেরেশতারা তাদের কল্যাণ কামনা করে। যে ব্যক্তি রমজানের রোজাদারকে পানি পান করাবে মহান আল্লাহ তা'আলা তাকে কেয়ামতের দিন হাউসে কাউসারের সুপেয় পানি পান করাবেন। এছাড়াও পবিত্র মাহে রমজান আমাদেরকে সব ধরনের কল্যাণের শিক্ষা দেয় এবং সব ধরনের খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।
মাহে রমজানের পবিত্রতা।
রমজানের পবিত্রতা বলতে আমরা বুঝি হোটেল বন্ধ রাখা বা হোটেলের সামনে পর্দা ঝুলিয়ে রাখা। আসলে এটি রমজানের পবিত্রতা রক্ষার কোন বিষয় নয়। আসলে রমজানের পবিত্রতা হল রোজাদারগণ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ওইসব কাজ ছেড়ে দেবেন, যা অন্য মাসগুলোতে হালাল ছিল এবং রমজানেও হালাল। এসব কাজ পরিত্যাগ করার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তাআলা রোজা অবস্থায় ওইসব কাজগুলো থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন। আর এটাই হচ্ছে রমজানের পবিত্রতা।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url