কৃষি কাজে জৈব সারের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক, আপনারা কৃষি কাজে জৈব সারের ব্যবহার কখন, কিভাবে করবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। ফসল উৎপাদনে জৈব সারের কোন বিকল্প নেই। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব আপনারা কখন, কিভাবে কৃষি কাজে জৈব সারের ব্যবহার করবেন।
জৈব সার কি ?
গাছপালা, লতাপাতা, পশু পাখির মল ও দেহাবশেষ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন একপ্রকার কার্বন সমৃদ্ধ সারকে জৈব সার বলে। মাটি ও উদ্ভিদের পুষ্টি সরবরাহ এবং বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য কৃষি কাজে জৈব সার ব্যবহার করা হয়। এই জৈব সারের মধ্যে রয়েছে খনিজ উৎস, সকল প্রকার প্রাণীর বর্জ্য, কম্পোস্ট, বায়োসলিড, খইল, কাঠের ছাই, হাড়গুঁড়ো ইত্যাদি।
জৈব সার কত প্রকার ও কি কি ?
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষি কাজে জৈব সারের ব্যবহারর কোন বিকল্প নেই। তাই জৈব সার কৃষি ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
জৈব সার সাধারণত চার প্রকার। যথাঃ
১। গোবর সারঃ মানব ও প্রাণীর মল ও গোবর, হাঁস মুরগির বিষ্ঠা, রেশম কীট ইত্যাদি।
২। কম্পোস্টিংঃ কমপোস্ট, স্ট্র এবং বায়োগ্যাস।
৩। সবুজ সারঃ সবুজ সার এবং বন্য সবুজ লতা পাতা।
৪। বিবিধ সারঃ পিট, হিউমিক অ্যাসিড, তৈল খাবার সার ও সামুদ্রিক সার ইত্যাদি।
জৈব সার বানানোর পদ্ধতি গুলো কি কি ?
মাটির গঠন, বুনন ও গুণাবলী ঠিক রাখতে জৈব সারের কোন বিকল্প নেই। তাই সকল কৃষকদের জৈব সার তৈরি, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এতে মাটির গুনাগুন ঠিক থাকবে , রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীলতা কমবে এবং অর্থ সাশ্রয় হবে।
জৈব সার তৈরি করার বিভিন্ন পদ্ধতি গুলো হলোঃ
সরিষার খইল দিয়ে জৈব সার তৈরিঃ
সাধারণত বাসাবাড়ির ছাদে ঝামেলা মুক্ত পরিবেশে বাগানের জন্য এই জৈব সার উৎপাদন করা হয়। প্রথমে প্রয়োজন অনুযায়ী মাটি সংগ্রহ করে মাটিগুলোকে ঝুর-ঝাুরা করে নিতে হবে। তারপর সমপরিমাণ সরিষার খইল গুড়া করে মাটির সাথে ভালোভাবে মেশাতে হবে। এরপর এক সপ্তাহ ভালো করে রোদে শুকাতে হবে এবং তারপর জমিতে ব্যবহার উপযোগী হবে।
ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরিঃ
প্রথমে কাঁচা গোবর সংগ্রহ করে ছায়ায় রেখে দিতে হবে। এরপর গোবরের গ্যাস চলে গেলে অর্ধ পঁচা কলা গাছ ও অর্ধ পঁচা কচুরিপানা দিতে হবে। এরপর ৩০ কেজি পরিমাণ মিক্সের সাথে আধা কেজি ভার্মি কেঁচো দিয়ে রেখে দিতে হবে। আনুমানিক ৩০ দিনের মধ্যে কেঁচোগুলো উক্ত মিশ্রণ খেয়ে ফেলবে এবং চূড়ান্তভাবে চালনি দিয়ে চেলে ব্যবহার করা যাবে।
বাসা বাড়িতে জৈব সার তৈরিঃ
শাঁক-সবজির ফেলে দেওয়া অংশ, হাঁস মুরগির বিষ্ঠা, গাছের লতাপাতা, খড়খুঁঁটো, ফলের খোসা, পশুপাখির নাড়িভুড়ি, কচুরিপানা ইত্যাদি বাড়ির কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে ঢেকে রেখে দিতে হবে, যেখানে কেঁচো আছে বলে মনে হয়। কিছুদিনের মধ্যে রেখে দেওয়া জিনিস গুলো কেঁচো খেয়ে ফেলবে এবং জৈব সার তৈরি করবে। এভাবে বাসা বাড়িতে জৈব সার তৈরি করা যাবে।
জৈব সার ব্যবহারের নিয়ম।
জৈব সার হল জীব ও উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত সার। অন্যভাবে বলা যায় জৈব সার হলো প্রাণী ও পাখির বিভাজন, মলমুত্র, উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ যা মাটির উর্বরতা বজায় রাখতে এবং ফসলের ফলন বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। কৃষি কাজে জৈব সার ব্যবহারের ফলে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়ে। জৈব সার গাছে কি পরিমাণ দিতে হবে তা নির্ভর করে গাছের বয়স, আকার বা আকৃতি, পরিবেশ, মাটির ধরন এবং সর্বোপরি মাটির উর্বরতা শক্তির উপর।
সাধারণত যে কোন ফসল উৎপাদনের আগে অর্থাৎ বীজ বপনের আগে জৈব সার জমিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়াও যে কোন গাছের নতুন পাতা বের হওয়ার পর পরিমাণ মতো জৈব সার প্রয়োগ করতে হয়।
কৃষি কাজে জৈব সার ব্যবহারের সুবিধাগুলি কি কি ?
মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জৈব সারের কোন জুড়ি নেই। জৈব সার জীববৈচিত্র্য এবং মাটির দীর্ঘমেয়াদী উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। জৈব সার পর্যাপ্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ধারণ করতে পারে। জৈব পদার্থ, জৈব পুষ্টি এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সরবরাহের মাধ্যমে মাটির ভিতরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও মাইকোরাইজা নামক ছত্রাক উদ্ভিদকে পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে। তাই কৃষি কাজে জৈব সারেব ব্যবহার ব্যাপক।
জৈব সার ব্যবহারের অসুবিধাগুলো কি কি ?
জৈব সারের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো এতে নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস থাকে না। অর্থাৎ জৈবসারে NPK এর উপস্থিতি একেবারে নেই বললেই চলে।
জৈব সার কতবার দিতে হয় ?
জৈব সার মাটিতে বীজ বপনের আগে প্রথমবার প্রয়োগ করতে হয়। তারপর রোপনের চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ পর জৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়াও প্রয়োজন হলে মাঝেমধ্যে অল্প অল্প করে কৃষি কাজে জৈব সার ব্যবহার করা উত্তম।
ইউরিয়া কি জৈব সার ?
না। ইউরিয়া জৈব সার নয়। এটি একটি নাইট্রোজেন সংবলিত রাসায়নিক সার। যা ব্যাপক হারে ফসলি জমিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইউরিয়া সার পর্যাপ্ত নাইট্রোজেন সরবরাহ করে থাকে, যা গাছের শিকড়, ডালপালা , কান্ড ও পাতার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url