শালবন বৌদ্ধ বিহার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন

প্রিয় পাঠক, আপনারা কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহার কখন, কিভাবে দেখতে যাবেন সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনে ভরপুর কুমিল্লার এই শালবন বিহার। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করব কখন, কিভাবে আপনারা শালবন বৌদ্ধ বিহার দেখতে যাবেন ।

শালবন বৌদ্ধ বিহার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন

প্রিয় আর্টিকেল পাঠক, আপনাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমি এই পোস্টের মাধ্যমে কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহার সম্পর্কে বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি । বিস্তারিত জানতে আমার সাথেই থাকুন।                                                                                                                                           

শালবন বৌদ্ধ বিহার কোথায় অবস্থিত  ?

বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে শালবন বিহার অন্যতম। এই বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে ময়নামতির লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে কোটবাড়িতে অবস্থিত ।

 শালবন বৌদ্ধ বিহার কথাটির অর্থ কি ?

কুমিল্লার কোটবাড়িতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর কাছে লালমাই পাহাড়ের পাদদেশের মাঝামাঝি এলাকায় এই বৌদ্ধ বিহারটির অবস্থান। এই বিহারটির আশেপাশে এককালে শাল-গজারির ঘনবনে আচ্ছাদিত ছিল বলে এই বিহারটির নামকরণ করা হয়েছিল শালবন বৌদ্ধ বিহার । এর নিকটবর্তী গ্রামটির নাম শালবনপুর ।

শালবন বৌদ্ধ বিহারের ইতিহাস ।

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষে অথবা অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেব বংশের চতুর্থ রাজা শ্রী ভবদেব এই বিহারটি নির্মাণ করেন। এই বৌদ্ধ বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ পর্বের কথা ইতিহাসে উল্লেখ পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় মন্দির নির্মাণ করা হয় এবং সার্বিক সংস্কার কাজ করা হয় । পরবর্তীতে নবম-দশম শতাব্দীতে চতুর্থ ও পঞ্চম পর্বের নির্মাণ কাজ ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয় ।

শালবন বৌদ্ধ বিহার কেন বিখ্যাত জানলে অবাক হবেন ?

অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই শালবন বিহারটি শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র বিন্দু ছিল । ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায় যে,মঠটিতে একসময় এক হাজার জনেরও বেশি সন্ন্যাসী ছিল । বিহারটি একসময় বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছিল । বিহারটিতে মোট ১৫৫ টি কক্ষ আছে  । এই বৌদ্ধ বিহারে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান জিনিস পাওয়া গেছে। উহাদের মধ্যে ৪০০ টি স্বর্ণ ও রোপ্য মুদ্রা,ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি, সিলমোহর, আটটি তাম্রলিপি, তামার প্লেট, পাথরের ভাস্কর্য এবং বিভিন্ন ধরনের পোড়ামাটির ফলক বা টেরাকোটা । 

শালবন বৌদ্ধ বিহার কে নির্মাণ করেন ?

কুমিল্লার ময়নামতিতে লালমাই পাহাড়ে পাদদেশে খননকৃত প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন এর মধ্যে শালবন  বিহার অন্যতম । অনুমান করা হয় যে, খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ ভাগে অথবা অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেব বংশের চতুর্থ রাজা শ্রী ভবদেব এই শালবন বিহারটি নির্মাণ করেন ।

শালবন বৌদ্ধ বিহার কোন সভ্যতার নিদর্শন ?

কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন ।

শালবন বৌদ্ধ বিহারের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি ?

কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পুরাকীর্তিতে ভরপুর। যেমনঃ ময়নামতি জাদুঘর,নব শালবন বৌদ্ধ বিহার,রুপবান মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, আনন্দবিহার, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক, ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, লালমাই পাহাড়, ধর্মসাগর দীঘি ,জাদুকাটা নদী ও রানী ময়নামতির প্রাসাদ ইত্যাদি ।

ময়নামতি কি জন্য বিখ্যাত ?

বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ময়নামতি বৌদ্ধ বিহারের জন্য বিখ্যাত। ময়নামতির পূর্ব নাম ছিল রোহিতগিরি। বর্তমান সময়ে ময়নামতি অঞ্চলে যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ধ্বংসস্তূপ দেখতে পাওয়া যায় সেটি প্রকৃতপক্ষে, একটি প্রাচীন নগরী এবং শালবন বিহারের অবশিষ্টাংশ ।

বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার কোনটি ?

বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার হলো শালবন বিহার ।

শালবন বৌদ্ধ বিহার যাওয়ার উপায়  ?

ঢাকা থেকে খুব সহজে বাসে করে কুমিল্লা যাওয়া যায় । ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এবং কমলাপুর থেকে এসব বাস ছেড়ে যায়। বাস ভাড়া জনপ্রতি মাত্র ২২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা । এছাড়াও ঢাকা থেকে খুব সহজে ট্রেনে চড়ে কুমিল্লা যেতে পারবেন। চট্টগ্রামগামী সুবর্ণা ও সোনার বাংলা বাদে সব ট্রেনই কুমিল্লা স্টেশনে থামে । ভাড়া  জনপ্রতি ১৭০ টাকা থেকে ৪৬৬ টাকা । তারপর কুমিল্লা থেকে খুব সহজে অটোরিকশা অথবা সিএনজিযোগে শালবন বৌদ্ধবিহার যেতে পারবেন ।

 শালবন বৌদ্ধ বিহার কত সালে নির্মিত ?

কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহার সপ্তম শতকের শেষ দিকে অথবা অষ্টম শতকের প্রথম দিকে নির্মিত ।

ময়নামতি জাদুঘরে কি কি আছে ?

১৯৬৫ সালে কুমিল্লার কোটবাড়িতে শালবন বিহারের ঠিক দক্ষিনে ময়নামতি জাদুঘর স্থাপন করা হয় । ময়নামতি জাদুঘরে যেগুলো সংরক্ষিত আছে সেগুলো হলোঃ ভূমি নকশা, ধাতুলিপি ফলক, প্রাচীন মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলক, ব্রোঞ্জমূর্তি,পাথরের মূর্তি, লোহার পেরেক,পাথরের গুটিকা, অলংকারের অংশ, মাটির হাঁড়ি পাতিল,ত্রি বিক্রম বিষ্ণু মূর্তি, তারা মূর্তি,পার্বতী মূর্তি, নন্দী মূর্তি এবং সূর্য মূর্তি ইত্যাদি । 

এছাড়াও জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলক, কাঠের কাজের নিদর্শন, মৃৎপাত্র, প্রাচীন হস্তলিপির নানা পাণ্ডলিপি এবং প্রায় ৩০০ কেজি ওজনের তৈরি বিশাল এক ঘন্টা ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪